May 3, 2022

নিজ ছেলের আত্নার ভয়ে তাবিজ!!(সত্য ঘটনা)

লেখাঃ Mohammad Ali Johny

"সিফাত।ততকালীন বিডিআর স্কুলের মেধাবী স্টুডেন্ট!! তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ থাকতেন পুরো পরিবার!!তাকে সবসময় কড়াকড়ি মধ্যেই রাখা হতো।এবং কঠিন অনুশাসনে রাখার ফলেই সে অত্যন্ত ব্রিলিয়ান্ট হতে পেরেছে বলে তার পরিবার মনে করে।সিফাত সবকিছুই ছিলো সীমিত!! সময় বেঁধে তাকে সবকিছু করতে হতো!!টিভি দেখা একঘন্টা!!দুপুরে ঘুমানো একঘন্টা! মাঠে খেলা একঘন্টা ইত্যাদি! আমার কাজিন ছিলো!সিফাত কিন্তু কখনোই তার জীবন নিয়ে সন্তুষ্ট ছিলো নাহ।এই হঠাৎ বৃষ্টি পড়লো সবাই দৌড়ঝাঁপ করে বেরিয়ে গেল!!সিফাত বেরুতে পারে নাহ।সন্ধ্যা বেলা কারেন্ট চলে গেল!সবাই বরফপানি,টিলো এক্সপ্রেস ইত্যাদি খেলা মগ্ন হয়ে গেল সিফাত পারতো নাহ।তার মা তাকে মোমবাতি জ্বালিয়ে পড়াশোনা করতে বসিয়ে দিতো!!জীবনের সবচেয়ে দামী সময় বাল্যকালটা সিফাত এভাবেই কাঁটায়! মেট্রিক পরীক্ষার ২ মাস আগেই তার সাথে থাকা সম্পর্ক খারাপ হয়ে যায়।কারন অতি সংক্ষিপ্ত সময়ের বন্ধুত্ব টিকে না।তাছাড়া তার মা তার বাইরে বেরুনো ২ মাসের জন্য নিষিদ্ধ করেন।পরীক্ষা প্রস্তুতি নিয়ে নিজেকে তৈরি করতে তাকে দুনিয়া থেকে বিছিন্ন করে দেয়া হয়।২ মাস এবং পরীক্ষার ১ মাস ২০ দিন সহ প্রায় সাড়ে ৩ মাসে একদিন ও তার সাথে দেখা হয়নি।প্রতিদিন যার সাথে ১ ঘন্টার জন্য হলেও ক্রিকেট খেলতাম তার সাথে সাড়ে ৩ মাস দেখা না হওয়ায় সম্পর্ক পুরোপুরিই শেষ হয়ে যায়।রেজাল্ট এর দিন তার সাথে দেখা হয়।কিন্তু তার সাথে আমরা কেউ কথাই বলিনি!!সে নিজেই এসে তার চমৎকার রেজাল্ট জানিয়ে নিজ বাসায় চলে যায়।তার ফ্যাকাসে মুখ দেখে বুঝে গিয়েছিলাম আমাদের এমন ব্যবহারে কষ্ট পেয়েছে!! এরপরের বছরে আমাদের দেখা হতে লাগলো কালেভদ্রে!! অথচ একই গলিতে থাকি আমরা! যেমন কলেজ এ যাচ্ছি দেখা হয়ে গেল!সদাই কিনতে বাইরে যাচ্ছি দেখা হলো!আমরা ক্রিকেট খেলছি সে আমাদের খেলা দেখে থামলো!একটা দুটা বোলিং করেই অথবা ব্যাটিং করেই চলে যেত। আমাদের এর থেকে ধারনা হয়ে গেল সিফাত আমাদের ছোট করে দেখে!!আমাদের সাথে থাকাটা তার পরিবারের পছন্দ নয় এটা জানতাম। এখন দেখছি সিফাতের নিজেরও পছন্দ নয়!!সিফাত নামের আমাদের একজন ফ্রেন্ড ছিলো আমরা ভুলে গেলাম।ইন্টার এ পড়ার সময় সিফাত একদিন আমার বাসায় উপস্থিত!! আমাকে দেখে নানান কথা জিগ্যেস করলো!!কার কি খবর জিগ্যেস করলো!বাল্যকালের ফ্রেন্ড ছিলো বলেই হয়তো এই সামান্য কথায় তার ওপর জমে থাকা ক্ষোভ মুহুর্তে উবে গেল!!সিফাত এর আমার বাসায় আসার কারন সে আমার বড়বোনের কাছে পড়তো।বড়বোন তাকে পড়ানো শেষ করলেই সিফাত আমার বোনের সাথে আমাদের বাসায় আসতো।এসে কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে(ঠিক আধঘণ্টা)চলে যেত।দীর্ঘ ৫ মাস এটাই চলতে থাকলো!একই গলিতে আমার বোনকে বাসায় পৌঁছে দেয়ার মানে ছিলো নাহ!অথচ সিফাত প্রতিদিনই এ কাজটা করতো!আমি মনে মনে ভাবতাব হয়তো আমার সাথে আড্ডা দিতে পারে এর জন্যই অদ্ভুত একাজটা করতো!না হলে কেউ একই গলিতে কাউকে বাসা পর্যন্ত পৌঁছে দেয়???
চলবে....

