এস্তেখারার নামাজ
সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহনের আমল।
𝌆 এস্তেখারা কি?
এস্তেখারা ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল।
আভিধানিক বা শাব্দিক অর্থ কল্যাণ প্রার্থনা বা কোন বিষয়ে কল্যাণ চাওয়া।
দুরাকাত নামায ও বিশেষ দুয়ার মাধ্যমে আল্লাহর তায়া’লার নিকট পছন্দনীয় বিষয়ে মন ধাবিত হওয়ার জন্য আশা করা। অর্থাৎ, দুটি বিষয়ের মধ্যে কোনটি অধিক কল্যাণকর হবে এ ব্যাপারে আল্লাহর নিকট দু’রাকায়াত সালাত ও এস্তেখারার দুয়ার মাধ্যমে সাহায্য চাওয়ার নামই এস্তেখারা।
—(ইবনে হাজার, ফাতহুল বারী শরহু সহীহিল বুখারী)
মানুষ বিভিন্ন সময় একাধিক বিষয়ের মধ্যে কোনটিকে গ্রহণ করবে সে ব্যাপারে দ্বিধা-দন্ধে পড়ে যায়।
কারণ, কোথায় তার কল্যাণ নিহীত আছে সে ব্যাপারে কারো জ্ঞান নাই।
তাই সঠিক সিদ্ধান্তে উপণিত হওয়ার জন্য আসমান জমীনের সৃষ্টিকর্তা, অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যত সকল বিষয়ে যার সম্যক জ্ঞান আছে, যার হাতে সকল ভাল-মন্দের চাবী-কাঠি সেই মহান আল্লাহর তায়ালার নিকট উক্ত বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহনের জন্য সাহায্য প্রার্থনা করতে হয়। যেন তিনি তার মনের সিদ্ধান্তকে এমন জিনিসের উপর স্থীর করে দেন যা তার জন্য উপকারী।
যার ফলে তাকে পরবর্তীতে আফসোস করতে না হয়।
যেমন : বিয়ে, চাকরী, সফর ইত্যাদি সে বিষয়ে এস্তেখারা করতে হয়।
চাকুরী, বিবাহ-শাদী, সফরে গমন, বা অন্য কোন বৈধ কাজের পূর্বে এস্তেখারা করলে পরে আর আক্ষেপ করতে হবে না, ইনশা আল্লাহ।
এস্তেখারা করা। -বিয়েতে অবশ্যই এস্তেখারা করা উচিত।
𝌆 ইসতিখারার ফলাফল কিভাবে পাবো? :
কোনো কোনো ব্যক্তিকে বলতে শোনা যায়, ইসতিখারা করার পরে মানুষের অন্তর একদিকে ঝুঁকে যায়। অন্তর যেদিকে ঝোঁকে, সে কাজের সিদ্ধান্তই নিতে হয়। হাঁ, অনেকসময়ই অন্তরে এই ঝোঁক সৃষ্টি হয়। কিন্তু তা কোনো জরুরি বিষয় নয়। একান্ত অন্তর কোনো দিকে যদি না ঝোঁকে, বরং তাতে দোদুল্যমানতা থেকেই যায়, তখনও ইসতিখারার উদ্দেশ্য অর্জিত হয়ে যায়। কেননা ইসতিখারা করার পরে আল্লাহ তাআলা বান্দার জন্য সে ফায়সালাই করে, যা তার জন্য কল্যাণকর। এরপর অবস্থাই এমন সৃষ্টি হয়ে যায় এবং তা-ই সংঘটিত হয়, যার মধ্যে বান্দার জন্য প্রভূত কল্যাণ লুকায়িত রয়েছে। প্রথম থেকে সে বিষয়ে তার ধারণাও থাকে না। কখনো মানুষ কোনো এক পথকে খুব উত্তম মনে করে, কিন্তু হঠাৎ দেখা যায়, সেই পথে অনেক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়ে যায়। আল্লাহ তাআলা বান্দাকে সেই পথ থেকে সরিয়ে নেন। ইসতিখারার পরে আল্লাহ তাআলা আসবাব-উপকরণগুলোকে এমনভাবে সৃষ্টি করে দেন, তখন তা-ই ঘটে, যার মধ্যে বান্দার জন্য কল্যাণ লুকায়িত রয়েছে। এখন কল্যাণ কিসের মাঝে? মানুষ তা জানে না, কিন্তু (ইসতিখারার মাধ্যমে) আল্লাহ তাআলা তার জন্য কলাণ নির্ধারিত করে দেন।
