March 4, 2022

মুসলিমদের মধ্যে দলাদলি ইবাদি, খারিজী, যায়িদী, ইসমাইলি, হানাফি, সালাফি

প্রশ্নটা কয়েক বার দেখেছি, এত বড় প্রশ্ন পড়েই এড়িয়েও গিয়েছি। যাই হোক কথা হল মুসলিমদের মাঝে ৭২ দল হবে যারা সবাই তাদের মতাদর্শকে সঠিক মনে করবে। আমি সহজ কথা বলি , আপনি সঠিক দলভুক্ত আছেন কি না, সেটা বুঝতে চাইলে রাসূল সাঃ ও তাঁর সাহাবীদের দিকে তাকান। যদি তাদের সাথে মিল পান, তাহলে আপনি তাদের সাথেই আছেন এবং মুসলিমদের মধ্যে দলাদলি করে বিভক্তি তৈরি করবেন না।

এবার প্রশ্নের উত্তরে আসি।

ইবাদী সম্প্রদায়ঃ

হাদিস বইগুলির মধ্যে বুখারি ও মুসলিম শরিফকে তারা মানে। তারা আহলে সুন্নাতুয়াল জামাত থেকে অনেক কম সংখ্যক হাদিস গ্রহণ করে। তারা কোন একসময় খারেজীদের সাথে সম্পর্কিত ছিল, কিন্তু বর্তমানে অনেক লিবারেল এবং ক্রমান্বয়ে অন্য মুসলিমদের নিকটবর্তী হচ্ছে। তাদের মধ্যে নিরপরাধ ব্যক্তি যাদের মুসলিম পরিচয়েই মুখ্য, এবং যে কোন অবস্থায় মুসলিমদের সাহায্যে এগিয়ে আসে, এবং দলাদলি না করে আহলে সুন্নাতুয়াল জামাতের ইমামের পিছনে নামাজ পড়া দোষনীয় মনে করে না; তারাও ভিন্ন দলভুক্ত নয়। কিন্তু এ ধরনের মানুষের সংখ্যা ঠিক কতজন, সেটা আমার জানা নেই। ওমানে তারা সংখ্যা গরিষ্ঠ। এদের সম্পর্কে জানতে পারবেন এখান থেকে , আরো বিশদ জানতে এখানে

খারিজী সম্প্রদায়ঃ

ইসলামের ইতিহাসজুড়ে, সময়ের পরিক্রমায় অসংখ্য গোষ্ঠীর সৃষ্টি হয়েছিল যারা এই ধর্মের ব্যাপারে মৌলিকভাবে নতুন ও বিচিত্র ধরনের সব চিন্তাধারা প্রবর্তন করে এসেছে। এই গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে অন্যতম সহিংস গোষ্ঠীর উত্থান হয়েছিল ৬৫৬ থেকে ৬৬১ সাল পর্যন্ত আলী (রাঃ) এর খিলাফতে রাজনৈতিক কোন্দলের সময়, যারা ‘খারিজি’ নামে পরিচিত ছিল। এক মৌলিক রাজনৈতিক চিন্তাধারা থেকে এদের উত্থান হয়েছিল, যা পরবর্তীতে চরমপন্থায় রূপ নেয় এবং অন্য সকল মুসলিমদের চিন্তাধারা থেকে ভিন্ন হয়ে যায়। খারিজী সম্পর্কে আরো বিশদ ভাবে এখানে জানতে পারবেন

যায়িদী সম্প্রদায়ঃ

ইসলামের পঞ্চম ইমাম হিসেবে হুসাইন-এর নাতি জায়দ ইবনে আলিকে প্রাধান্য দেন যায়িদী সম্প্রদায়। এর প্রথম রাজ্য ৮৬৪ সালে উত্তর ইরানে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং চলেছিল ১১২৬ পর্যন্ত । ৮৯৩ সালে উত্তর ইয়েমেনে একটি দীর্ঘ দীর্ঘস্থায়ী রাষ্ট্র স্থাপিত হয়, এটি সুন্নিদের কাছে সব শিয়া গোষ্ঠীর সবচেয়ে কাছের । সদস্যদের নৈতিক শিক্ষায় এবং সুফিবাদকে অপছন্দ করার ঝোঁক থাকে । যায়িদী শিয়ারা হচ্ছে ইমাম যায়িদ বিন আলী জয়নুল আবিদীনের অনুসারী, যারা আবু বকর, উমার, উসমান রা. এর খিলাফতকে স্বীকার করে। আরো বিস্তারিত

