Bod Nozor & Ruqya
বদনজর বা বদ নজর কাকে বলে?
নজর অর্থ সাধারণ দৃষ্টি আর বদনজর মানে হলো– কুদৃষ্টি বা মন্দচাহনি ।
১) বদনজর হলো, হিংসার নিকৃষ্ট স্বভাব-মিশ্রিত বিষাক্ত দৃষ্টি, যা কখনো কখনো ক্ষতির কারণ হয় ।
২) ইবনে হাজার আসকালানী (রহ) বলেন, হিংসা নিয়ে মন্দ লোকের দৃষ্টিপাত এর প্রভাবে ব্যক্তি বা বস্তুর যে ক্ষতি হয় তাকে বদনজর বলা হয় ।
৩) আল্লাহ তায়ালার প্রসংশা ব্যতিত কোনো ব্যক্তি বা বস্তুর গুণাগুণ বা প্রসংশা করার দ্বারা ব্যক্তি বা বস্তুর যে ক্ষতি হয় তাকে বদনজর বলে ।
৪) কোন ব্যক্তি বা বস্তুর দিকে হিংসা মিশ্রিত বিস্ময় নিয়ে দৃষ্টি নিক্ষেপ করাকে বদনজর বলা হয় ।
৫) কোনো ব্যক্তি বা বস্তুর প্রতি আশ্চর্য হয়ে হিংসার দৃষ্টি নিক্ষেপ করাকে বদনজর বলা হয়।
বদনজরের মধ্যে আল্লাহ এতই মারাত্মক প্রভাব রেখেছেন যে, এর দ্বারা মুহুর্তের মধ্যে সুস্থ মানুষ অসুস্থ হয় যেতে পারে ।
একটি ভূল ধারণা : বদনজর শুধু খারাপ মানুষের মাধ্যমে লাগে এমন নয় । কখনো কখনো ভালবাসার মানুষের দ্বারাও ‘নজর’ লাগতে পারে । এমনকি অনেক সময় নিজের উপরও নিজের নজর লাগতে পারে ।
বদনজর দু প্রকার:
১) মানুষের বদনজর
২) জিনের বদনজর
তেমনি বদনজরের ক্ষেত্রও দু’টি ঃ
১) ব্যক্তির উপরে বদনজর
২) বস্তুর উপরে বদনজর
বদনজরের কারণে যেসব রোগ হতে পারে ঃ
১) জ্বরসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে ব্যথা
২) বিভিন্ন প্রকারের ক্যান্সার
৩) হার্ট অ্যাটাক
৪) শ্বাসকষ্ট
৫) হাঁপানি
৬) প্যারালাইসিস
৭) বন্ধ্যাত্ব
৮) ডায়াবেটিস
৯) ব্লাড প্রেশার
১০) সাময়িক বা স্থায়ী বোবা হয়ে যাওয়া
১১) অজ্ঞান হয়ে যাওয়া (হাদীস দ্বারা প্রমানিত)
১২) এছাড়াও অন্যান্য যেকোনো রোগ
বদনজরে আক্রান্ত ব্যক্তিকে রুকইয়াহ করা হলে যে সমস্ত প্রতিক্রিয়া হতে পারে ঃ
১) রুকইয়াহ অবস্থায় প্রচুর ঘুম আসা
২) ক্লান্তি লাগা
৩) বারবার হাই ওঠা
৪) হাত-পা শিরশির করা
৫) শরীর ঘেমে যাওয়া
৬) চুলকানি
৭) রুকইয়াহ করার পরে পেশাব হলুদ হওয়া
বদনজর আক্রান্ত হওয়ার লক্ষন
কিভাবে বুঝবেন আপনার নজর লেগেছে কিনা? নিচের লক্ষনগুলো এখনি মিলিয়ে দেখুন। সবগুলো মিলতে হবে এমন কোন কথা নেই। ২-১ টা মিললেও বলা যায় অল্প-স্বল্প নজরের সমস্যা আছে।
মুম্বাইয়ের একজন অভিজ্ঞ আলেম মুফতি জুনাইদ সাহেব নজর লাগার অনেকগুলো আলামত বর্ণনা করেছিলেন। যেমনঃ
.
১। শরীরে জ্বর থাকা, কিন্তু থার্মোমিটারে না উঠা।
২। কোনো কারণ ছাড়াই কান্না আসা..
৩। প্রায়সময় কাজে মন না বসা, নামায যিকর ক্লাসে মন না বসা।
৪। প্রায়শই শরীর দুর্বল থাকা, ক্ষুধামন্দা, বমি বমি ভাব লাগা।
৫। চেহারা ধুসর/হলুদ হয়ে যাওয়া।
৬। বুক ধড়পড় করা, দমবন্ধ অস্বস্তি লাগা।
৭। অহেতুক মেজাজ বিগড়ে থাকা।
৮। আত্মীয়-স্বজন বা বন্ধুদের সাথে দেখা হলেই ভালো না লাগা।
৯। অতিরিক্ত চুল পড়া। শ্যাম্পুতে কাজ না করা।
১০। পেটে প্রচুর গ্যাস হওয়া।
১১। বিভিন্ন সব অসুখ লেগে থাকা যা দীর্ঘদিন চিকিৎসাতেও ভালো হয় না। (সর্দিকাশি, মাথাব্যথা ইত্যাদি)
১২। হাত-পায়ে মাঝেমধ্যেই ব্যাথা করা, পুরো শরীরে ব্যাথা দৌড়ে বেড়ানো।
১৩। ব্যবসায় ঝামেলা লেগে থাকা।
১৪। আপনি যে কাজে অভিজ্ঞ সেটা করতে গেলেই অসুস্থ হয়ে যাওয়া।
.
[আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ]
চিকিৎসাঃ রুকইয়াহ করা (কুরআন ও সুন্নাহ অনুযায়ী চিকিৎসা করা)
বদনজর লাগলে কি করনীয়?
নিজের এবং পরিবারের টুকটাক সমস্যার জন্য বদনজরের রুকইয়াহ করতে পারেন। খুবই সিম্পল রুকইয়াহ এটা। ইংশাআল্লাহ কোনো সমস্যা হবে না। এমন না যে, আপনার বদনজর লাগেনি কিন্তু রুকইয়াহ করেছেন আর ক্ষতি হবে। কুরআনুল কারীম মেনে রুকইয়াহ করলে কারও ক্ষতি হয় না।
১। কেউ আপনাকে একটা ভাল কথা বললো। এরপর থেকেই আপনার শরীর খারাপ বা যে বিষয়টা নিয়েছে বলেছে সেই কাজটা আর করতে পারছেন না। তাহলে যে বলেছে তাকে বলেন, অযু করতে। এবার এই অযুর পানিটা নিজের গায়ে ঢালেন। ব্যস, রুকইয়াহ হয়ে গেল। এক গোসলেই ইংশাআল্লাহ আপনি সুস্থ হয়ে যাবেন।
যে বলেছে তার কাছ থেকে অযুর পানি নিতে পারবেন না? না পারলেও অসুবিধা নেই। তাকে বাসায় দাওয়াত দেন। এরপর হাত ধোয়ার জন্য পানি দিন, একটা বাটি দিন। এরপর সেই পানিটা নিজের গায়ে ঢালবেন।
একইভাবে যদি আপনি নিজে কোনো কথা বলার পর অসুস্থতা অনুভব করেন তাহলে নিজের অযুর পানি নিজের গায়ে ঢালুন।
বাবা-মার নজর সন্তানের লাগে না- এই টাইপের কথার কোন ভিত্তি চোখে পড়েনি। বরং কোনো বাচ্চা হুট করে অসুস্থ হলে পরিবারে সবার অযুর পানি নিয়ে আগে তার গায়ে ঢালা উচিত।
২। প্রথমটা ফলো করার পর উন্নতি না হলে এই দুআগুলো বার বার পড়ে পড়ে অসুস্থ ব্যক্তিকে ফু দিন সরাসরি গায়ে। অথবা তার মাথায় হাত রেখে পড়ুন। বার বার করুন। পড়ে পানিতে ফু দিয়ে খাইয়ে দিন। পড়ে গোসলের পানিতে ফু দিয়ে গোসল করান।
🛑 أُعِيْذُكُمْ بِكَلِمَاتِ اللّٰهِ التَّامَّةِ ، مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ وَهَامَّةٍ ، وَمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لَامَّةٍ.
🛑 بِسْمِ اللَّهِ أَرْقِيكَ، مِنْ كُلِّ شَيْءٍ يُؤْذِيكَ، مِنْ شَرِّ كُلِّ نَفْسٍ أَوْ عَيْنِ حَاسِدٍ، اللَّهُ يَشْفِيكَ، بِسْمِ اللَّهِ أَرْقِيكَ.
🛑 بِاسْمِ اللَّهِ يُبْرِيكَ، وَمِنْ كُلِّ دَاءٍ يَشْفِيكَ، وَمِنْ شَرِّ حَاسِدٍ إِذَا حَسَدَ، وَشَرِّ كُلِّ ذِي عَيْنٍ.
🛑
اللَّهُمَّ رَبَّ النَّاسِ أَذْهِبْ الْبَاسَ، اشْفِ وَأَنْتَ الشَّافِي لَا شِفَاءَ إِلَّا شِفَاؤُكَ شِفَاءً لَا يُغَادِرُ سَقَمًا
এই নিয়মটা বাচ্চা-বুড়ো সবার জন্য।
মেয়েদের হায়েজ, নেফাসের সময়ও করা যাবে এটা।
যে অসুস্থ সে নিজেই করতে পারলে সবচে' ভাল।
দুআ' গুলোর উচ্চারন জানার জন্য লিংক দিলাম কমেন্টে।
৩। এবার যেটা বলবো তাকে আমরা বদনজরের সেলফ রুকইয়াহ বলি। কেউ যদি আপনাকে বলে বদনজরের জন্য সেলফ রুকইয়াহ করেন তাহলে এই পদ্ধতি ফলো করবেন। কেউ না বললেও করতে পারবেন। কার/কিভাবে নজর লাগলো জানেন , অনেক পুরনো সমস্যা, কোনো ভাবেই অযুর পানি নেয়া সম্ভব না - এই টাইপের ঘটনা হলে সেলফ রুকইয়াহ করবেন।
এই পদ্ধতিতে ২ টি কাজ করতে হবেঃ
1. তেলাওয়াত করা অথবা অডিও শোনা
2. গোসল করা
মনে রাখতে হবে তেলাওয়াত করা সর্বোত্তম
কি কি তেলাওয়াত করতে হবে?