নিজ ছেলের আত্মার ভয়ে তাবিজ ২

"আমাদের ছোট বেলার সিফাত আর এ সিফাত এ যথেষ্ট পরিবর্তন লক্ষনীয়।আগে চুপচাপ শান্ত ভদ্র মার্জিত ছিলো।কিন্ত এখন একবার কথা বলতে শুরু করলে শেষই হয় নাহ।তাছাড়া কাপড় পড়ার ভঙ্গিতে এসেছে পরিবর্তন। প্রতিদিনই আমার বোন কে ছাড়তে বাসায় আসা সপ্তাহে ৭ দিনই পড়তে চাওয়া এসব আমাকে অন্যকিছু ভাবতে বাধ্য করতো যদি নাহ আসল রহস্য ধরতে পারতাম।আমার বোন আমাকে জানায় সিফাত এর মতোন শান্ত ছেলের পরিবর্তন এর কারন গুলো!!সিফাত দের বাসা তখন তিন তলা ছিলো। সে বাসার নিচ তলায় উঠেন একটি পরিবার। সিফাতের বাবা বাড়িওয়ালা হিসেবে মারাত্মক কঠিন!!কড়া অনুশাসন ফলো করতে ভাড়াটিয়াদের।তবু যেহেতু নতুন ভাড়াটিয়া তাই তাদের এসবে অভ্যস্ত হতে সময় লাগে।যেমন পানি শেষ হয়ে গেলে পাম্প ছাড়ার জন্য বাড়িওয়ালাকে অনুরোধ, মেইন গেট তালা মারা চাবির জন্য বাড়িওয়ালার কাছে যাওয়া!!ছাদে কাপড় দিতে হবে ইমার্জেন্সি গেট খুলে দিতে বাড়িওয়ালার কাছে অনুনয় করা এসব কাজই করতেন ভাড়াটিয়ার একমাত্র কন্যা লাবনী!!প্রতিদিন কমপক্ষে চার বার সিফাতদের ফ্ল্যাটে আসা করে লাবনী।এবং বাড়িওয়ালার বড় ছেলে হিসেবে সিফাত প্রতিবার সমস্যার সমাধান করতো লাবনীর!!ঘটনাক্রমে লাবনী আবার আমার বড়বোনেরই ক্লোজ ফ্রেন্ড!! আমার বড়বোন প্রতিবার টিউশনি শেষে লাবনীর সাথে আড্ডা দিয়ে বাসায় ফিরতো!!বলা বাহুল্য আমার বোনকে ছায়ার মতোন অনুসরণ লরা সিফাত তাদের আড্ডায় থাকতো!!একদিন সিফাত আমার বোনকে জানায় সে লাবনীকে বিয়ে করতে চায় তাকে ভালোবাসে!!আমার বোন আকাশ থেকে পড়েন!!সিফাত মেয়ের চেয়ে ১০ বছরের ছোট!!এটা অসম্ভব তাকে হাজারো বার বুঝন সিফাত নাছোড়বান্দা!! লাবন্য কে বিয়ে করবেই!!আগে প্রপোজ করবে পরে পারিবারিক ভাবে বিয়ে করবে!!আমার বোন কয়েকদিন বুঝিয়ে হাল ছেড়ে দেয়।