মুতাজিলা সম্প্রদায়ঃ

গুরু হাসান বসরীর সিদ্ধান্তের সরাসরি বিরােধিতা করে ওয়াসিল বিন আতা যখন মজলিশ থেকে বের হয়ে যান তখন তার চিন্তাজগতকে সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে নিজে উদ্যোগী হন। তিনি বাইরে গিয়ে তার | বিশ্বাসের অনুকূলে কিছু অনুসারী জোগাড় করতে সমর্থ হােন যাদের প্রাথমিক বিশ্বাস ছিল কোন মুসলিম যদি কবীরা গুনাহ করে তবে সে কাফির ও মুসলিমের মধ্যবর্তী স্থানে বিরাজ করবে। অর্থাৎ তারা না হবে | কাফের না হবে মুসলিম। ইতিহাসে এরা মুতাজিল নামে পরিচিতি পায় যার অর্থ হচ্ছে ভিন্নমত পােষণ। করা। ইসলামের বিভিন্ন বিষয়কে যুক্তিসিদ্ধ ব্যাখ্যা প্রদান করে আধুনিক ভাবধারায় দার্শনিক গ্রহণযােগ্যতা আনয়নের চেষ্টা করে মুসলিম ইতিহাসে রঙিন কালির আচড় প্রােথিত করেছিল মুতাজিলরা। এক্ষেত্রে তারা গ্রিক দর্শনের বলয়ে পড়ে যায়। পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন বাণীর যৌক্তিক ব্যাখ্যা প্রদান করতে গিয়ে কখনাে কখনাে তারা কোরআন হাদীসের কিছু বিষয়ের সাথে বিবাদে জড়িয়ে পড়ে। তারা বিশ্বাস করত আল্লাহ এক ও অদ্বিতীয় হিসেবে তার আলাদা করে কোন সিফাত বা গুণাবলি থাকতে পারেনা। যদি আল্লাহকে আলাদা আলাদা গুণাবলি দিয়ে সঙ্গায়ন করা হয় তবে আল্লাহর অস্তিত্বে দুটি সন্তা। ঢুকে যায়। যা তার স্বরূপতার বিপরীত। তারা আরাে বিশ্বাস করত পবিত্র কোরআন কোন শাশ্বত গ্রন্থ নয়, এটি সৃজিত। বেহেশতে আল্লাহর দিদার লাভের ধারণাকেও তারা ভ্রান্ত বলে মত দেয়। মুতাজিল পন্ডিত হিসেবে ওয়াসিল বিন আতা ছাড়াও আবু হ্রদায়েল আল আলাফ, ইব্রাহিম বিন সাইয়ার, মিশার বিন মুতামির ইত্যাদি ব্যক্তিবর্গের নাম বলা যেতে পারে।

মুতাজিলাদের প্রধান প্রধান মতবাদ ইসলামি নিয়মনীতিকে আবেগের সাথে গ্রহণ না করে পৃথিবীতে একমাত্র মুতাজিলারাই যুক্তি ও বুদ্ধি বিচারে বিশ্লেষণ করার দুঃসাহস দেখিয়েছে। ইসলামের বিতর্কিত কিছু বিষয়গুলােকে এবং ক্ষেত্রবিশেষে কিছু।

প্রতিষ্ঠিত সত্যকে কেটেকুটে জটিল বানিয়ে দেয়া এ গােষ্ঠী তাদের নিজস্ব দর্শনের সাথে এরিস্টটলের দর্শন | মিলিয়ে সমালােচকদের সমালােচনার সমূহ আখের যুগিয়েছিল। তাদের পতনের আগ পর্যন্ত তারা যে মতবাদগুলাে জনসমক্ষে প্রকাশ করেছিল তা বেশিরভাগই সহজ সরল মুসলিম নাগরিকদের কাছে দুর্বোধ্য ঠেকলেও ইসলামি দর্শনের নতুন দিগন্তের সূচনা করে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল তারা। আরো বিস্তারিত

হানাফীঃ

হানাফি হল সুন্নি সম্প্রদায়ের মধ্যে একটি মাযহাব। এই মাযহাব অবলম্বী মানুষেরা ইমাম আবু হানিফার অনুসারী। ইমাম আবু হানিফার দুই ভক্ত আবু ইউসুফ ও মুহাম্মাদ আল সায়বানীর অধীনে এই মতবাদ ছড়িয়ে পড়ে। বহু মুসলিম দেশে এই মাযহাব প্রচলিত। ইমাম আবু হানিফার বাস ছিল বাগদাদ শহরে। সৌদি আরবের উত্তরে যে সব দেশে স্থলপথে ইসলাম প্রবেশ করেছিল সে সব দেশে এই মাযহাব প্রচলিত। আরো জানতে