স্বপ্নের মাধ্যমেই ফলাফল বা দিক নির্দেশনা পাওয়া যায়, বৈধ কাজের সিদ্ধান্ত গ্রহনের ব্যাপারে।
যদি ভালো স্বপ্ন দেখেন, সরাসরি দিক নির্দেশনা পান অথবা ঘুম থেকে উঠার পর মন-মেজাজ অনেক ভালো থাকে বা ফুরফুরে থাকে, তবে আপনার জন্য বিষয়টি মঙ্গলজনক হতে পারে আর যদি এগুলির বিপরীত হয় তবে বিষয়টি অমঙ্গলজনক হতে পারে।
(স্বপ্নের ব্যাখ্যা অবশ্যই একজন ‘আলেমের মাধ্যমে যাচাই করে নিতে হবে।)
তবে, সিদ্ধান্ত গ্রহনের ক্ষেত্রে স্বপ্নই একমাত্র নিয়ামক নয়।
স্বপ্ন সবসময় দেখা না-ও যেতে পারে। স্বপ্ন দেখাটা অনেক ক্ষেত্রেই তাক্বওয়া এবং আমলের মজবুতির উপরে নির্ভর করে।
অর্থ্যাৎ, আল্লাহর সাথে আপনার সম্পর্ক ভালো থাকলে স্বপ্নের মাধ্যমে একটা দিক-নির্দেশনা পেতে পারেন।
নয়তো, বিভিন্নভাবে আল্লাহর কাছ থেকে সাহায্য পেতে পারেন।
যেমনঃ কাজটি হাসিলের পথ সহজ হয়ে যাওয়া, কাজটি করার ব্যাপারে মনের মাঝে তাগিদ অনুভব করা ইত্যাদি।
🔰 এস্তেখারার ধাপ :
শাইখ আব্দুল নাসির জাংদার মতে, এস্তেখারার ধাপ ৩ টি।
- নিজের বিবেক-বুদ্ধিকে কাজে লাগিয়ে একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছানো।
- এস্তেশারা বা অভিজ্ঞ মুরুব্বী/অভিভাবকদের সাথে পরামর্শ করা।
- এস্তেখারার নামাজ, দু’আ ও প্রার্থনা।
এস্তেখারা করার হুকুম :
যা সহীহ বুখারীর হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।
আল্লাহ তায়া’লা বলেন, “আর তুমি সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে মানুষের সাথে পরমর্শ কর। অতঃপর আল্লাহর উপর ভরসা করে (সিদ্ধান্তে অটল থাক)।
আল্লাহ ভরসাকারীদেরকে পছন্দ করেন।“
আল্লাহ তায়া’লা আরো বলেন, “তোমরা স্বীয় প্রতিপালককে ডাক, কাকুতি-মিনতি করে ও সংগোপনে।“
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “আদম সন্তানের সৌভাগ্যের বিষয়সমূহ থেকে একটি হল এস্তেখারা করা ও আল্লাহর ফয়সালার উপর সন্তুষ্ট থাকা। আর, মানুষের দুর্ভাগ্য হল এস্তেখারা না করা ও আল্লাহর ফয়সালার উপর অসন্তুষ্ট থাকা।“
𝌆 এস্তেখারার ব্যাপারে কয়েকজন সাহাবা ও বুজুর্গের মন্তব্য :
(১) উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) বলেন, “আমার সকালটা আমার কাঙ্ক্ষিত অবস্থায় না কি অনাকাঙ্ক্ষিত অবস্থায় হল তা নিয়ে আমি ভাবি না।
কারণ, আমি জানি না কল্যাণ কোথায় নিহিত আছে; যা আমি আশা করি তাতে না কি যা আমি আশা করি না তাতে।”
(২) সাদ ইবনে আবী ওয়াক্কাস (রাঃ) বলেন, “আল্লাহর নিকট এস্তেখারা করা আদম সন্তানদের সৌভাগ্যের বিষয়। অনুরূপভাবে আল্লাহর ফয়সালায় সন্তুষ্ট থাকাও তাদের সৌভাগ্যের বিষয়।
পক্ষান্তরে আল্লাহর নিকট এস্তেখারা না করা আদম সন্তানদের দূর্ভাগ্যের বিষয় অনুরূপ ভাবে আল্লাহর ফয়সালায় অসন্তুষ্ট হওয়াও তাদের দূর্ভাগ্যের বিষয়।”
(৩) ইমাম নওবী (রহঃ) বলেন, “আল্লাহ তায়ালার নিকট এস্তেখারা করার পাশাপাশি অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ভাল লোকদের পরামর্শ গ্রহণ করা দরকার। কারণ, মানুষের জ্ঞান-গরীমা অপূর্ণ। সৃষ্টিগতভাবে সে দূর্বল।