এই আয়াতগুলো। লিস্ট পাবেন লিংকে
https://www.facebook.com/.../ruqyahbd/posts/1211775139009803
আর পিডিএফ চাইলে এই লিংকে পাবেন। (৫ নং)
www.ruqyahbd.org/ayat
লিস্টের সাথে পিডিএফের আয়াত সংখ্যা কম বেশি হতে পারে। এটা নিয়ে টেনশনের কিছু নেই। আপনার যেটা ভাল লাগে পড়েন।
যারা অডিও শুনতে চান তারা এই লিংক থেকে ১ নং অডিও শুনবেন। মাঝে মাঝে ২ নং ও শুনবেন।
www.ruqyahbd.org/download
সারাদিনে কমপক্ষে একবার অডিও শুনবেন, মন দিয়ে। অন্য কাজে ব্যস্ত থেকে না।
গোসল করার জন্য এক বালতি পানি নিন। পানিতে দুই হাত যতটুকু ডুবে ডুবিয়ে দিন। এরপর ৭ বার দরূদ শরীর, ৭ বার সুরা ফাতিহা, ৭ বার আয়াতুল কুরসি, ৭ বার সুরা ইখলাস, ৭ বার সুরা ফালাক, ৭ বার সুরা নাস, ৭ বার দরূদ শরীফ পড়বেন। ফু দেয়া লাগবে না। শীত লাগলে গরম পানি ব্যবহার করুন। এরপর এই পানি নিয়ে গোসলখানায় গিয়ে গায়ে ঢালুন। এবার ইচ্ছামত গোসল করুন।
পানি মন দিয়ে পড়বেন। দুই হাতই ডুবাবেন। ইমার্জেন্সি ছাড়া কথা বলবেন না।
এই পানি টয়লেটে পড়লে কোনো গুনাহ হবে না।
যতবার বলা হল ততবারই পড়বেন। প্রথম দিকে একটু সময় লাগলেও পরে কমে আসবে।
সংক্ষিপ্ত কোনো দরূদ পড়লেও হবে। সালাতেরটাই পড়তে হবে এমন না।
তাহলে এই তিন পদ্ধতির যেটা আপনার জন্য প্রযোজ্য ফলো করুন। খুটিয়ে খুটিয়ে কোনো প্রশ্ন না করে সহজভাবে চিন্তা করে অনুসরণ করুন।
পিরিয়ডের সময় সেলফ রুকইয়াহ করতে পারবেন। এক্ষেত্রে অডীও শুনবেন। গোসলের পানি অন্য কেউ তৈরি করে দিবে। অন্য কেউ না থাকলে ২ নং এ বলা দুয়াগুলো পড়ে পানিতে ফু দিয়ে গোসল করতে পারবেন।
৭ থেকে ১০ দিন করার পর গ্রুপে আপডেট জানাতে পারেন পোস্ট করে। উপরে লিখে দিবেন "আপডেট পোস্ট" । এটা লিখলে আগে এপ্রুভ হবার চান্স আছে।
যদি পশু-পাখি, ফসল, গাছপালা, বসতবাড়ি ইত্যাদির উপর কারও বদনজর লাগে তাহলে তার অযুর পানি নিয়ে খেতে দিন/ছিটিয়ে দিন। সম্ভব না হলে ২ এ বলা দুআ' গুলো পড়ে পানিতে ফু দিয়ে তা খেতে দিন/ছিটিয়ে দিন।
আল্লাহ তায়ালা এমন সুস্থতা দিন যার পরে আর কোনো অসুস্থতা বাকি না থাকে। আমীন।
বদনজরের প্রাথমিক রুকইয়াহ
----------— নিজের উপর কোন কারণে বদনজর লেগেছে আশংকা করলে প্রাথমিকভাবে নিচের নিয়মে রুকইয়াহ করতে পারেন।
রুকইয়াহ শোনা বা পড়া
থেকে বদনজরের রুকইয়াহ শীর্ষক পিডিএফ ফাইলটা নামিয়ে ওখানের আয়াতগুলো পড়বেন নজর দূর করার নিয়তে। সকালে ৩০ মিনিট আর সন্ধ্যায় ৩০ মিনিট পড়তে পারেন।
যদি এটা না পারেন তবে সুরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি, সুরা ইখলাস, ফালাক, নাস ৩০ মিনিট করে পড়বেন, হাতের তালুতে ফুঁ দিয়ে গা মুছবেন।
যদি এসবও পড়তে না পারেন তবে ruqyahbd.org/d থেকে ১ বা ২ নং অডিওর যেকোন একটা দিনে ২ বার করে শুনবেন।
রাতে ভয় পাওয়া, আশেপাশে কারো উপস্থিতি আছে মনে করা, ভয়ের স্বপ্ন দেখা এসব সমস্যা থাকলে উপরের সাজেশনের সাথে অতিরিক্ত হিসেবে সুরা ইয়াসিন, সফফাত, দুখান, জ্বিন পড়বেন অথবা ৮ সুরার রুকইয়াহ শুনবেন প্রতিদিন।
রুকইয়াহ পড়া বা শোনায় যত বেশি সময় দিবেন তত উত্তম।
গোসলঃ
গোসলের পানিতে হাত রেখে দুরুদ শরিফ, ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি, ৩ কুল পড়বেন ৭বার করে। এরপরে আবার দুরুদ শরীফ ৭বার পড়বেন। এরপরে ঐ পানি দিয়ে গোসল করে নিবেন। যদি ৭বার পড়তে না পারেন তবে ৩ বার করে, তাও না পারলে ১বার করে পড়লেও হবে।
যদি এটাও না পারেন তবে ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি, ৩ কুল পড়ে পানিতে ফুঁ দিয়ে গোসল করে নিবেন
অন্যান্যঃ
1. ফরজ, ওয়াজিব আমলগুলো ভালভাবে করার সাথে সাথে সকাল, সন্ধ্যা ও ঘুমের আগে সুরক্ষার আমলগুলি নিয়মিত করবেন।
2. পর্দা করাও ফরজ। তাই ভালভাবে পর্দার দিকে খেয়াল রাখবেন।
3. কেউ প্রশংসা করলে তাকে মাশা আল্লাহ বলতে বলবেন। সে না বললে অন্তত আপনি নিজে বলবেন আলহামদুলিল্লাহ/মাশা আল্লাহ ইত্যাদি।
4. সমস্যা থেকে মুক্তির জন্য সবসময় দুয়া করবেন। বেশি বেশি ইস্তেগফার করবেন।
প্রশ্নঃ ইস্তেগফার কি ও কিভাবে করব?
.
উত্তর; আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনাই হচ্ছে ইস্তেগফার । নিম্নে হাদিস অনুযায়ি ইস্তেগফার করার কিছু নিয়ম:
১। আস্তাগফিরুল্ল-হ (আমি আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা করছি)।
প্রতি ওয়াক্তে ফরয সালাতে সালাম ফিরানোর পর রাসূল(সঃ) ৩বার পড়তেন ।(মিশকাত)
২।আস্তাগফিরুল্ল-হা ওয়া আতুবু ইলাইহি(আমি আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা করছি ও তার দিকে ফিরে আসছি)
রাসূল(সঃ) প্রতিদিন ৭০ বারের অধিক তাওবা ও ইস্তিগফার করতেন।(বুখারি)।
৩।রাব্বিগ ফিরলী,ওয়া তুব আলাইয়্যা ইন্নাকা আনতাত তাওয়াবুর রাহীম।(হে আমার প্রভু,আপনি আমাকে ক্ষমা করুন এবং আমার তাওবা কবুল করুন।নিশ্চয় আপনি মহান তাওবা কবুলকারী)
২য় বর্ননায়"রাহীম" এর বদলে গাফূর ।অর্থ-তাওবা কবুলকারী ও ক্ষমাকারী।
রাসূল(সঃ) এক বৈঠকে এই দোয়া ১০০ বার পড়তেন ।(আবু দাউদ,ইবনে মাজাহ,তিরমিযি,মিশকাত)
৪।
প্রতিদিন (বিভিন্ন সময়ে মিলিয়ে হলেও) কমপক্ষে ১০০বার ইস্তেগফার করা
ﺃَﺳْﺘَﻐْﻔِﺮُ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﺍﻟْﻌَﻈِﻴﻢَ ﺍﻟَّﺬِﻱ ﻻَ ﺇِﻟَﻪَ ﺇِﻻَّ ﻫُﻮَ ﺍﻟْﺤَﻰَّ ﺍﻟْﻘَﻴُّﻮﻡَ ﻭَﺃَﺗُﻮﺏُ ﺇِﻟَﻴْﻪِ
আসতাগফিরুল্লা-হাল আ’যীমাল্লাযী লা- ইলা- হা ইল্লা হুওয়াল হা’ইয়ুল ক্বাইয়ূমু ওয়া আতুবু ইলাইহি।
অর্থঃ আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। যিনি ছাড়া ইবাদতের আর কোন যোগ্য উপাস্য নেই। যিনি চিরঞ্জীব ও চিরস্থায়ী। আমি তাঁর কাছে তাওবা করছি।
রসূল ﷺ বলেছেনঃ “যেই ব্যক্তি এই দোয়া পড়বে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেবেন, যদিও সে জিহাদের ময়দান থেকে পলাতক আসামী হয়”। অর্থাৎ, সে যদি বড় রকমের গুনাহগার হয়, তবুও আল্লাহ তাকে ক্ষমা করবেন। (তিরমিযী ৪/৬৯, আবুদাঊদ ২/৮৫, মিশকাত হা/২৩৫৩)।
রিযিক বৃদ্ধির জন্য সাদাকা করা এবং ইস্তেগফার পাঠ করার কোন বিকল্প নেই।