গান শোনা,গান গাওয়া,প্রেম ভালোবাসা নিয়ে নানান কথা,ডায়লগ,রোমান্টিক ছবির গল্প বলা এক নতুন সিফাত কে দেখলাম আমরা!!যে সিফাতের সাথে জোর করেও কথা বলা যেত না সেই সিফাতই সেধে এসে উপরোল্লিখিত বিষয়ক কথায় মশগুল হতো!!শুনেছি মেয়েটি নাকি বিষয়টি বুঝতে পেরেছে!এবং সিফাত কে বিশেষ পাত্তা দিচ্ছে নাহ।সিফাত বেচারা নির্লজ্জের মতোন আচরন করতে লাগলো!!আমার বোন মারফত জানতে পারি লাবন্যদের ফ্ল্যাটে যখনতখন নানান বাহানায় আসতে চায় সিফাত!এসে আজাইরা বিষয় নিয়ে কথা বলতে শুরু করে!আর একবার আর যাওয়ার নাম মুখে আনে নাহ।যতক্ষণ তার মা কর্কশ স্বরে ডাকে ততক্ষণই লাবন্যদের ফ্ল্যাটেই থাকে।তার জ্বালায় অতিষ্ট হন লাবন্যের পরিবার!! মুখ ফুটে কিছু বলতেও পারতেন নাহ।সিফাত কে নাকি মুখের ওপর চলে যেতে বললেও সিফাত চলে যেত নাহ।যেমন একদিন লাবন্যের আম্মা সিফাত কে বলেন বাবা তুমি যে প্রতিদিন আমাদের ফ্ল্যাটে আসো আমরা তিনজন মা মেয়ে থাকি মানুষ এটাকে খারাপ চোখে দেখবে!!তুমি দয়া করে এভাবে এসো নাহ।বাবা তোমার নিজেরও বদনাম হবে আমাদেরও বদনাম হবে!!কি দরকার বদনাম হওয়ার??তাছাড়া তোমার তো মনযোগ দিয়ে পড়াশোনা করা উচিৎ!! এ কথা বলার পরের দিন থেকে সিফাত আসবে মনে করা লাবন্যের পরিবার পরেরদিন থেকে সিফাত কে ১ ঘন্টা আগেই আসতে দেখে!!লাবন্যের পরিবার সিফাত কে নির্লজ্জ, বেহায়া মানুষ হিসেবে সেদিন থেকেই গন্য করে!!এদিকে সহজ সরল মনে নিজের ভালোবাসার মানুষটিকে দেখতে যাওয়া সিফাতের কাছে এসব অপমান কিছুই ছিলো নাহ!!তার লাবন্যকে একটু দেখলেই অন্যরকম লাগে!!একবার যদি বিয়ে করতে পারে ব্যস!!কঠিন অনুশাসন এ চলা সিফাত এর জীবন এলোমেলো করতেই যেন লাবন্যের আগমন হয়!!এদিকে পুরো এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে সিফাত লাবন্যের প্রেমের কথা!!এলাকার মানুষের জানার কারন হলো সিফাত নিজেই!!

চলবে....