তাই যখন তার সামনে একাধিক বিষয় উপস্থিত হয় তখন কি করবে না করবে, বা কি সিদ্ধান্ত নিবে তাতে দ্বিধায় পড়ে যায়।”
৪) শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রহঃ) বলেন, “সে ব্যক্তি অনুতপ্ত হবে না যে স্রষ্টার নিকট এস্তেখারা করে এবং মানুষের সাথে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নেয় এবং তার উপর অটল থাকে।”
৫) কাতাদা (রহঃ) বলেন, “মানুষ যখন আল্লাহ তায়ালা সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে পরষ্পরে পরামর্শ করে তখন আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে সব চেয়ে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছার তওফীক দেন।”
𝌆 এস্তেখারা করার নিয়ম বা পদ্ধতি :
(১) নামাযের ওযুর মত করে ভালোভাবে ওযু করতে হবে।
(২) এস্তেখারার উদ্দেশ্যে দু’ রাকায়াত নামায পড়তে হয়।
এ ক্ষেত্রে সুন্নত হল, প্রথম রাকায়াতে সূরা ফাতিহার পর সূরা কাফিরুন (কুল আইয়োহাল কাফিরূন) এবং দ্বিতীয় রাকায়াতে সূরা ফাতিহার পর সূরা ইখলাস (কুল হুওয়াল্লাহু আহাদ) পড়া।
(যদি আপনি এই আশংকা করেন যে, এস্তেখারার নামাজ পড়ে ঘুমালে ঘুম থেকে উঠে আর বেতর পড়ার সুযোগ না-ও পেতে পারেন, তবে আগে বেতর পড়ে নিলে অসুবিধা হবেনা।
যেহেতু বেতর ওয়াজিব, নফলের জন্য তো আর সেটা কাযা করা যাবেনা।)
(৩) নামাযের সালাম ফিরিয়ে আল্লাহ তা’আলার বড়ত্ব, ও মর্যাদার কথা মনে জাগ্রত করে একান্ত বিনয় ও নম্রতা সহকারে আল্লাহর প্রশংসা ও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপর দুরূদ পেশ করার পর নিম্নোক্ত দুয়াটি পাঠ করা।.
𝌆 এস্তেখারার নামাজের পর দোয়া :
তিনি বলেন, রসূল (সাঃ) প্রত্যেক কাজে আমাদের এস্তেখারা করা সম্পর্কে এমন ভাবে শিক্ষা দিতেন যেভাবে কুরআনের সূরা শিক্ষা দিতেন।
তিনি বলতেন, তোমাদের কেউ যখন কোন কাজ করার করবে তখন সে দুরাকাত নফল নামাজ আদায় করবে,
ﺍَﻟّﻠﻬُﻢَ ﺇِﻧّﻲِ ﺃَﺳْﺘَﺨِﻴْﺮُﻙَ ﺑِﻌِﻠْﻤِﻚَ ﻭَ ﺃَﺳْﺘَﻘْﺪِﺭُﻙَ ﺑِﻘُﺪْﺭَﺗِﻚَ ﻭَﺃَﺳْﺄَﻟُﻚَ ﻣِﻦْ ﻓَﻀْﻠِﻚَ ﺍﻟْﻌَﻈِﻴْﻢِ ﻓَﺈِﻧَّﻚَ ﺗَﻘْﺪِﺭُ ﻭَﻟَﺎ ﺃَﻗْﺪِﺭُ ﻭَ ﺗَﻌْﻠَﻢُ ﻭَﻟَﺎ ﺃَﻋْﻠَﻢُ ﻭَﺃَﻧْﺖَ ﻋَﻠَّﺎﻣُﺎﻟْﻐُﻴُﻮْﺏِ ، ﺍَﻟّﻠﻬُﻢَ ﺇِﻥْ ﻛُﻨْﺖَ ﺗَﻌْﻠَﻢُ ﺍَﻥَّ ﻫﺬَﺍ ﺍﻟْﺎَﻣْﺮَ ﺧَﻴْﺮٌ ﻟِﻰْ ﻓِﻲْ ﺩِﻳْﻨِﻲْ ﻭَﻣَﻌَﺎﺷِﻰْ ﻭَ ﻋَﺎﻗِﺒَﺔِ ﺍَﻣْﺮِﻯْ ﻓَﺎﻕْﺩِﺭْﻩُ ﻟِﻲْ ﻭَﻳَﺴِّﺮْﻩُ ﻟِﻲْ ﺛُﻢَّ ﺑَﺎﺭِﻙْ ﻟِﻲْ ﻓِﻴْﻪِ ،ﻭَ ﺍِﻥْ ﻛُﻨْﺖَ ﺗَﻌْﻠَﻢُ ﺍَﻥَّ ﻫﺬَﺍ ﺍﻟْﺎَﻣْﺮَ ﺷَﺮٌ ﻟِﻰْ ﻓِﻲْ ﺩِﻳْﻨِﻲْ ﻭَﻣَﻌَﺎﺷِﻰْ ﻭَ ﻋَﺎﻗِﺒَﺔِ ﺍَﻣْﺮِﻯْ ﻓَﺎﺻْﺮِﻓْﻪُ ﻋَﻨِّﻰْ ﻭَﺍﺻْﺮِﻓْﻨِﻰْ ﻋَﻨْﻪُ ﻭَﺍﻗْﺪِﺭْ ﻟِﻰَ ﺍﻟْﺨَﻴْﺮَ ﺣَﻴْﺚُ ﻛَﺎﻧَﺜُﻢَّ ﺍَﺭْﺿِﻨِﻰْ ﺑِﻪ
দোয়ার মধ্যে যখন ﻫﺬَﺍ ﺍﻟْﺎَﻣْﺮَ বলবেন, তখন সেই কাজের কল্পনা করবেন যে কাজের জন্য এস্তেখারা করা হচ্ছে এবং দু’আর শেষেও নিজের প্রয়োজনের কথা ব্যক্ত করবেন।
(নামাজ আদায়ের পর, মনোযোগের সাথে ৩ বার নিচের এই দোয়া পাঠ করবেন)।