৫।সাইয়্যেদুল ইস্তেগফার-আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাওয়ার শ্রেষ্ঠ দোয়া।
|
এই দোয়া সকালে পড়ে দিনে মারা গেলে অথবা রাতে পড়ে রাতেই মারা গেলে জান্নাতে যাবে।(বুখারি)
এ দোয়া গুলোই হলো ইস্তেগফার।যে কোন ১টা পড়তে পারেন।আবার সব গুলো ও পড়তে পারেন।
(আরেকটা বিশেষ অনুরোধ থাকবে উচ্চারনগুলো আরবীটা দেখে শুদ্ধ উচ্চারন করে পড়ার জন্য )
দোয়া কবুলের বিশেষ কিছু স্থান ও সময়…
----------— দুআ' কে বলা হয় ইবাদতের সারাংশ। ইবাদতের মগজ। দুআ'র গুরুত্ব অপরিসীম। আল কুরআনুল কারীমে আল্লাহু তা'আলা বিভিন্ন নবী - রাসুল আলাইহিমুসসালামের বিপদগ্রস্থ হবার এবং দুআ'র দ্বারা সে বিপদ থেকে উদ্ধার পাবার ঘটনা উল্লেখ্য করেছেন। কাজেই আমরা সুখে-দুঃখে, বিপদে-আপদে সর্বদা আল্লাহর কাছে দুআ' করবো। বিশেষ করে যারা রুকইয়াহ করছি তারা দুআ' থেকে গাফেল হব না।
জিন-জাদুর সমস্যায় আক্রান্তরা নিয়মিত দোয়া করতে চাইলে তাহাজ্জুদের সময় সবচেয়ে ভালো। কোনো কোনোদিন ওঠা সম্ভব না হলে এশার সালাতের পর দুই-চার রাকাত নফল আদায় করে দোয়া করবেন।
আমরা দোয়ার আগে কয়েকবার ইস্তেগফার পড়ব। এরপর দোয়ার শুরুতে আল্লাহর প্রশংসা ও নবীজির ওপর দরুদ পড়ব। তারপর একাগ্র চিত্তে, শান্তভাবে দুআ' করবো। অনুনয়বিনয়ের সাথে আল্লাহর কাছে যা যা প্রয়োজন চাইবো। বিশ্বাস রাখবো আমার দুআ' আল্লাহ নিকট পৌছেছে, (বাহ্যিক প্রভাব দেখা যাক বা না যাক, হতাশ হব না, তাড়াহুড়ো করব না)। দোয়া শেষে আবারও দরুদ পড়ব, আর আল্লাহর প্রশংসা দিয়ে দোয়া শেষ করব। তাহলে আমাদের দোয়া অধিক মাকবুল হবে ইনশাআল্লাহ।
আজকে দুআ' কবুলের কিছু সময় এবং স্থান উল্লেখ করা হল। এসব সময়/স্থানে নবীজি সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হয়তো নিজে দোয়া করেছেন, অথবা দোয়া করতে বলেছেন, কিংবা রহমত নাযিলের কথা বলেছেন, তাই এসব সময়ে দোয়া কবুলের সম্ভাবনা বেশি থাকে।
....
দোয়া কবুলের সম্ভাবনামত মূহুর্তগুলো হচ্ছে :
----------—
1. কদরের রাত
2. ফরজ নামাজের পরপর
3. শেষরাতে (রাতের শেষ তৃতীয়াংশে)
4. প্রতি রাতে নির্দিষ্ট একটা সময় (অজানা)
5. আজান ও ইকামাতের মাঝের সময়
6. আজানের পরপর
7. নামাজের জন্য এবং যুদ্ধের জন্য দাঁড়ানোর সময়
8. বৃষ্টির সময়
9. ময়দানে যুদ্ধ যখন প্রচণ্ড হয়
10. জুমার দিনের শেষ সময় (আসরের পর মাগরিবের আগে)
11. জুমার সালাতের পরপর
12. জুমার দিনে খুব সামান্য কিছু (অজানা)সময়। [কারও মতে সেটা দুই খুতবার মাঝে ইমামের বসার সময়টুকু]
13. সাহাবায়ে কিরামের ঘটনায়, বুধবার যোহর থেকে আসরের মাঝে দোয়া কবুলের কথা পাওয়া যায়।
14. কল্যাণের নিয়তে জমজমের পানি পান করার সময়। (অর্থাৎ কোনো কল্যাণের নিয়তে জমজম পান করলে)
15. দোয়ায়ে ইউনুস পাঠ করার পর
16. কোনো ব্যক্তি মারা যাওয়ার সময় উপস্থিত স্বজনদের দোয়া
17. নামাজ শেষের দোয়ায়ে মাসুরা
18. ইসমে আযম পাঠ করে একনিষ্ঠভাবে দোয়া করলে। (ইসমে আজমের ব্যাপারে আলেমদের দীর্ঘ আলোচনা আছে, সেসব দেখে নেয়া যেতে পারে। সবগুলো বিবেচনা করলে বোঝা যায় ,আল্লাহ তাআলার এরকম বেশ কিছু ইসম ও সিফাত আছে, যেগুলো পাঠ করে দোয়া করলে দোয়া কবুল হয়)
19. আরাফার ময়দানে আরাফার দিনে
20. চাশতের সময়, যোহরের ওয়াক্ত হওয়ার আগে।
21. যিকরের মজলিসে
22. মোরগ ডাকার সময়। (কারণ ফেরেশতাদের দেখলে মোরগ ডাকে)
23. হজ্বে পাথর নিক্ষেপে দিনগুলোতে, জামরায় পাথর নিক্ষেপের ৩টি স্থানে।
24. কা’বার ভেতরে, চারপাশে এবং হাতিমের মাঝে।
25. হজ্জের সময় সাফা এবং মারওয়া পাহাড়ে।
26. কোরবানীর দিন মুযদালিফায় (মাশআরুল হারামে)।
--------— ফুটনোটঃ
দোয়া কবুলের সময়ের ব্যাপারে কিছু হাদিস একত্রে পাওয়া যাবে হিসনুল মুসলিমের লেখক ড. সাঈদ কাহ্তানি রহ. এর আযযিকর ওয়াদদুয়া ওয়াররুকা কিতাবে। যেটা বাংলা অনুবাদ হয়েছে "বান্দার ডাকে আল্লাহর সাড়া" নামে, মাকতাবাতুল বায়ান থেকে। এছাড়া উস্তায মুফতি হিদায়াতুল্লাহ (হাফিযাহুল্লাহ)এর লেখা "দু'আঃ ফযিলত ও কবুল হওয়ার উপায়" বইটাও খুব চমৎকার। মাকতাবাতুল ইসলাম থেকে প্রকাশ হয়েছে। আগ্রহীরা এসব দেখতে পারেন।
তথ্যসূত্র: 1. তিরমিযি ৩৫১৩, 2. তিরমিযি ৩৪৯৯, 3. বুখারি ১১৪৫, 4. মুসলিম ৭৫৭, 5. তিরমিযি ২১২, 6. আবু দাউদ ২৫৪০, 7. সহিহ ইবনে হিব্বান ১৭৬৪, 8. আবু দাউদ ২৫৪০, 9. সহিহ ইবনে হিব্বান ১৭৬৪, 10. আবু দাউদ ১০৪৮, 11. মুসলিম ৮৫৩, 12. বুখারি ৯৩৫, 13. আহমাদ ১৪১৫৩, 14. ইবনু মাজাহ ৩০৬২, 15. তিরমিযি ৩৫০৫, 16. মুসলিম ৯২০, 17. আবু দাউদ ১৪৮১, 18. নাসাঈ ১৩০০, আদাবুল মুফরাদ ৭০৫, 19. তিরমিযি ৪৭৮, 20. ইবনে খুযাইমা ২/২২৩, 21. বুখারি ৬৪০৮, মুসলিম ২৭০০, 22. বুখারি ৩৩০৩, 23. বুখারি ১৭৫১, 24. বুখারি ৩৯৭, মুসলিম ১৩৩০, 25. মুসলিম ১২১৮, 26. মুসলিম ১২১৮
DOWA
সকাল-সন্ধ্যা মাসনুন আমল ও দোয়া
ফজর বাদ দোয়া
১. আল্লাহর রাসূল ফজরের সালাম ফিরিয়ে বলতেন,
اَللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ عِلْمًا نَافِعًا، وَرِزْقًا طَيِّبًا، وَعَمَلاً مُتَقَبَّلاً.
(আল্লাহুম্মা ইন্নী আসআলুকা ইলমান নাফিআন, ওয়া রিযকান তাইয়িবান, ওয়া আমালান মুতাকাব্বালা।)
হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে উপকারী ইলম, উত্তম রিযিক, কবুলযোগ্য আমল প্রার্থনা করছি (ইবনে মাজাহ, হাদিস নং: ৯২৫)।
২. ফজরের পর তিনবার এই কালেমাগুলো পড়বো,
سُبْحَانَ اللهِ وَبِحَمْدِه، عَدَدَ خَلْقِه، وَرِضَا نَفْسِه، وَزِنَةَ عَرْشِه، وَمِدَادَ كَلِمَاتِه.
(সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহী, আদাদা খালকিহী, ওয়া রিদা নাফসিহী, ওয়া যিনাতা আরশিহী, ওয়া মিদাদা কালিমাতিহি।)
‘আমি আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করছি (তাসবীহ পাঠ করছি) ও তাঁর প্রশংসা করছি, তাঁর সমস্ত সৃষ্টির পরিমাণসম, তাঁর সন্তুষ্টি লাভের পরিমাণসম, তাঁর আরশের ওযনসম, তাঁর সমস্ত বাক্য লেখার কালিসম (মুসলিম, হাদিস নং : ১৫০৩)।’
৩. সকাল-সন্ধ্যা তিনবার করে দুআটি পড়বো,
رَضِيتُ بِاللهِ رَبًّا، وَّبِالإِسْلامِ دِينًا، وَّبِمُحَمَّدٍ نَبِيًّا.