নিজ ছেলের আত্মার ভয়ে তাবিজ ৩

"লাবন্যের পিছু পিছু ঘুরাঘুরি এলাকাবাসীকে জানিয়ে দেয়।দেখতে দেখতে একটা মেধাবী স্টুডেন্ট কেমন আজব হয়ে ওঠে।তার পরিবার তাকে আগের মতোই অনুশাসনে রেখেছে কিন্তু বাইরের সিফাত সম্পর্কে তার পরিবার এর ধারনা ছিলো না।তারচে অত্যন্ত সিনিয়র মেয়েটা যে তাকে পাত্তাই দিচ্ছে নাহ এবং তাকে সর্বক্ষণ এড়িয়ে চলছে সেটা তার মাথায়ই ঢুকছে নাহ।আর বেচারাকে এ কথা বুঝানোর মতোন বন্ধু কই?কঠিন অনুশাসন এ বড় হওয়ার ফলে তার ক্লোজ ফ্রেন্ড গড়ে উঠেনি। তাছাড়া ছোট বেলায় কঠিন অনুশাসন এ অনেকেই বড় হয়।কিন্তু একটা সময় গিয়ে ছাড় দিতে হয়।কিন্তু সিফাত স্কুল, কলেজ,ভার্সিটি সব জায়গায়ই একই অবস্থায় ছিলো।অতি সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্যই আজ তার মনের কথা বলার মতোন মানুষ নেই।বেচারা আমার বোনের সাথেও এ বিষয়ে আর কিছু বলতে পারতো নাহ।এভাবে চলতে থাকায় হয়তো বেচারা বুঝে গিয়েছে লাবন্যের ব্যপারে যা করার তার একাই করা লাগবে।কেউ তাকে পরামর্শ দেবার নেই।এর জন্য অবশ্য কাউকে দোষ দিয়েও লাভ নেই।বন্ধু গড়ে উঠেনি কারন পরিবার থেকে কারোর সাথে ঘনিষ্ঠ হওয়া বারন ছিলো!!পরিবার কেও দোষ দিয়ে কি লাভ??আজকাল যতো কুকর্ম হয় বন্ধ মহলে!!কি দরকার বাবা বন্ধু বান্ধব এর??একাই ১০০ ভালো নাহ??তবে মাঝে মাঝে একাকীত্ব খারাপ লাগে ভীষন!!কিন্তু এখন আর সে কষ্ট নাই।কারন একবার যদি লাবন্যকে বিয়ে করতে পারে ব্যস!!দুজনেই সুখে জীবন কাটিয়ে দিবে!!তবে লাবন্য কে জানাতে হবে!! সে তাকে অসম্ভব ভালোবাসে সেটা যদি তাকে না জানানো হয় তাহলে কিভাবে?? কিন্তু সিফাত এর আচরণে কি এখনো লাবণ্য টের পায়নি???এদিকে পরিবারের বড় সন্তান লাবন্যকে নিয়ে পরিবার এস স্বপ্ন একেবারে অন্যরকম।তার পড়াশোনা শেষ হলেই তাকে প্রবাসী একজন আত্মীয়ের ছেলের কাছে বিয়ে দিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা বহুবছর আগের।প্রবাসী আত্মীয়ের ছেলে লাবন্যের একটি ছবি দেখেই বিয়ে করতে রাজী হয়ে গেছে!!লাবন্য এটা জানে।তাদের সাথে টুকটাক কথাও হয়।তাছাড়া লাবন্যদের পরিবার এখানে ভাড়া আসার কারন হলো তাদের নিজেদের বাসা তৈরি হচ্ছে। লাবন্যের বাবার পৈতৃক ভিটা হওয়ার একটু ধীরগতিতে নির্মাণ কাজ হচ্ছে তবে আগামী বছরের প্রথম দিকেই তারা নিজেদের বাসায় উঠতে পারবে।পরিবার এর আর্থিক অবস্থা বেশ ভালো।লাবন্যে বাবা সিফাত এর বিষয়টি খেয়াল করছেন।উনি এখানে ভাড়া আসার আগে থেকেই সিফাত কে চিনেন।শান্ত ভদ্র একটা ছেলে।কিন্তু ইদানীং এমন বদলে গেসে যে বলার মত নয়।সেদিন সবাই খেতে বসেছিলো এমন সময় কলিংবেলটা বেজে উঠলো!!উনি উঠে গেট খুলতে যাবেন লাবন্যের মা বারন করলো!!বললো "যেতে হবে নাহ। বাড়ি ওয়ালার ছেলেটা এসেছে!! এমন বিরক্ত করে!!আর তার চোখ ভালো নাহ!!লাবন্যের বাবা খেয়াল করলেন গেট না খোলার পরেও সিফাত বাইরে দাড়িয়েই ছিলো!!আরেকদিনের কথা!!গেট খোলা থাকায় সিফাত এসে পড়লো!!লাবন্যের মা চমকে গেলেন!মহিলা মানুষ কাপড় হয়তো ঠিক ছিলো নাহ তার!সিফাত কে কঠিন বকাবকি করলেন!!তোমার কমনসেন্স নাই??একজনের ঘরে কি করে ঢুকতে হয় জানো নাহ??কাশি দিয়ে আসতে পারো নি??আর কি দরকার তোমার??বারবার এখানে আসো কেন??আরো অনেক কথা বলার পরেও সিফাত নিরুত্তাপ!! তার চোখ কাউকে খুজে বেড়ায়!!লাবন্যের বাবা জানেন তার বড় মেয়ের প্রেমে পড়েছে ছেলেটা!!কিন্ত এ সম্পর্ক কোন ভাবেই মেনে নেয়া সম্ভব নয়!!মেয়েটার বিয়ে বলতে গেলে হয়েই আছে!!তাছাড়া তার মেয়ের চে ছেলেটা অনেক ছোট।তাছাড়া যদিওবা বিয়ে দিতেই হয় তবু লোকে বলবে ভাড়াটিয়া হয়ে বাড়িওয়ালার ছেলের সাথে প্রেম করে বিয়ে করসে!!এখন লাবন্যের বাবা কি করবেন??এ সমস্যা থেকে বেড়িয়ে যেতে হবে।না হলে এসব নিয়ে নানান কেলেংকারী হতে সময় লাগে নাহ....