‘আল্লাহুম্মা ইন্নি-আসতাখিরুকা বি-ইলমিকা ওয়া আসতাকদিরুকা বি-কুদরাতিকা ওয়া আসআলুকা মিন ফাদলিকাল আজিম, ফা-ইন্নাকা তাকদিরু ওয়ালা আকদিরু, ওয়া তা’লামু ওয়ালা আ’লামু ওয়া আন্তা আল্লামুল গুয়ুব। আল্লাহুম্মা ইন কুনতা তা’লামু আন্না হা-যাল আমরা
(এখানে নিজের ইচ্ছা, কাজ বা পরিকল্পনার কথা বলা)
খাইরুল্লি ফিহ-দ্বীনি ওয়া মা’আশী ওয়া আক্বিবাতি আমরী, ফাকদিরহুলী ওয়া-ইয়াসসিরহু লী, ছুম্মা বা-রিক লী ফীহি, ওয়া ইন কুনতা তা’লামু আন্না হা-যাল আমরা
(এখানে নিজের ইচ্ছা, কাজ বা পরিকল্পনার কথা বলা)
শাররুল্লী ফি দ্বীনি ওয়া মা’আশী ওয়া আক্বিবাতি আমরি, ফাসরিফহু আন্নি ওয়াছরিফনি আনহু ওয়াক্বদির লিয়াল খাইরা হাইছু কানা ছুম্মা আরদিনি বিহি-।’
(এখানে নিজের ইচ্ছা, কাজ বা পরিকল্পনার কথা বলা)
“হে আল্লাহ! আমি তোমার জ্ঞানের সাহায্য চাইছি, তোমার শক্তির সাহায্য চাইছি এবং তোমার মহান অনুগ্রহ চাইছি। তুমিই শক্তি ও ক্ষমতার অধিকারী, আমার কোন ক্ষমতা নেই। তুমি অফুরন্ত জ্ঞানের অধিকারী, আমার কোন জ্ঞান নেই। তুমি অদৃশ্য বিষয়ে সম্পূর্ণরূপে জ্ঞাত।
হে আল্লাহ! যদি আপনার জ্ঞানে এ কাজটি আমার ইহকাল ও পরকালের জন্য মঙ্গলজনক হয়, তবে এটি আমার জন্য অবধারিত করুন, অতঃপর এতে বরকত দান করুন।
আর যদি আপনার জ্ঞানে এ কাজটি আমার ইহকাল ও পরকালের জন্য অনিষ্টকর হয় তবে এ কাজকে আমা থেকে এবং আমাকে এ কাজ থেকে দূরে রাখুন এবং আমার জন্য মঙ্গল অবধারিত করুন, তা যেখানেই থাকুক না কেন। অতঃপর তাতে আমাকে সন্তুষ্ট রাখুন।
(তিরমিজি ৪৮০ ইবনু মাজাহ (১৩৮০,রিয়াদুস সলিহীন ৭২২)
নামাজ ও দুয়ার পর, মোনাজাত শেষে পাক-পবিত্র বিছানায় অযু অবস্থায় শুয়ে যিকির করতে করতে, দরুদ শরীফ পড়তে পড়তে আর আপনি যেই বিষয়ের ব্যাপারে এস্তেখারা করছেন সে বিষয়টা মাথায় রেখে ডান কাতে কেবলামুখী হয়ে (পশ্চিম দিকে মুখ করে) ঘুমাতে হবে।
নিদ্রা থেকে জাগ্রত হওয়ার পর অন্তর যে বিষয়টির প্রতি দৃঢ়ভাবে সায় দিবে, সেটিকেই মঙ্গলজনক মনে করতে হবে।
যদি এক দিনে কিছুই অনুভব করা না যায় এবং মন কোন দিকেই সায় না দেয় তবে ক্রমাগত সাত দিন (প্রয়োজন হলে) এ আমল করলে ইনশাআল্লাহ সেই কাজের ভালো–মন্দ সম্পর্কে অবশ্যই জানা যাবে। [সুত্রঃ দুররে মুখতার]
𝌆 যে কোন কাজে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছার দুটি উপায় :
প্রথমত : আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নিকট এস্তেখারা র সালাতের মাধ্যমে কল্যাণ প্রার্থনা করা।
কারণ, তিনি অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যত সম্পর্কে সব চেয়ে ভাল জানেন।
তিনি সব চেয়ে চেয়ে বেশী জ্ঞাণ রাখেন মানুষের কল্যাণ কোথায় এবং কোন পথে নিহিত আছে।
দ্বীতিয়ত : অভিজ্ঞ, বিশ্বস্ত এবং জ্ঞানী লোকের পরামর্শ গ্রহণ করা।
আল্লাহ তায়ালা এ ব্যাপারে বলেন, “সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে তাদের সাথে পরামর্শ করুন।”
𝌆 পরামর্শ আগে না এস্তেখারার নামায আগে..?