(রাদীতু বিল্লাহি রাব্বাওঁ ওয়া বিল ইসলামি দীনাওঁ ওয়াবিমুহাম্মাদিন নাবিয়্যান।)
‘যে ব্যক্তি সকালে বলবে, আমি আল্লাহকে রব হিসেবে পেয়ে সন্তুষ্ট হয়েছি, ইসলামকে দীন হিসেবে পেয়ে সন্তুষ্ট হয়েছি, মুহাম্মাদকে নবীরূপে পেয়ে সন্তুষ্ট হয়েছি। আমি আল্লাহ এই দুআপাঠকারীর যিম্মাদার হয়ে যাবো। হাত ধরে জান্নাতে প্রবেশ না করা পর্যন্ত থামবো না (তাবারানী, মুজামে কাবীর, হাদীস নং : ১৭৫৯৪)।
৪. তাসবীহ-তাহমীদ
সকাল-সন্ধ্যায় একশবার করে পড়বো,
سُبْحَانَ اللهِ وَبِحَمْدِهِ.
(সুবহা-নাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি)
‘আমি আল্লাহর সপ্রশংস পবিত্রতা বর্ণনা করছি (বুখারী ৬০৪২)।’
৫. নিশ্চিত সুরক্ষা
১. প্রতি সন্ধ্যায় তিনবার করে পড়বো,
أَعُوْذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ.
(আউযু বিকালিমাতিল্লাহিত তাম্মাতি, মিন শাররি মা খালাক।)
‘আমি আল্লাহর পরিপূর্ণ ‘কালিমাসমূহ (বাক্য)-এর মাধ্যমে সৃষ্টিজীবের অনিষ্ট থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি (মুসলিম, হাদিস নং : ২৭০৯)।
২. অপরিচিত কোথাও গেলে, নতুন ঘরে উঠলে, উন্মুক্ত-অরক্ষিত স্থানে অবস্থানকালে, বনে-বাদাড়ে যেতে হলে, রাতে নতুন কোথাও গাড়ি থেকে নামলে দুআখানা পড়ে নেব (মুসলিম, হাদিস নং : ২৭০৮)।
৬. আল্লাহর নিরাপত্তা
সকাল-সন্ধ্যায় সাতবার করে পড়বো,
حَسْبِيَ اللّٰهُ لَا إِلٰهَ إِلَّا هُوَ عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ وَهُوَ رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيْمِ.
(হাসবিয়াল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুয়া, আলাইহি তাওয়াক্কালতু, ওয়াহুয়া রব্বুল আরশিল আযীম।)
‘আল্লাহই আমার জন্য যথেষ্ট, তিনি ছাড়া আর কোনো হক্ব ইলাহ নেই। আমি তাঁর উপরই ভরসা করি। আর তিনি মহান আরশের রব (হিসনুল মুসলিম)।’
৭. সাক্ষ্য ও সুরক্ষা
সকাল-সন্ধ্যায় একবার করে পড়বো,
اَللّٰهُمَّ عَالِمَ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ فَاطِرَ السَّمَوَاتِ وَالْأَرْضِ، رَبَّ كُلِّ شَيْءٍ وَمَلِيْكَهُ، أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلٰهَ إِلَّآ أَنْتَ، أَعُوْذُ بِكَ مِنْ شَرِّ نَفْسِيْ، وَمِنْ شَرِّ الشَّيْطَانِ وَشِرْكِه، وَأَنْ أَقْتَرِفَ عَلٰى نَفْسِيْ سُوْءًا، أَوْ أَجُرَّهُ إِلَى مُسْلِمٍ.
(আল্লাহুম্মা আলিমাল গাইবি ওয়াশ্শাহাদাতি ফাত্বিরাস সামাওয়াতি ওয়াল আরদ্বি, রব্বা কুল্লি শাইইন ওয়া মালীকাহু, আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লা আনতা। আউযু বিকা মিন শাররি নাফ্সী ওয়া মিন শাররিশ শাইত্বানি ওয়াশারাকিহী ওয়া আন আক্বতারিফা আলা নাফ্সীন সূআন আউ আজুররাহূ ইলা মুসলিমিন।)
‘হে আল্লাহ! হে দৃশ্যমান ও অদৃশ্যের জ্ঞানী, হে আসমানসমূহ ও যমীনের স্রষ্টা, হে সব কিছুর রব ও মালিক! আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আপনি ছাড়া আর কোনো হক্ব ইলাহ নেই। আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই আমার আত্মার অনিষ্ট থেকে, শয়তানের অনিষ্টতা থেকে ও তার শিরক বা তার ফাঁদ থেকে, আমার নিজের উপর কোনো অনিষ্ট করা, অথবা কোনো মুসলিমের দিকে তা টেনে নেওয়া থেকে (তিরমিযী, হাদিস নং : ৩৩৯২)।’
৮. সূরা হাশরের তিন আয়াত
প্রথমে তিনবার পড়বো,
أَعُوْذُ بِاللهِ السَّمِيْعِ الْعَلِيْمِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ.
(আউযু বিল্লাহিস সামীইল আলীমি মিনাশ শাইত্বনির রজীম।)
‘আমি সর্বশ্রোতা সর্বজ্ঞ আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি, অভিশপ্ত শয়তান থেকে।’
তারপর সূরা হাশরের শেষ তিন আয়াত পড়বো (তিরমিযী, হাদিস নং : ২৯২২),
هُوَ اللهُ الَّذِیْ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ ۚ عٰلِمُ الْغَیْبِ وَ الشَّهَادَۃِ ۚ هُوَ الرَّحْمٰنُ الرَّحِیْمُ ﴿۲۲﴾
‘তিনিই আল্লাহ, যিনি ছাড়া কোনো মাবুদ নেই। তিনি গুপ্ত ও প্রকাশ্য সব কিছুর জ্ঞাতা। তিনি সকলের প্রতি দয়াবান, পরম দয়ালু।’
هُوَ اللهُ الَّذِیْ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ ۚ اَلْمَلِكُ الْقُدُّوْسُ السَّلٰمُ الْمُؤْمِنُ الْمُهَیْمِنُ الْعَزِیْزُ الْجَبَّارُ الْمُتَکَبِّرُ ؕ سُبْحٰنَ اللهِ عَمَّا یُشْرِكُوْنَ ﴿۲۳﴾
‘তিনিই আল্লাহ, যিনি ছাড়া কোনো মাবুদ নেই। তিনি বাদশাহ, পবিত্রতার অধিকারী, শান্তিদাতা, নিরাপত্তাদাতা, সকলের রক্ষক, মহা ক্ষমতাবান, সকল দোষত্রুটি হতে সংশোধনকারী, গৌরবান্বিত, তারা যে শিরক করে তা থেকে আল্লাহ পবিত্র।’
هُوَ اللهُ الْخَالِقُ الْبَارِئُ الْمُصَوِّرُ لَهُ الْاَسْمَآءُ الْحُسْنٰی ؕ یُسَبِّحُ لَهٗ مَا فِی السَّمٰوٰتِ وَ الْاَرْضِ ۚ وَ هُوَ الْعَزِیْزُ الْحَکِیْمُ ﴿ ۲۴﴾
‘তিনিই আল্লাহ, যিনি সৃষ্টিকর্তা অস্তিত্বদাতা, রূপদাতা, সর্বাপেক্ষা সুন্দর নামসমূহ তাঁরই, আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে যা—কিছু আছে তা তাঁর তাসবীহ পাঠ করে এবং তিনিই ক্ষমতাময়, হেকমতের মালিক (সূরা হাশর : ২২-২৪)।
৯. তিন কুল
সকাল ও সন্ধ্যায় সূরা ইখলাস তিনবার ও সূরা ফালাক এবং সূরা নাস তিনবার করে পড়ে নিবে (তিরমিযী, হাদিস নং : ৩৫৭৫)।
১০. জান্নাতের টিকেট
সকাল-সন্ধ্যায় সাইয়েদুল একবার করে ইস্তেগফার পড়বো,
اَللّٰهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لاَ إِلٰهَ إِلاَّ أَنْتَ، خَلَقْتَنِيْ وَأَنَا عَبْدُكَ، وَأَنَا عَلٰى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ، أَعُوْذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ، أَبُوْءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ، وَأَبُوْءُ لَكَ بِذَنْبِيْ فَاغْفِرْ لِيْ، فَإِنَّهُ لاَ يَغْفِرُ الذُّنُوْبَ إِلاَّ أَنْتَ.
(আল্লাহুম্মা! আনতা রাব্বী লা- ইলা-হা ইল্লা- আনতা, খালাকতানী ওয়া আনা আবদুকা, ওয়া আনা আ‘লা আহদিকা ওয়া ওয়া‘দিকা মাস্তাতো‘তু, আউযু বিকা মিন শাররি মা সানা‘তু, আবূউ লাকা বিনি‘মাতিকা আলাইয়া, ওয়া আবূউ লাকা বিযামবি ফাগফির লী, ফাইন্নাহু লা ইয়াগফিরুয যুনূবা ইল্লা আনতা!)
হে আল্লাহ, আপনি আমার রব। আপনি ছাড়া আর কোনো উপাস্য নেই। আপনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন। আমি আপনার বান্দা। আমি সাধ্যানুযায়ী আপনার প্রতি কৃত ওয়াদা রক্ষার চেষ্টা করছি। আপনাকে দেয়া প্রতিশ্রুতির অধীনে থাকার চেষ্টা করছি! আমার মন্দকর্মের ব্যাপারে আপনার পানাহ চাই! আমার প্রতি আপনার নেয়ামতের কথা অকুণ্ঠচিত্তে স্মরণ করছি। আমার পাপের কথাও স্বীকার করছি। আমাকে ক্ষমা করুন। আপনি ছাড়া আর কেউ ক্ষমা করতে পারবে না (বুখারি: ৬৩০৬)।’
১১. সকাল সন্ধ্যার সুরক্ষা
সকাল-সন্ধ্যায় দুআটি একবার করে পড়বো। সকালে পড়বো,
أَصْبَحْنَا وَأَصْبَحَ الْمُلْكُ لِلّٰهِ وَالْحَمْدُ لِلّٰهِ، لۤاَ إِلٰهَ إِلاَّ اللهُ، وَحْدَهُ لاَ شَرِيْكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ، رَبِّ أَسْأَلُكَ خَيْرَ مَا فِيْ هٰذِا الْيَوْمِ وَخَيْرَ مَا بَعْدَهُ، وَأَعُوْذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا فِيْ هٰذَا الْيَوْمِ وَشَرِّ مَا بَعْدَهُ، رَبِّ أَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْكَسَلِ وَسُوْءِ الْكِبَرِ، رَبِّ أَعُوْذُ بِكَ مِنْ عَذَابٍ فِي النَّارِ وَعَذَابٍ فِي الْقَبْرِ.
