বিজয় দিবস - রচনা ( ২০ পয়েন্ট )
উপস্থাপনা :-
১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় দিন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের মধ্যরাত থেকে শুরু হয়ে দীর্ঘ নয় মাস ধরে চলে এ দেশের মুক্তিযুদ্ধ। যুদ্ধ শেষ হয় ১৬ ডিসেম্বরে। মুক্তিযুদ্ধের বিজয় অর্জিত হয় এই দিনে। তাই প্রতি বছর এই দিনটি যথাযথ মর্যাদায় জাতীয় উৎসব হিসেবে পালিত হয়।
মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা:-
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে বর্বর হত্যাযজ্ঞ চালায়। মধ্যরাতের পর তারা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করে। তবে গ্রেফতারের আগে ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। এরপর শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ।
মুক্তিবাহিনী রুখে দাঁড়িয়ে গণহত্যাকারী পাকিস্তানি সেনাদের প্রতিহত করতে থাকে। প্রতিবেশী ভারত অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ দিয়ে মুক্তিবাহিনীকে সহায়তা করে। অবশেষে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি সৈন্যবাহিনী আত্মসমর্পণ করে । জয় হয় বাঙালির । জন্ম নেয় স্বাধীন বাংলাদেশ।
বিজয়ের প্রকৃত অর্থ :-
প্রতি বছর ১৬ ডিসেম্বর আমাদের জীবনে নিয়ে আসে সংগ্রামী বিজয়ের স্মৃতি । জীবনকে গৌরবান্বিত তোলার শপথ এ পবিত্র দিনটি থেকেই আমাদেরকে গ্রহণ করতে হবে। বিজয় অর্জন বড় কথা নয়, তার সুফলকে জনগণের দোরগোড়ায় পৌছে দেয়াই বড় কথা। 'স্বাধীনতা অর্জন করার চেয়ে স্বাধীনতা রক্ষা করা কঠিন'- এ আপ্তবাক্যটিকে আমাদের ভুলে গেলে বিজয় দিবসের তাৎপর্য অর্থহীন হয়ে পড়ে।
পটভূমি :-
১৯৭১ সালে নয় মাসের রক্তঝরা সংগ্রামের পর ১৬ই ডিসেম্বরে মহান বিজয় সাধিত হয়েছে। কিন্তু এই স্বাধীনতা মূলত এই নয় মাসের ফসল নয়, এর শুরু হয়েছে অনেক আগে। ১৯৪৭ সালের আগ পর্যন্ত আমাদের দেশ ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল। প্রায় দশ বছর শাসনের পর ব্রিটিশরা ভারতবর্ষের স্বাধীনতা দিলে বাংলাদেশ হয় পাকিস্তান রাষ্ট্রের অংশ।
পাকিস্তান রাষ্ট্রটি ছিল দুটি আলাদা ভূখণ্ডে বিভক্ত। পূর্ববাংলা পরিচিত ছিল পূর্ব পাকিস্তান নামে। অন্যটি ছিল পশ্চিম পাকিস্তান। প্রথম থেকেই পাকিস্তানের শাসন ক্ষমতা ছিল পশ্চিম পাকিস্তানিদের হাতে। তারা পূর্ব পাকিস্তানিদের সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ করত।
১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন এবং মাতৃভাষা প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে এদেশের মানুষ প্রথম তাদের স্বাধিকার প্রতিষ্ঠায় উদ্বুদ্ধ হয়। পশ্চিম পাকিস্তানিদের অত্যাচার, দুঃশাসন পূর্বপাকিস্তানের মানুষ মুখ বুজে সহ্য করেনি। '৬২, '৬৬-এর ছাত্র আন্দোলন এবং '৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে তারা বুঝিয়ে দেয় বাঙালি কারো হাতে বন্দি থাকতে রাজি নয়।