এ ব্যাপারে আলেমগণের মাঝে মতোবিরোধ রয়েছে।
তবে সবচেয়ে সঠিক হল, আল্লামা মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল ইসাইমীন (রহঃ) এর মত যা তিনি রিয়াদুস সালিহীনের ব্যাখ্যা গ্রন্থে প্রাধান্য দিয়েছেন।
তা হল, আগে এস্তেখারার সালাত আদায় করতে হবে।
কারণ, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
ﺇِﺫَﺍ ﻫَﻢَّ ﺃَﺣَﺪُﻛُﻢْ ﺑِﺎﻷﻣْﺮِ ﻓَﻠْﻴَﺮْﻛَﻊْ ﺭَﻛْﻌَﺘَﻴْﻦِ ….
“তোমাদের কেউ কোন কাজের মনস্থ করলে সে যেন, (সালাতুল এস্তেখারার) দু’রাকায়াত সালাত আদায় করে….।” এখানে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্ব প্রথম সালাতুল এস্তেখারা আদায় করার কথা বলেছেন।
𝌆 এস্তেখারা প্রসঙ্গে লক্ষনীয় কিছু
১) ছোট-বড় সকল বিষয়ে এস্তেখারা করার অভ্যাস গড়ে তোলা ভাল।
২) দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করুন, আল্লাহ আপনাকে যে কাজ করার তাওফীক দিয়েছেন তাতেই আপনার কল্যাণ নিহীত রয়েছে।
তাই একান্ত মনোযোগ সহকারে স্থীর চিত্তে এবং আল্লাহর মহত্ব ও বড়ত্বের কথা স্বরণ করে তার নিকট দুয়া করুন।
৩) খুব তাড়াহুড়া বা একান্ত জরুরী প্রয়োজন না হলে যে সকল সময়ে সাধারণ নফল নামায পড়া নিষিদ্ধ সে সকল সময়ে সালাতুল এস্তেখারা আদায় করা থেকে বিরত থাকুন।
তবে তাড়াহুড়া থাকলে নিষিদ্ধ সময়গুলোতেও তা পড়া যাবে।
৪) মহিলাদের ঋতুস্রাব বা সন্তান প্রসব জনিত রক্ত প্রবাহের সময় সালাতুল এস্তেখারা আদায় করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
তবে, এমতাবস্থায় নামায না পড়ে শুধু এস্তেখারা র দুয়াটি পড়া যাবে ।
৫) এস্তেখারার দুয়া মুখস্ত না থাকলে দেখে দেখে তা পড়তে অসুবিধা নেই।
তবে মুখস্ত করার চেষ্টা করা ভাল।
৬) এস্তেখারা করার পর তার উদ্দিষ্ট বিষয়ে স্বপ্ন দেখা আবশ্যক নয়।
স্বপ্নের মাধ্যমেও সঠিক জিনিসটি জানতে পারে আবার স্বপ্ন ছাড়াও মনের মধ্যে সে কাজটির প্রতি আগ্রহ বা অনাগ্রহ তৈরি হতে পারে।
৭) উক্ত বিষয়ে সিদ্ধান্তে উপনিত হলে আল্লাহর উপর ভরসা করে দৃঢ়ভাবে কাজে এগিয়ে যান।
পিছুপা হবেন না বা হীনমন্যতায় ভূগবেন না।
আল্লাহ তায়ালা বলেন: “আর যখন সিদ্ধান্ত গ্রহন করে ফেল তখন আল্লাহর উপর ভরসা কর।”
৮) সালাতুল এস্তেখারা পড়ার পরও সঠিক সিদ্ধান্তে উপণিত না হতে পারলে একধিকবার তা পড়া জায়েয আছে।
৯) এস্তেখারা র দুয়াতে যেন অতিরিক্ত কোন শব্দ যোগ না হয় বা সেখান থেকে কোন শব্দ বাদ না যায় সে দিকে লক্ষ্য রাখুন।
বরং হাদীসে বর্ণিত শব্দাবলী যথাযথভাবে পড়ার চেষ্টা করুন।
১০) অনেকের মনে একটি প্রশ্ন দেখা দেয় আর তা হল:
একাধিক বিষয়ের জন্য কি একবার এস্তেখারা করাই যথেষ্ট না প্রত্যেকটি বিষয়ের জন্য পৃথকভাবে করতে হবে? এক্ষেত্রে বলব যে, প্রতিটি কাজের জন্য পৃথকভাবে এস্তেখারা করা উত্তম।
তবে একবার এস্তেখারা করে দুয়ায় সকল বিষয়ের নিয়ত করলেও যথেষ্ট হবে।