(আসবাহনা ওয়া আসবাহাল মুলকু লিল্লাহ। ওয়াল হামদুলিল্লাহ। লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ। ওয়াহদাহু লা শারীকালাহ। লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদ। ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদীর। রাব্বি, আসআলুকা খাইরা মা ফী হা-যাল ইয়াওমি ওয়া খাইরা মা বা‘দাহু। ওয়া আউযু বিকা মিন শাররি মা ফী হা-যাল ইয়াওমি ওয়া শাররি মা বা‘দাহু। রাব্বি, আউযু বিকা মিনাল কাসালি ওয়া সূঈল কিবারি। রাব্বি, আউযু বিকা মিন আযাবিন ফিন্না-রি ওয়া আযাবিন ফিল-কাবরি।)
‘আমরা সকালে উপনীত হয়েছি। সমস্ত ক্ষমতাও আল্লাহর কুক্ষিগত হয়েছে। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর। আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। তার কোনো শরীক নেই। রাজত্ব তার। প্রশংসাও তার। তিনি সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান।
হে আমার প্রতিপালক, আমি আপনার কাছে এ রাতের সমস্ত কল্যাণ প্রার্থনা করছি। রাতের পরে যত কল্যাণ আছে, তাও কামনা করছি।
এই দিনের সমস্ত অকল্যাণ থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। দিনের পরে আসা সমস্ত অকল্যাণ থেকেও মুক্তি কামনা করছি। আমি অলসতা থেকে কষ্টকর বার্ধক্য থেকে পানাহ চাচ্ছি। জাহান্নামের আযাব ও কবরের আযাব থেকেও পানাহ চাচ্ছি।’
সন্ধ্যায় পড়বো
أَمْسَيْنَا وَأَمْسَى الْمُلْكُ لِلّٰهِ، وَالْحَمْدُ لِلّهِ، لاَ إِلهَ إِلاَّ اللهُ، وَحْدَهُ لاَ شَرِيْكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ، رَبِّ أَسْأَلُكَ خَيْرَ مَا فِيْ هٰذِهِ اللَّيْلَةِ وَخَيْرَ مَا بَعْدَهَا، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا فِيْ هٰذِهِ اللَّيْلَةِ وَشَرِّ مَا بَعْدَهَا، رَبِّ أَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْكَسَلِ وَسُوْءِ الْكِبَرِ، رَبِّ أَعُوْذُ بِكَ مِنْ عَذَابٍ فِي النَّارِ وَعَذَابٍ فِي الْقَبْرِ.
‘আমরা সন্ধ্যায় উপনীত হয়েছি। সমস্ত ক্ষমতাও আল্লাহর কুক্ষিগত হয়েছে। প্রমস্ত প্রশংসা আল্লাহর। আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। তার কোনো শরীক নেই। রাজত্ব তার। প্রশংসাও তার। তিনি সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান।
হে আমার প্রতিপালক, আমি আপনার কাছে এ রাতের সমস্ত কল্যাণ প্রার্থনা করছি। রাতের পরে যত কল্যাণ আছে—তাও কামনা করছি।
এই রাতের সমস্ত অকল্যাণ থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। রাতের পরে আসা সমস্ত অকল্যাণ থেকেও মুক্তি কামনা করছি। আমি অলসতা থেকে এবং কষ্টকর বার্ধক্য থেকে পানাহ চাচ্ছি। জাহান্নামের আযাব ও কবরের আযাব থেকেও পানাহ চাচ্ছি (মুসলিম: ২৭২৩)।’
১২. বিজয় কামনা
সকাল-সন্ধ্যায় দুআটি একবার করে পড়বো। সকালে পড়বো,
أَصْبَحْنَا وَأَصْبَحَ الْمُلْكُ لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ، اَللّٰهُمَّ إِنِّيْ أَسْأَلُكَ خَيْرَ هٰذَا الْيَوْمِ فَتْحَهُ، وَنَصْرَهُ، وَنُوْرَهُ، وَبَرَكَتَهُ، وَهُدَاهُ، وَأَعُوْذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا فِيْهِ وَشَرِّ مَا بَعْدَهُ.
(আসবাহনা ওয়া আসবাহাল মুলকু লিল্লাহি রাব্বিল আলামীন। আল্লাহুম্মা ইন্নী আসআলুকা খাইরা হাযাল ইয়াওমি ওয়া ফাতহাহু ওয়া নাসরাহু ওয়া বারাকাতাহু ওয়া হুদাহু, ওয়া আউযু বিকা মিন শাররি মা ফীহি ওয়া শাররি মা বাদাহু।)
‘আমরা সকালে উপনীত হয়েছি, অনুরূপ যাবতীয় রাজত্বও সকালে উপনীত হয়েছে সৃষ্টিকুলের রব্ব আল্লাহ্র জন্য। হে আল্লাহ, আপনার কাছে এই দিনটির কল্যাণ, এই দিনটির অবাধ জয়, এই দিনটির নুসরত-সাহায্য, এই দিনটির নূর, এই দিনটির বরকত এবং এই দিনটির হেদায়াত প্রার্থনা করছি। এই দিনের অনিষ্ট ও তার পরের অনিষ্ট থেকে আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করছি।’
সন্ধ্যায় পড়বো
أَمْسَيْنَا وَأَمْسَى الْمُلْكُ لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ، اَللّٰهُمَّ إِنِّيْ أَسْأَلُكَ خَيْرَ هٰذِهِ اللَّيْلَةِ :فَتْحَهَا، وَنَصْرَهَا، وَنُوْرَهَا، وَبَرَكَتَهَا، وَهُدَاهَا، وَأَعُوْذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا فِيْهَا وَشَرِّ مَا بَعْدَهَا.
(আমসাইনা ওয়া আমসাল মুলকু লিল্লাহি রাব্বিল আলামীন। আল্লাহুম্মা ইন্নী আসআলুকা খাইরা হাযিহিল লাইলাতি ওয়া ফাতহাহা ওয়া নাসরাহা ওয়া বারাকাতাহা ওয়া হুদাহা, ওয়া আউযু বিকা মিন শাররি মা ফীহা ওয়া শাররি মা বাদাহা।)
‘আমরা বিকেলে উপনীত হয়েছি। অনুরূপ যাবতীয় রাজত্বও বিকেলে উপনীত হয়েছে সৃষ্টিকুলের রব আল্লাহ্র জন্য। হে আল্লাহ, আপনার কাছে এই রাতটির কল্যাণ, এই রাতটির অবাধ জয়, এই রাতটির নুসরত-সাহায্য, এই রাতটির নূর, এই রাতটির বরকত এবং এই রাতটির হেদায়াত প্রার্থনা করছি। এই রাতটির অনিষ্ট ও তার পরের অনিষ্ট থেকে আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করছি (আবূ দাউদ, হাদিস নং : ৫০৮৪)।’
১৩. শাহাদাহ
সকালে ও সন্ধ্যায় চারবার করে বলব। সকালে বলব,
اَللّٰهُمَّ إِنِّيْ أَصْبَحْتُ أُشْهِدُكَ وَأُشْهِدُ حَمْلَةَ عَرْشِكَ وَمَلَائِكَتِكَ وَجَمِيْعَ خَلْقِكَ أَنَّكَ أَنْتَ اللهُ لَا إِلٰهَ إِلَّا أَنْتَ وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُكَ وَرَسُوْلُكَ.
(আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসবাহ্তু উশহিদুকা ওয়া উশহিদু হামালাতা আরশিকা ওয়া মালা-ইকাতাকা ওয়া জামী‘আ খালক্বিকা, আন্নাকা আনতাল্লা-হু লা ইলা-হা ইল্লা আনতা ওয়া আন্না মুহাম্মাদান আব্দুকা ওয়া রাসূলুকা।)
‘হে আল্লাহ! আমি সকালে উপনীত হয়েছি। আপনাকে সাক্ষী রাখছি, সাক্ষী রাখছি—আপনার আরশ বহনকারীগণকে, আপনার ফেরেশতাগণকে ও আপনার সকল সৃষ্টিকে, এ বিষয়ে যে, নিশ্চয় আপনিই আল্লাহ, একমাত্র আপনি ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই। আর মুহাম্মাদ সা. আপনার বান্দা ও রাসূল।’
সন্ধ্যায় বলব,
اَللّٰهُمَّ إِنِّيْ أَمْسَيْتُ أُشْهِدُكَ وَأُشْهِدُ حَمْلَةَ عَرْشِكَ وَمَلَائِكَتَك وَجَمِيْعَ خَلْقِكَ أَنَّكَ أَنْتَ اللهُ لَا إِلٰهَ إِلَّا أَنْتَ وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُكَ وَرَسُوْلُكَ.
(আল্লা-হুম্মা ইন্নী আমসাইতু উশহিদুকা ওয়া উশহিদু হামালাতা আরশিকা ওয়া মালা-ইকাতাকা ওয়া জামী‘আ খালক্বিকা, আন্নাকা আনতাল্লা-হু লা ইলা-হা ইল্লা আনতা ওয়া আন্না মুহাম্মাদান আব্দুকা ওয়া রাসূলুকা।)
‘হে আল্লাহ! আমি সন্ধ্যায় উপনীত হয়েছি। আপনাকে সাক্ষী রাখছি সাক্ষী রাখছি আপনার আরশ বহনকারীগণকে, আপনার ফেরেশতাগণকে ও আপনার সকল সৃষ্টিকে, এ বিষয়ে যে, নিশ্চয় আপনিই আল্লাহ, একমাত্র আপনি ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই। আর মুহাম্মাদ সা. আপনার বান্দা ও রাসূল (আবূ দাউদ, হাদিস নং : ৫০৬৯, হাসান)।
১৪. জাহান্নাম থেকে মুক্তি
সকাল-সন্ধ্যায় কারো সাথে কথা বলার আগে, সাতবার করে পড়বো,
اَللّٰهُمَّ أَجِرْنِيْ مِنَ النَّارِ.