সালাফীঃ

সালাফী কি ? সালাফী শব্দ এসেছে সালাফে সলেহীন থেকে।সাহাবা থেকে শুরু করে তাবে-তাবেঈন পর্যন্ত যারা ছিল ।(৩ মুসলিম জেনারেশন )যারা এই উম্মতের শ্রেষ্ঠ উম্মত তাদেরকে বা তাদের ঐ সময়কাল কে সালাফে সলেহীন বলে।অর্থাৎ যারা কোরআন ও সহী হাদীস সরাসরি মেনে চলে সাহাবা থেকে তাবে-তাবেঈনদের মত করে [1] তাদেরকে সালাফী বলে।

সালাফীদের দাওয়াতের লক্ষ্যঃ- • ইসলাম সম্পর্কে মানুষকে সঠিক জ্ঞান দেওয়া। • মানুষদেরকে কোরআন ও সহী হাদীসের পথে আহবান করা। • বিদয়াত ,শিরক থেকে মানুষদেরকে সাবধান করা এবং তা থেকে মুক্ত করা। • হাদীস কেন ও কিভাবে যয়ীফ ,জাল ও সহী হয় মানুষের কাছে পৌছে দেওয়া। • সকল মুসলিমদেরকে বিভিন্ন দলে বিভক্ত না হয়ে কোরআন ও সহী হাদীসের উপর আমল করার জন্য দাওয়াত দিয়ে থাকে।

সালাফীদের মুলনীতিঃ- ১।একমাএ অনুসরনীয় ইমাম ও নেতা হচ্ছেন মোহাম্মদুর রাসু্লুল্লাহ সাঃ। ২।সকল প্রকার সমস্যার সমাধানে কোরআন ও সহী হাদীস অনুসারে করতে হবে। ৩। কোরআন ও সহী হাদীসে না পেলে সাহাবাগনের সিদ্ধান্ত গ্রহন করতে হবে। ৪।সাহাবাগনের সিদ্ধান্তে বা ইজমাই না থাকলে সে সকল বিষয়ে কোরআন ও হাদীস কে ভিত্তি করে আলেমগন ইজতিহাদ (শরীয়ত গবেষণা) করবেন,কোরআন বা সহী হাদীস বিরোধী ইজতিহাদ হলে চলবে না। ৫।কোনভাবেই ধর্মীয় ব্যাপারে দলিল ছাড়া কারো উক্তির অনুসরন করা চলবে না। আরো এখানে

হাম্বলিঃ

ইমাম আহমদ বিন মুহাম্মাদ বিন হাম্বল আবু আবদুল্লাহ আল-শাইবানী (৭৮০-৮৫৫ খ্রিস্টাব্দ/ ১৬৪-২৪১ হিজরী) ছিলেন একজন বিখ্যাত ইসলামি ব্যক্তিত্ব, ইসলামি আইন এবং হাদিস বিশারদ। ইসলামের প্রচলিত চার মাযহাবের একটি হাম্বলী মাযহাব তারই ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের ভিত্তিতে গঠিত। মুসলিম বিশ্বে ইমাম আহমদ শাইখুল ইসলাম উপাধিতে পরিচিত। ইমাম আহমদের সংকলিত হাদিসগ্রন্থ মুসনাদকে তার মহতী। বিস্তারিত এখানে[2]

শাফেঈঃ

আবু আবদিল্লাহ মুহাম্মাদ ইবন ইদরিছ আল-শাফিঈ হলেন একজন ফিলিস্তিন-আরব মুসলমান তাত্ত্বিক, লেখক এবং পন্ডিত যিনি ইসলামের অন্যতম সেরা আইনবিদ হিসাবে পরিচিত। তিনি ইমাম শাফেয়ী নামে বেশি পরিচিত । তাকে শায়েখ আল-ইসলাম হিসাবেও সম্বোধন করা হয় এবং তিনি ইসলামের প্রধান চারটি মাযহাবের একটি শাফি'ঈ মাযহাবের প্রবক্তা। তিনি ছিলেন ইমাম মালিক ইবনে আনাসের অন্যতম সেরা শিক্ষার্থী এবং তিনি নাজারাহ-এর গভর্নর হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

সময়পেলে বাদবাকীগুলো দেয়ার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ

তথ্যসূত্রঃ
মুসলিমদের মধ্যে কোন দল সঠিক ?

ফুটনোটগুলি

[1] আহমদ বিন হাম্বল - উইকিপিডিয়া

[2] আহমদ বিন হাম্বল - উইকিপিডিয়া