চলবে

নিজ ছেলের আত্মার ভয়ে তাবিজ ৪

"তাছাড়া সিফাত বাবা মা সম্পর্কে জানা আছে।উনাদের কারোর কাছে বিচার দিলে ছেলেটাকে আস্ত রাখবে নাহ।লাবন্যের বাবার হিসেবে ছেলেটা যা করছে সবই বয়সের দোষ!!এ বয়সে ছেলেরা এমনই হয়।বয়সের সাথে সাথে এসব সমস্যা কেটে যায়।সিফাত ছেলে কিন্তু অমায়িক!! তার সিফাতের মতোন বয়সী মেয়ে হলে একটুও ভাবতেন নাহ।বিয়ে দিয়ে দিতেন।তার স্ত্রী সিফাত কে যেসব বলেন তার চোখে এগুলো এখনো পড়েনি।লাবন্যের বাবা চিন্তা করলেন আসন্ন শবেবরাত এ সিফাত এর সাথে মসজিদে এ বিষয়ে কথা বলবেন।এমন ভাবে বলবেন যেন সাপ ও মরে!!এবং অক্ষত থাকে!!

এদিকে সিফাত লাবন্যের প্রেমে আছন্ন হয়ে রইলো!!কি করে তাকে পাওয়া যায়??তাকে প্রস্তাব দিতেই হবে। তাকে বুঝিয়ে বলতে হবে তাকে ছাড়া বাঁচা অসম্ভব!! আজকে এলাকার একজন ফোনফ্যাক্স দোকানদার বলছিলো সিফাত কে" লাভ নাই ভাই ওর পিছে ঘুইরা!!ওর জামাই আছে!!লন্ডন থাকে!!এ কথা শোনার পর সিফাত এর মনে হচ্ছিল দুনিয়াব্যাপি ভূমিকম্প হচ্ছে!! খালি ভূমিকম্পই নাহ!!আশেপাশে যেন বাজঁ পড়ছে!!সিফাত মনে মনে বলছে একটা বাজ যেন এ দোকানীর ওপর পড়ুক!!চেহারা শরীর লাল হয়ে ওঠা সিফাত এর অবস্থা দেখে দোকানী পরক্ষনেই বলে "আয়হায় ভাই!একি হলো আপনার??আমি তো দুষ্টামী করে বলসি!!সিফাত সাথে সাথে ঠিক হয় এবং আবারো স্বপ্ন দেখতে দেখতে বাসায় ফিরে!!নাহ এভাবে প্রতিদিন স্বপ্ন দেখার চেয়ে স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা জরুরি!! মানলাম তার বিয়ে হয়নি কিন্তু হতে কতক্ষণ?? পুরো দুনিয়ায় কয়জন এমন সুন্দরী হয়??তার যে এতোদিনে বিয়ে হয়নি এটাই সিফাতের কপাল নয়??আল্লাহ লাবন্য কে তারই জন্যে বানিয়েছে এটা সিফাত প্রায় ১০০% নিশ্চিত। সেটা না হলে লাবন্যদের এখানেই কেন আসা হলো??আরো তো অপশন ছিলো ভাড়াবাড়ির??সব রেখে কেন এখানেই আগমন??নিশ্চয় এটা আল্লাহ নির্ধারিত করেছেন এসব!!নাহ দ্রুততম সময়ে লাবন্য কে প্রস্তাব করা লাগবে!!একটা শুভদিন দেখে সরাসরি প্রস্তাবটা দিয়ে দিতে হবে।হাতে সময় খুবই কম!!সামনে শবেবরাত পবিত্র এ দিনটায় বলতেই হবে!!এদিন নাকি মহান আল্লাহ একেবারে ক্লোজেস্ট আকাশে অবতরন করেন!!সিফাত কনফার্ম তার ইচ্ছে সেদিন পূরন হবে।এ উপলক্ষে ২০০ রাকাত নামাজ পড়ার মানত করে নতুন স্বপ্নে বিভোর হলো!!!