(আল্লাহুম্মা আজিরনী মিনান নার।)
‘হে আল্লাহ, আমাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করুন (আবূ দাউদ, হাদিস নং : ৫০৭৯)।’
১৫. নেয়ামতের শোকর
সকাল-সন্ধ্যায় দুআটি পড়বো। সকালে পড়বো,
اَللّٰهُمَّ مَا أَصْبَحَ بِيْ مِنْ نِعْمَةٍ أَوْ بِأَحَدٍ مِّنْ خَلْقِكَ فَمِنْكَ وَحْدَكَ لَا شَرِيْكَ لَكَ فَلَكَ الْحَمْدُ وَلَكَ الشُّكْرُ.
(আল্লা-হুম্মা মা আসবাহা বী মিন নি‘মাতিন আও বিআহাদিন মিন খালক্বিকা ফামিনকা ওয়াহ্দাকা লা শারীকা লাকা, ফালাকাল হাম্দু ওয়ালাকাশ্ শুকরু।)
হে আল্লাহ! আজ যে নেয়ামত নিয়ে আমার সকাল হল অথবা আপনার অন্য কোনো সৃষ্টির সকালও যে নেয়ামত-অনুগ্রহ নিয়ে হল, এর সবই কেবল আপনারই দান। আপনার কোনো শরীক নেই। তাই সকল প্রশংসা শুধু আপনারই। সকল কৃতজ্ঞতাও আপনারই প্রাপ্য।
সন্ধ্যায় পড়বো,
اَللّٰهُمَّ مَا أَمْسٰى بِيْ مِنْ نِعْمَةٍ أَوْ بِأَحَدٍ مِّنْ خَلْقِكَ فَمِنْكَ وَحْدَكَ لَا شَرِيْكَ لَكَ فَلَكَ الْحَمْدُ وَلَكَ الشُّكْرُ.
(আল্লা-হুম্মা মা আমসা বী মিন নি‘মাতিন আও বিআহাদিন মিন খালক্বিকা ফামিনকা ওয়াহ্দাকা লা শারীকা লাকা, ফালাকাল হাম্দু ওয়ালাকাশ্ শুকরু।)
‘হে আল্লাহ! আজ যে নেয়ামত নিয়ে আমার সন্ধ্যা হলো অথবা আপনার অন্য কোনো সৃষ্টির সন্ধ্যা যে নেয়ামত-অনুগ্রহ নিয়ে হলো, এর সবই কেবল আপনারই দান। আপনার কোনো শরীক নেই। তাই সকল প্রশংসা শুধু আপনারই। সকল কৃতজ্ঞতাও আপনারই প্রাপ্য (তারগীব তারহীব : ১/৩০৯, হাসান)।’
১৬. সকাল-সন্ধ্যার মুনাজাত
সকাল-সন্ধ্যায় দুআটি পড়বো। সকালে পড়বো,
اَللّٰهُمَّ بِكَ أَصْبَحْنَا وَبِكَ أَمْسَيْنَا، وَبِكَ نَحْيَا وَبِكَ نَمُوْتُ، وَإِلَيْكَ النُّشُوْرُ.
(আল্লাহুম্মা বিকা আসবাহনা ওয়া বিকা আমসাইনা, ওয়া বিকা নাহইয়া ওয়া বিকা নামূতু, ওয়া ইলাইকান নুশূর।)
‘আল্লাহুম্মা! আপনার সাহায্যে আমি সকাল যাপন করি। আপনার সাহায্যে আমি সন্ধ্যা যাপন করি। আপনার সাহায্যে আমি জীবিত থাকি। আপনিই আমার মৃত্যু ঘটান। আপনার কাছেই আমার প্রত্যাবর্তন।’
সন্ধ্যায় পড়বো
اَللّٰهُمَّ بِكَ أَمْسَيْنَا وَبِكَ أَصْبَحْنَا وَبِكَ نَحْيَا وَبِكَ نَمُوْتُ، وَإِلَيْكَ النُّشُوْرُ وَإِلَيْكَ الْمَصِيْرُ.
(আল্লাহুম্মা বিকা আমসাইনা, ওয়া বিকা আসবাহনা, ওয়া বিকা নাহইয়া, ওয়া বিকা নামূতু, ওয়া ইলাইকান নুশূর, ওয়া ইলাইকাল মাসীর।)
‘আল্লাহুম্মা! আপনার সাহায্যে আমি সন্ধ্যা যাপন করি। আপনার সাহায্যে আমি সকাল যাপন করি। আপনার সাহায্যে আমি জীবিত থাকি। আপনিই আমার মৃত্যু ঘটান। আপনারই কাছে আমার পুনরুজ্জীবন। আপনার কাছেই আমার প্রত্যাবর্তন (তিরমিযী, হাদিস নং : ৩৩৯১)।’
১৭. সুস্থতা কামনা
১. আল্লাহর রাসূল সকাল-সন্ধ্যায় এই দুআ পড়তেন,
اَللّٰهُمَّ إِنِّيْ أَسْأَلُكَ الْعَافِيَةَ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ، اَللّٰهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الْعَفْوَ وَالْعَافِيَةَ فِيْ دِيْنِيْ وَدُنْيَايَ وَأَهْلِيْ وَمَالِيْ، اَللّٰهُمَّ اسْتُرْ عَوْرَتِيْ وَآمِنْ رَوْعَاتِيْ؛
اَللّٰهُمَّ احْفَظْنِيْ مِنْ بَيْنِ يَدَيَّ وَمِنْ خَلْفِيْ وَعَنْ يَمِيْنِيْ وَعَنْ شِمَالِيْ وَمِنْ فَوْقِيْ، وَأَعُوْذُ بِعَظَمَتِكَ أَنْ أُغْتَالَ مِنْ تَحْتِيْ.
(আল্লাহুম্মা ইন্নী আসআলুকাল আফিয়াতা ফিদ্দুনইয়া ওয়াল আখিরাতি। আল্লাহুম্মা ইন্নী আসআলুকাল আফওয়া ওয়াল আফিয়াতা ফী দীনি ওয়া দুনইয়ায়া ওয়া আহলী ওয়া মালী। আল্লাহুম্মাসতুর আওরাতী ওয়া আমিন রাওআতী। আল্লাহুম্মাহফাযনী মিম্বাইনি ইয়াদাইয়া ওয়া মিন খালফী ওয়া আন ইয়ামীনি ওয়া আন শিমালী ওয়া মিন ফাওকী ওয়া আউযু বিআযামাতিকা আন উগতালা মিন তাহতী।)
‘আল্লাহুম্মা! আমি আপনার কাছে দুনিয়া ও আখেরাতে সুস্থতা কামনা করছি।
আল্লাহুম্মা! আমি আপনার কাছে আমার দীন ও দুনিয়া, আমার ধনে-জনের ব্যাপারে ক্ষমা ও সুস্থতা প্রার্থনা করছি।
আল্লাহুম্মা! আমার দোষত্রুটি ঢেকে দিন। আমার ভয়ভীতি দূর করে দিন।
আল্লাহুম্মা! আমাকে সামনে ও পেছনের দিক থেকে, ডান ও বাম দিক থেকে, উপরের দিক থেকে হেফাযত করুন। আর নিচের দিক থেকে আসা অতর্কিত আক্রমণে নিহত হওয়া থেকে আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করছি (আবু দাউদ: ৫০৭৪)।
২. এছাড়াও নবীজি সা. পড়তেন,
اَللّٰهُمَّ إِنِّيْ أَسْئَلُكَ الصِّحَّةَ وَالْعِفَّةَ وَالْأَمَانَةَ وَحُسْنِ الخُلُقِ والرِّضَا بِالْقَدْرِ.
(আল্লাহুম্মা ইন্নী আসআলুকাস সিহহাতা, ওয়াল ইফফাতা, ওয়াল আমানাতা, ওয়া হুসনিল খুলুকি, ওয়ার রিদা বিল কাদরি।)
‘হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে সুস্থতা, চারিত্রিক নিষ্কলুষতা, আমানতদারিতা, উত্তম চরিত্র ও তাকদীরে সন্তুষ্টি প্রার্থনা করছি (কানযুল উম্মাল, হাদিস নং : ৫০৯৩)।’
৩. আরেকবার চরম কষ্টের সময় নবীজি সা. এই দুআ পড়েছিলেন,
اَللّٰهُمَّ إِنِّيْ أَسْئَلُكَ تَعْجِيْلَ عَافِيَتِكَ وَصَبْرًا عَلٰى بَلِيَّتِكَ وَخُرُوْجًا مِّنَ الدُّنْيَا إِلٰى رَحْمَتِكَ.
(আল্লাহুম্মা ইন্নী আসআলুকা তাজীলা আফিয়াতিকা ওয়া সাবরান আলা বালিয়্যাতিকা ওয়া খুরুজাম মিনাদ দুনইয়া ইলা রাহমাতিকা।)
‘হে আল্লাহ, আপনি আমাকে দ্রুত নিরাপত্তা দান করুন এবং বিপদে সবর করার তাওফীক দান করুন। দুনিয়া থেকে আপনার রহমতের ছায়াতলে চলে যাওয়ার প্রার্থনা করছি (কানযুল উম্মাল, হাদিস নং : ৩৬৯৯)।’
৪. সরাসরি মৃত্যু কামনার পরিবর্তে নবীজি সা. এই দুআ পড়তে শিখিয়েছেন,
اَللّٰهُمَّ بِعِلْمِكَ الْغَيْبِ وَقُدْرَتِكَ عَلَى الْخَلْقِ أَحْيِنِيْ مَا عَلِمْتَ الْحَيَاةَ خَيْرًا لِّيْ وَتَوَفَّنِيْ إِذَا عَلِمْتَ الْوَفَاةَ خَيْرًا لِّيْ.