১১) যে বিষয়ে আপনি সিদ্ধান্ত নিতে চান সি বিষয়ে অভিজ্ঞতা সম্পন্ন, সৎ ও বিশ্বস্ত ব্যক্তির পরামর্শ গ্রহণ করুন।
সেই সাথে সালাতুল এস্তেখারা ও আদায় করুন।
১২) এক জনের পক্ষ থেকে আরেকজন সালাতুল এস্তেখারা আদায় করতে পারবে না।
তবে সাধারণভাবে তার কল্যাণের জন্য দুয়া করতে পারে।
যেমন, মা-বাবা তাদের সন্তানের কল্যাণের জন্য নামাযের বাইরে কিংবা নফল নামাযে সাজদাহ রত অবস্থায় এবং তাশাহুদের দুরুদ পাঠের পরে দুয়া করতে পারে।
১৩) অন্যায় বা হারাম কাজে এমন কি মাকরূহ কাজেও এস্তেখারা করা জায়েজ নাই।
𝌆 একটি ভুল ধারণা :
এস্তেখারার জন্য কি ঘুমাতে হয়?
এই আমল করার জন্য শরীয়তে নির্দিষ্ট কোনো সময় নেই।
রাত বা দিনের যেকোনো সময় তা করা যায়।
কিন্তু অনেকে মনে করে, এস্তেখারার জন্য ঘুমাতে হয় কিংবা রাত্রি বেলায় ঘুমানোর আগেই শুধু এস্তেখারা করা যায়।
আবার অনেকে মনে করে, স্বপ্ন দেখলেই এস্তেখারা পূর্ণ হবে।
আসলে এর কোনোটিই এস্তেখারা র জরুরি কোনো বিষয় নয়; বরং রাত-দিনের যে সময় নামায পড়া যায় তখনই দুই রাকাত নামায ও নির্দিষ্ট দুআটি পড়ে এস্তেখারা করে নেওয়া যায়।
তবে, রাতে করার ব্যাপারে একটু গুরুত্ব দেয়ার কারণটা হল, দিনে মানুষ সাধারণত ব্যস্ত থাকে তাই মন দিয়ে করাটা সবসময় সম্ভব হয়না আর রাতে সব কাজ সেরে মন দিয়ে আমলটা করতে পারা যায়।
স্বপ্নের ব্যাপারটাও হল এই, স্বপ্নে ঐ ব্যাপারটার পক্ষে বিপক্ষে কিছু দেখলে সিদ্ধান্ত নেয়াটা আপনার জন্য বেশি সহজ হবে।
আর এস্তেখারা করার পর না ঘুমানো হলে আপনার মন হয়ত যে কোন একদিকে ঝুঁকতে পারে কিন্তু এটা বুঝতেও আপনার বেগ পেতে হতে পারে।
ইসতিখারার কোনো সময় নির্ধারিত নেই
কেউ কেউ মনে করেন, ইসতিখারা সর্বদা রাতে শয্যাগ্রহণের সময়ই করতে হয়, কিবা এশার নামাজের পরেই করতে হয়। এমন কোনো কিছুই জরুরি নয়। বরং যখনই সুযোগ হয়, এই ইসতিখারা করে নেয়া যায়। না রাতের কোনো শর্ত আছে, আর না দিনের। না শয়নের কোনো শর্ত আছে, আর না জাগরণের।
স্বপ্ন দেখা জরুরি নয়
কারো কারো ধারণা, ইসতিখারা করার পরে কোনো স্বপ্ন দেখবো, স্বপ্নের মাধ্যমে আমাদেরকে অবগত করা হবে, এই কাজ করো অথবা তা করা থেকে বিরত থাকো। স্মরণ রাখবেন, স্বপ্ন দেখা কোনো জরুরি বিষয় নয়। স্বপ্নে অবশ্যই কোনো নির্দেশনা দেয়া হবে বা অন্তত কোনো একটা ইঙ্গিত দেয়া হবে— এটা আবশ্যক কিছু নয়। কখনো স্বপ্ন আসে আর কখনো তা আসে না।
তোমার জন্য এটাই কল্যাণকর ছিলো