(আল্লাহুম্মা বিইলমিকাল গাইবি, ওয়া কুদরাতিকা আলাল খালকি, আহয়িনী মা আলিমতাল হায়াতা খাইরাল লী, ওয়া তাওয়াফফানী ইযা আলিমতাল ওয়াফাতা খাইরাল লী।)
‘হে আল্লাহ, আমি আপনার গাইবের জ্ঞানের দোহাই দিয়ে এবং সৃষ্টির উপর বিরাজমান আপনার কুদরতের দোহাই দিয়ে প্রার্থনা করছি, আপনার জ্ঞানে যতক্ষণ পর্যন্ত আমার জীবিত থাকা কল্যাণকর হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত আমাকে জীবিত রাখুন। আপনার জ্ঞানে যখন মৃত্যু আমার জন্য কল্যাণকর হয়, তখন আমাকে মৃত্যু দিন (নাসাঈ, হাদিস নং : ১৩০৫)।’
১৮. সকাল-সন্ধ্যার আশ্রয়
নবীজি সা. তার আদরের কন্যা ফাতিমাকে সকাল-সন্ধ্যা পড়তে বলেছেন,
يَا حَيُّ يَا قَيُّوْمُ بِرَحْمَتِكَ أَسْتَغِيْثُ، أَصْلِحْ لِيْ شَأْنِيْ كُلَّهُ، وَلَا تَكِلْنِيْ إِلَى نَفْسِيْ طَرَفَةَ عَيْنٍ
(ইয়া হাইয়ু কাইয়ূমু, বিরাহমাতিকা আসতাগীস, আসলিহ লী শানী কুল্লাহু, ওয়ালা তাকিলনী ইলা নাফসী তারাফাতা আইনিন।)
‘হে চিরঞ্জীব! হে সর্বনিয়ন্তা! আপনার রহমাতের উসীলায় সাহায্য প্রার্থনা করছি। আমার সকল বিষয়কে সংশোধন করে দিন (উপকারী বানিয়ে দিন)। এক মুহূর্তের জন্যেও আমার (রক্ষণাবেক্ষণের) দায়িত্ব আমার উপর চাপাবেন না (হাকেম, হাদিস নং : ২০০০, আনাস বিন মালিক রা.-এর সূত্রে।)।
১৯. সকাল-সন্ধ্যার ইস্তেআযা
১. আবু বকর সিদ্দীক রা. একদিন বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! সকাল ও সন্ধ্যায় পড়ার জন্যে আমাকে কিছু শিখিয়ে দিন। আবা বাকর! তুমি সকাল ও সন্ধ্যায় পড়বে,
اَللّٰهُمَّ فَاطِرَ السَّمٰوَاتِ وَالْأَرْضِ عَالِمَ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ رَبَّ كُلَّ شَيْءٍ وَمَلِيْكَهُ، أَشْهَدُ أَنْ لَّا إِلٰهَ إِلَّا أَنْتَ، أَعُوْذُ بِكَ مِنْ شَرِّ نَفْسِيْ، وَشَرِّ الشَّيْطَانِ وَشَرَكِه، وَأَنْ أَقْتَرِفَ عَلٰى نَفْسِيْ سُوْءًا أَوْ أَجُرَّهُ إِلٰى مُسْلِمٍ
(আল্লাহুম্মা ফাতিরাস সামাওয়াতি ওয়াল আরদি, আলিমাল গাইবি ওয়াশ শাহাদাতি, রাব্বা কুল্লি শাইয়িন ওয়া মালীকাহু। আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লা আনতা। আউযু বিকা মিন শাররি নাফসী, ওয়া শাররিশ শাইত্বনি, ওয়া শারাকিহি, ওয়া আন আকতারিফা আলা নাফসী সূআন, আও আজুররাহু ইলা মুসলিমিন।)
‘আল্লাহুম্মা! আপনি আসমান ও যমীনের স্রষ্টা। আপনি অদৃশ্য ও দৃশ্যের জ্ঞানী! আপনি সবকিছু রব ও মালিক। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আপনি ছাড়া আর কোনো উপাস্য নেই। আমার নফসের অনিষ্ট থেকে আপনার কাছে আশ্রয় কামনা করছি। শয়তান ও তার চক্রান্ত- কৌশল থেকে পানাহ চাইছি। নিজে মন্দকর্ম করা ও অপর মুসলিম ভাইকে মন্দকর্মের দিকে টেনে নিয়ে যাওয়া থেকে আপনার পানাহ চাইছি (তিরমিযী, হাদিস নং : ৩৫২৯)।
২. আরেক বর্ণনা আছে, এই দুআটা তুমি সকাল-সন্ধ্যায় পড়বে। আবার শোয়ার সময়ও পড়বে (আবু দাউদ, হাদিস নং : ৫০৬৭)।
২০. অনিষ্ট রোধে বিসমিল্লাহ
সকাল ও সন্ধ্যায় তিনবার করে পড়বো,
بِسْمِ اللهِ الَّذِيْ لَا يَضُرُّ مَعَ اسْمِه، شَيْءٌ فِي الْأَرْضِ وَلَا فِي السَّمَاءِ، وَهُوَ السَّمِيْعُ العَلِيْمُ.
(বিসমিল্লাহিল্লাযী লা ইয়াদুররু মাআসমিহী শাইয়ুন ফিল আরদি ওয়ালা ফিসসামাই, ওয়া হুয়াস সামীউল আলীম।)
‘আল্লাহর নামে (দিবস বা রজনি) শুরু করছি। আল্লাহর নামে শুরু করলে, আসমান ও জমীনের কোনো কিছুই ক্ষতি করতে পারে না। আল্লাহ সর্বশ্রোতা সর্বজ্ঞ (তিরমিজী, হাদিস নং : ৩৩৮৮)।’
২১. ঋণ পরিশোধ
নবীজি ঋণ পরিশোধের জন্য এই দুআটি পড়তেন,
اَللّٰهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْهَمِّ وَالْحَزَنِ، وَالْعَجْزِ وَالكَسَلِ، وَالْجُبْنِ وَالْبُخْلِ، وَضَلَعِ الدَّيْنِ، وَغَلَبَةِ الرِّجَالِ.
(আল্লাহুম্মা ইন্নী আউযু বিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হাযান, ওয়াল আজযি ওয়াল কাসাল। ওয়াল জুবনি ওয়াল বুখলি, ওয়া দালাইদ দাইনি, ওয়া গালাবাতির রিজাল।)
‘হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আমি আপনার দুশ্চিন্তা, পেরেশানী, অক্ষমতা, অলসতা, কাপুরুষতা, কৃপণতা, ঋণের গুরুভার ও মানুষের প্রবল দাপটের সম্মুখীন হওয়া থেকে আশ্রয় চাই (বুখারী, হাদিস নং : ৬০০২)।’
২২. কুফর দারিদ্র থেকে মুক্তি
১. নবীজি নামাযের পর পড়তেন,
اَللّٰهُمَّ إِنِّي أَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْكُفْرِ وَالْفَقْرِ، وَعَذَابِ الْقَبْرِ.
(আল্লাহুম্মা ইন্নী আউযু বিকা মিনাল কুফরি ওয়াল ফাকরি ওয়া আযাবিল কাবরি।)
‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে কুফরি, দারিদ্র্য ও কবরের আজাব থেকে মুক্তি চাই (নাসাঈ, হাদিস নং : ৭৯০১)।’
২. এই দুআটিও সকাল-সন্ধ্যায় তিনবার করে পড়তে পারি,
اَللّٰهُمَّ عَافِنِيْ فِيْ بَدَنِي، اَللّٰهُمَّ عَافِنِيْ فِيْ سَمْعِيْ، اَللّٰهُمَّ عَافِنِيْ فِي بَصَرِيْ، لاَ إِلٰهَ إِلَّا أَنْتَ. اَللّٰهُمَّ إِنِّي أَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْكُفْرِ وَالْفَقْرِ، اَللّٰهُمَّ إِنِّي أَعُوْذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ، لاَ إِلٰهَ إِلاَّ أَنْتَ.
(আল্লাহুম্মা আফিনী ফী বাদানী, আল্লাহুম্মা আফিনী ফী সামঈ, আল্লাহুম্মা আফিনী ফী বাসারী, লা ইলাহা ইল্লা আনতা। আল্লাহুম্মা ইন্নী আউযু বিকা মিনাল কুফরি, ওয়াল ফাকরি। আল্লাহুম্মা ইন্নী আউযু বিকা মিন আযাবিল কাবরি। লা ইলাহা ইল্লা আনতা।)
‘হে আল্লাহ, আপনি আমার শরীরে সুস্থতা দান করুন। ইয়া আল্লাহ আপনি আমার শ্রবণশক্তিতে সুস্থতা দান করুন। ইয়া আল্লাহ! আপনি আমার দৃষ্টিশক্তিতে সুস্থতা দান করুন। আপনি ছাড়া আর কোনো উপাস্য নেই। ইয়া আল্লাহ! আমি আপনার কাছে কুফর ও দারিদ্র্য থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। ইয়া আল্লাহ! আমি আপনার কাছে কবরের আজাব থেকে মুক্তি চাচ্ছি। আপনি ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই (আহমাদ, হাদিস নং : ২০৪৩০)।’
২৩. ফিতরাহর ঘোষণা
রাসূলুল্লাহ সকাল-সন্ধ্যায় দুআটি পড়তেন। সকালে বলতেন,
أَصْبَحْنَا عَلٰى فِطْرَةِ الْإِسْلَامِ، وَكَلِمَةِ الْإِخْلَاصِ، وَدِيْنِ نَبِيِّنَا مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَمِلَّةِ أَبِيْنَا إِبْرَاهِيْمَ حَنِيْفًا، وَمَا كَانَ مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ.