যখন সেই কাজটি হয়ে যায়, তখন কোনো কোনো সময় এমনটা মনে হয়, যা হয়েছে বাহ্যত তা মঙ্গলজনক মনে হচ্ছে না, অন্তরের দাবির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণও বোধ হচ্ছে না। এই অবস্থায় বান্দা আল্লাহ তাআলার কাছে অভিযোগ জানায়, হে আল্লাহ! আমি তো আপনার সঙ্গে মশওয়ারাহ ইসতিখারা করেছিলাম। কিন্তু কাজ তো তা-ই হলো, যা আমার মর্জি এবং তবিয়তের সম্পূর্ণ বিরোধী। যা হলো, বাহ্যত তা-তো মঙ্গলজনক মনে হচ্ছে না। এই প্রসঙ্গে আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. বলছেন, আরে বোকা! তুই তোর সীমাবদ্ধ বিবেক দ্বারা ভেবে নিয়েছিস, তোর জন্য এই বিষয়টি মঙ্গলজনক হয়নি। কিন্তু যার ইলমের অধীনে সমগ্র বিশ্বের পরিচালনার জ্ঞান, তিনি ভালো করেই জানেন, তোর জন্য কোনটা কল্যাণকর ছিলো আর কোনটা অকল্যাণকর ছিলো। তিনি যা করেছেন, তোর জন্য সেটাই কল্যাণকর ছিলো। কোনো কোনো সময় তো দুনিয়ায়ই জানা হয়ে যায়, আদতে কোনটা তোর জন্য কল্যাণকর ছিলো আর কখনোবা সারাটা জীবনে ফায়সালাকৃত বিষয়ের যথার্থতা বোধগম্য হয়ে ওঠে না। এরপর যখন আখিরাতে গমন করবি, তখন সেখানে গিয়ে বুঝতে পারবি, আদতে ফায়সালাকৃত বিষয়টিই তোর জন্য কল্যাণকর ছিলো।
ইসতিখারা করার পরে নিশ্চিন্ত হয়ে যাও
এ কারণেই উপরিউক্ত হাদিসে আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. বলছেন, যখন তুমি কোনো বিষয়ে ইসতিখারা করে ফেলো, তখন এ বিষয়ে নিশ্চিন্ত হয়ে যাও যে, এখন আল্লাহ তাআলা যে ফায়সালা করবেন, তা কল্যাণকর ফায়সালাই হবে। হতে পারে— বাহ্যদৃষ্টিতে সেই ফায়সালা তোমার কাছে মঙ্গলজনক বোধ হবে না। কিন্তু পরিণতির বিচারে তা-ই মংগলজনক বলে প্রতীয়মান হবে। সেই ফায়সালার যথার্থতা হয়তো দুনিয়ায়ই বোধগম্য হয়ে যাবে, অথবা আখিরাতে যাওয়ার পরে তো সুনিশ্চিতভাবেই জ্ঞাত হবে যে, আল্লাহ তাআলা যে ফায়সালা করেছিলেন, তোমার ক্ষেত্রে তাই কল্যাণকর ছিলো।
ইসতিখারাকারী কখনো ব্যর্থ হয় না
অপর এক হাদিসে রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন—
ما خاب من استخار، وما ندم من استشار
অর্থাৎ যে বান্দা নিজের বিষয়াদিতে ইসতিখারা করে, সে কখনো ব্যর্থ হয় না।
আর যে নিজের কাজকর্মের শুরুতে পরামর্শ করে, সে কখনো অনুতপ্ত হবে না যে, কেনো এ কাজটি করে ফেললাম কিবা কেনো এই কাজটি করলাম না। কেননা সে যা করেছে পরামর্শ করেই করেছে কিবা যা সে করেনি তা পরামর্শক্রমেই করেনি। এজন্য সে কখনো অনুতাপে ভোগবে না।
এই হাদিসে যে বলা হলো, ইসতিখারাকারী কখনো ব্যর্থ হবে না— এর দ্বারা উদেশ্য হলো, ইসতিখারাকারীর পরিণতি অবশ্যই সফলতা ও কামিয়াবি হবে; যদিও কখনো তার মনে এ কথা আসতে পারে যে, যা হলো, বাহ্যত তা তো ভালো বোধ হচ্ছে না। মনে এ কথা জাগা সত্ত্বেও সফলতা ঐ ব্যক্তির নসিবেই জোটবে, যে আল্লাহর তাআলার কাছে ইসতিখারা করে।
আর যে ব্যক্তি পরামর্শ করে কাজ করে, সে কখনো অনুতপ্ত হবে না। কেননা একান্ত যদি সেই কাজটি মন্দ হয়, তখন তার হৃদয়ে এই সান্ত্বনা থাকবে যে, এই কাজ তো আমি আত্মরায়ে হেলায়-খেলায় করে বসিনি, বরং শুভাকাঙ্ক্ষী সুহৃদ এবং বড়দের সঙ্গে পরামর্শ করার পরেই করেছি। এখন বাকিটা আল্লাহ তাআলার ওপর হাওয়ালা, তিনি যেভাবে চান, ফায়সালা করবেন।