(আসবাহনা আলা ফিতরাতিল ইসলাম। ওয়া কালিমাতিল ইখলাসি, ওয়া দীনি নাবিয়্যিনা মুহাম্মাদিন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা, ওয়া মিল্লাতি আবীনা ইবরাহীমা হানীফা, ওয়ামা কানা মিনাল মুশরিকীন।)
‘ইসলামের ফিতরাহর উপর আমাদের প্রভাত হলো। কালিমায়ে তাইয়িবার উপর আমাদের ভোর হলো। মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দীনের উপর আমাদের সকাল হলো। আমাদের পিতা একনিষ্ঠ ইবরাহীমের ধর্মের উপর আমাদের দিন শুরু হলো। আর ইবরাহীম মোটেও মুশরিক ছিলেন না।’
সন্ধ্যায় নবীজি পড়তেন,
أَمْسَيْنَا عَلٰى فِطْرَةِ الْإِسْلَامِ، وَكَلِمَةِ الْإِخْلَاصِ، وَدِيْنِ نَبِيِّنَا مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَمِلَّةِ أَبِيْنَا إِبْرَاهِيْمَ حَنِيْفًا، وَمَا كَانَ مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ.
(আমসাইনা আলা ফিতরাতিল ইসলাম। ওয়া কালিমাতিতল ইখলাসি, ওয়া দ্বীনি নাবিয়্যিনা মুহাম্মাদিন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা, ওয়া মিল্লাতি আবীনা ইবরাহীমা হানীফা, ওয়ামা কানা মিনাল মুশরিকীন (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস নং : ১৫৩৬০)
২৪. স্বাস্থ্য ও শ্রবণদৃষ্টির সুস্থতা
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিন্মোক্ত দুআটি সকাল-সন্ধ্যায় তিনবার করে পড়তেন,
اَللّٰهُمَّ عَافِنِيْ فِيْ بَدَنِيْ، اَللّٰهُمَّ عَافِنِيْ فِيْ سَمْعِيْ، اَللّٰهُمَّ عَافِنِيْ فِيْ بَصَرِيْ، لَا إِلٰهَ إِلَّا أَنْتَ؛
اَللّٰهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْكُفْرِ وَالْفَقْرِ، اَللّٰهُمَّ إِنِّي أَعُوْذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ، لَا إِلٰهَ إِلَّا أَنْتَ.
‘হে আল্লাহ! আমার দেহ সুস্থ রাখুন। হে আল্লাহ! আমাকে সুস্থ রাখুন—আমার শ্রবণ ইন্দ্রিয়ে। হে আল্লাহ! আমাকে সুস্থ রাখুন—আমার দৃষ্টিশক্তিতে। আপনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই।
‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে কুফরী ও দরিদ্রতা থেকে আশ্রয় চাইছি। হে আল্লাহ! আমি কবরের আযাব থেকে আপনার কাছে আশ্রয় চাইছি, আপনি ছাড়া অন্য কোনো ইলাহ নেই (আবূ দাউদ, হাদিস নং : ৫০৯০)।’
২৫. একশবার তাসবীহ
সাদ বিন আবী ওয়াক্কাস রা. বর্ণনা করেছেন, আমরা আল্লাহর রাসূলের সাথে বসা ছিলাম। নবীজি তখন বললেন, তোমাদের মধ্যে কেউ কি প্রতিদিন এক হাজার নেকী অর্জন করতে সক্ষম? তখন সেখানে উপবিষ্টদের মধ্য থেকে এক প্রশ্নকারী বলল, আমাদের কেউ কিভাবে এক হাজার নেকী অর্জন করতে পারবে? নবীজি বললেন, যে একশবার তাসবীহ (سُبْحَانَ اللهِ) পাঠ করবে, তার জন্য এক হাজার নেকী লিপিবদ্ধ করা হবে (অথবা) এবং তার থেকে এক হাজার গুনাহ মিটিয়ে দেওয়া হবে (মুসলিম, হাদিস নং : ২৬৯৮)।
২৬. সকাল-সন্ধ্যার তাওহীদ
প্রতি সকালে একশবার পড়বো,
لَا إِلٰهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيْكَ لَهُ، لَهُ الْمُلكُ، وَلَهُ الْحَمْدُ، وَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ.
(লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু, লাহুল মুলকু, ওয়া লাহুল হামদু, ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদীর।)
‘এক আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো উপাস্য নেই। তাঁর কোনো শরীক নেই। সমস্ত রাজত্ব একমাত্র তাঁরই। সমস্ত প্রশংসা একমাত্র তাঁরই। তিনিই সবকিছুর উপর সর্বশক্তিমান (হিসনুল মুসলিম)।’
২৭. ফজর ও মাগরিবে শাহাদাহ
ফজর ও মাগরিবের পর, হাঁটু মোড়া অবস্থাতেই কারো সাথে কথা বলার আগে দশবার পড়বো,
لَا إلٰهَ إلَّا اللهُ، وَحْدَهُ لَا شَرِيْكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ، يُحْيِيْ وَيُمِيْتُ وَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ.
(লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু, লাহুল মুলকু, ওয়া লাহুল হামদু, ইউহয়ী ওয়া ইয়ামূতু, ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদীর।)
‘একমাত্র আল্লাহ ছাড়া আর কোনো উপাস্য নেই। তাঁর কোনো শরীক নেই। সর্বরাজত্ব তাঁরই। সমস্ত প্রশংসাও তার। তিনিই জীবন দান করেন ও মৃত্যু দান করেন। আর তিনিই সবকিছুর উপর সর্বশক্তিমান (তিরমিযী, হাদিস নং : ৩৪৭৪; ইবনু হিব্বান, হাদিস নং : ২০২৩)।’
২৮. ইস্তেগফার
প্রতিদিন একশবার ইস্তেগফার করব,
أَسْتَغْفِرُ اللهَ وَأَتُوبُ إِلَيْهِ.
(আস্তাগফিরুল্লাহা ওয়া আতূবু ইলাইহি।)
আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি ও তাওবা করছি।
‘আমি দিনে একশবার আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি ও তাওবা করি (তিরমিযী, হাদিস নং : ৩২৫৯)।’
২৯. নবীজির প্রতি দুরূদ
প্রতিদিন অন্তত দশবার দুরূদ পাঠ করবো,
اَللّٰهُمَّ صَلِّ وَ سَلِّمْ عَلٰى نَبِيِّنَا مُحَمَّدٍ.
(আল্লাহুম্মা সাল্লি ওয়া সাল্লিম আলা নাবিয়্যিনা মুহাম্মাদ।)
‘ইয়া আল্লাহ, আমাদের নবী মুহাম্মাদের উপর রহমত ও শান্তি বর্ষণ করুন (মাজমাউয যাওয়ায়েদ : ১০/১২০)।’
৩০. সকাল সকাল
১. নবীজি সা. আমাদের বরকতময় সকালের জন্য দুআ করে গেছেন,
اَللّٰهُمَّ بَارِكْ لِأُمَّتِيْ فِيْ بُكُوْرِهَا.
‘ইয়া আল্লাহ! আপনি আমার উম্মতের সকালের মাঝে বরকত দান করুন (তিরমিযী, হাদিস নং : ১২১২)।’
২. নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সকালেই গোটা দিন কেমন কাটাতে চান, তার খসড়া পরিকল্পনা করে ফেলতেন। আল্লাহর কাছে চাহিদামাফিক দুআ করতেন। দুআটি এই,
اَللّٰهُمَّ اجْعَلْ أَوَّلَ هٰذَا النَّهَارِ صَلَاحًا وَأَوْسَطَهُ فَلَاحًا وَّآخِرَهُ نَجَاحًا.
(আল্লাহুম্মাজআল আউয়ালা হাযান নাহারি সালাহান, ওয়া আওসাতুহু ফালাহান, ওয়া আখিরাহু নাজাহান।)
‘ইয়া আল্লাহ, এই দিনের প্রথম ভাগকে আমার জন্য পুণ্যময় করে দিন। মধ্যভাগকে সফল শ্রমমুখর করে দিন। শেষভাগকে অর্জনে পূর্ণ সাফল্যমণ্ডিত করে দিন (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদিস নং : ২৯৮৮৮)।’
৩১. শিশুর সুরক্ষা
১. যখন রাতের আঁধার নেমে আসে অথবা যখন সন্ধ্যা নেমে আসে, তখন তোমাদের শিশুদের (ঘরে) আটকে রাখবে। কেননা এ সময় শয়তানেরা ছড়িয়ে পড়ে। আর যখন রাতের কিছু অংশ অতিক্রান্ত হয় তখন তাদেরকে ছেড়ে দিতে পারো। তোমরা আল্লাহর নাম নিয়ে ঘরের দরজা বন্ধ করবে। কেননা শয়তান বন্ধ দরজা খুলতে পারে না (বুখারী, হাদিস নং : ৩১২৮)।’
২. তোমরা পাত্রগুলো ঢেকে রেখো, পান-পাত্রগুলো বন্ধ করে রেখো, ঘরের দরজাগুলো বন্ধ করে রেখো আর সাঁঝবেলায় তোমাদের শিশুদেরকে ঘরে আটকে রেখো। কেননা এ সময় জ্বিনেরা ছড়িয়ে পড়ে এবং ছোঁ মেরে নিয়ে যায়। আর নিদ্রাকালে বাতিগুলো নিভিয়ে দিবে। কেননা অনেক সময় ছোট ছোট অনিষ্টকারী ইঁদুর প্রজ্বলিত সলতেযুক্ত বাতি টেনে নিয়ে যায় এবং গৃহবাসীকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেয় (বুখারী, হাদিস নং : ৩১৩৮)।’
৩. তোমরা নিজেদের গৃহপালিত পশু এবং ছেলেমেয়েদেরকে সূর্যাস্তের সময় বের হতে দিও না, যতক্ষণ না রাতের প্রহরের কিছু অংশ অতিবাহিত হয়। কেননা সূর্যাস্তের পর থেকে রাতের কিয়দংশ (প্রথমাংশ) অতিক্রান্ত হওয়া পর্যন্ত শয়তান তৎপর হয়ে বিচরণ করতে থাকে (মুসলিম, হাদিস নং : ২০১৩)।
.
.
‘খুলুকিন আযীম’ বই থেকে।
কৃতজ্ঞতা: Maktabatul Azhar মাকতাবাতুল আযহার