এই হাদিসে দুটো বিষয়ের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ যখনই কোনো বিষয়ের সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে দোদুল্যমানতায় ভুগবে, তখন দুটি কাজ করবে— আল্লাহর কাছে ইসতিখারা করবে এবং বান্দাদের সঙ্গে পরামর্শ করবে।
ইসতিখারার সংক্ষিপ্ত দোয়া
ওপরে ইসতিখারার যে সুন্নত তরিকা বিবৃত হয়েছে, এটা তো তখন, যখন ইসতিখারা করার জন্য বান্দার কাছে পর্যাপ্ত সময় এবং সুযোগ থাকবে। তখন দুই রাকাত নামাজ পড়ে ইসতিখারার উপরিউক্ত দোয়া পাঠ করবে। কখনো এমন পরিস্থিতি আসে যে, দুই রাকাত নামাজ পড়ে সেই দীর্ঘ দোয়া পড়ার মতো সময় পাওয়া যায় না, তাৎক্ষণিক কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে নিতে হয়। আচমকা এমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজ সামনে এলে আর দুই রাকাত নামাজ পড়ে উপরিউক্ত দীর্ঘ দোয়া পড়ার মতো সময় না পাওয়া গেলে তখন শুধু রাসুলুল্লাহ সা. নির্দেশিত নিচের দোয়াটি পাঠ করেও ইসতিখারা করা যাবে—
اَللّهُمَّ خِرْ لِيْ وَ اخْتَرْ لِيْ
হে আল্লাহ! আমার জন্য আপনিই পছন্দ করে দিন যে, কোন পথটি নির্বাচন করা উচিত।
শুধু এ দোয়াটি পড়ে নিলেই হবে। এছাড়া আরো একটি দোয়া রাসুলুল্লাহ সা. শিখিয়েছেন—
اَللّهُمَّ اهْدِنِيْ وَ سَدّدْنِيْ
হে আল্লাহ! আমাকে সথিক পথ প্রদর্শন করুন এবং সঠিক পথের ওপর প্রতিষ্ঠিত রাখুন।
[সহিহ মুসলিম, আবওয়াবুয যিকর ওয়াদ দুআ, বাবুত তাআওউয মিন শাররি মা উমিলা]
উপরিউক্ত দোয়াগুলোর মধ্যে সেসময়ে যেটা স্মরণ আসে, তা পড়ে নিলেই ইসতিখারা হয়ে যাবে। আরবি দোয়া যদি একান্ত স্মরণ না আসে, তাহলে নিজের ভাষায় এভাবে দোয়া করে নিলেও হবে— হে আল্লাহ! আমি সিদ্ধানের দোদুল্যমানতায় ভুগছি। আপনি আমাকে সঠিক পথ প্রদর্শন করুন। মুখেও যদি বলার মতো পরিস্থিতি না থাকে, তাহলে মনে মনে এ কথা স্মরণ করবে— হে আল্লাহ! এই সমস্যা এবং পেরেশানি দেখা দিয়েছে। এখন আপনি আমাকে সঠিক পথ দেখিয়ে দিন; যে পথ আপনার সন্তুষ্ট মোতাবেক হবে এবং যাতে আমার জন্য প্রভূত কল্যাণ নিহিত থাকবে।
বিপদাপদ বা দূর্ঘটনা ঘটলেই তাতে হাহুতাশ করার কারণ নেই। কারণ, আমাদের জীবনে এমন ঘটনা ঘটে যা আমরা চাই না কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তার মধ্যেই আমাদের কল্যাণ নিহিত রয়েছে।
আবার অনেক সময় এমন কিছু আশা করি যার মধ্যে হয়ত কোন অকল্যাণ ও ক্ষতি অপেক্ষা করছে।
আমরা কেউই ভবিষ্যত সম্পর্কে জানি না।
আল্লাহ তায়ালা বলেন, “……তোমদের কাছে হয়তবা কোন একটা বিষয় পছন্দনীয় নয়, অথচ তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর।
আর হয়তোবা কোন একটি বিষয় তোমাদের কাছে পছন্দনীয় অথচ তোমাদের জন্যে অকল্যাণকর।
বস্তুতঃ আল্লাহই জানেন, তোমরা জান না।”
—[লেখাটি শেয়ার করে আপনার বন্ধুদের কাছে পৌঁছে দিন। ইন শা আল্লাহ।]