এদিকে লাবন্য আর তার মা তার মিলে ঠিক করছেন কিভাবে সিফাত কে সায়েস্তা করা যায়।লাবন্যের মা ঠিক করেছেন তার ছোট ভাইকে আনিয়ে সিফাত কে বকাঝকা করিয়ে এ আপদ হতে রক্ষা পাবেন।এ শবেবরাত এ উনি তার ভাইকে দাওয়াত করে আনিয়েই সমাধান করবেন!!তাছাড়া ভাইকে ভালোমন্দ খাওয়াতে পারবেন!!!

এদিকে সিফাত এর বাবা মায়ের চোখেও বিষয়টি ধরা পড়েছে!! তারা অবাক হয়ে লক্ষ করছেন তাদের বড় পুত্রের আজব পরিবর্তন!! তাদের নিচতলার ভাড়াটিয়ার বড় মেয়ের সাথে এ পরিবর্তন এর গভীর সম্পর্ক আছে!!সিফাত এর মায়ের বিশ্বাস তার ছেলেকে তারচে বয়সে বড় ভাড়াটিয়ার মেয়েই ভুলিয়েছে!! তার ছেলেকে নিজ দায়িত্বে বড় করছেন!!ছেলেকে তারচে বেশি কে চিনে??তবে এখন এ ব্যপারে কি করতে হবে সেটা বাবা মা দুজনই ঠিক করতে পারেন নি!!তবে শেষমেশ তারা ঠিক করলেন সিফাত এর বড়মামা এবং ছোট কাকা কে বাসায় ডেকে এনে বিষয়টি সম্পর্কে জানবেন!!সিফাত তার বড় মামা এবং ছোট কাকার অনেক ভক্ত!!তাদের ডেকে এনে সিফাত এর সাথে কথা বলাবেন এবং এর সমাধান এ দুজনকে দিয়েই করাবেন!!ছুটির দিনেই তাদের দাওয়াত করবেন!!তাছাড়া শবেবরাত এর রাতটা মন্দ নয়!!এ সময় সবাই ফ্রি থাকেন।দাওয়াত ও করলেন এবং সমাধান ও হবে সমস্যার!!!

পুরো সবাই শবেবরাত এ অপেক্ষায় রইলেন!!!

চলবে.....

নিজ ছেলের আত্মার ভয়ে তাবিজ ৫

"আসলে আমাদের পূর্ব পরিকল্পিত কোন কিছুই সহজে পরিকল্পনা মতন হয় নাহ।আপনি প্ল্যান করে রাখলেন একরকম!!কিন্তু শেষ মূহুর্তে সবই ভেস্তে যেতে পারে।লাবন্যর পরিবার,সিফাতের পরিবারের ঠিক করে রাখা কোন কিছুই সফল হলো নাহ!!সবকিছু ধুয়ে মুছে গেল মুষল ধারার বৃষ্টির জন্য!!আর এমন তেমন বৃষ্টি নয়!!পড়ছে যে পড়ছেই!!সাথে দমকা হাওয়ার দাপট!!রাস্তায় মানুষের চলাচল বন্ধ হওয়ারই মতোন।পুরান ঢাকার এ উৎসবের দিন এমন মারাত্মক বৃষ্টি কেউ কখনো দেখেনি!!যেখানে শতশত মানুষের আনাগোনা হয় মানুষজন আত্মীয়ের বাসায় আসা যাওয়া করেন।খাওয়া দাওয়া হয়।হালুয়া রুটির কদর বেড়ে যায়।গভীর রাত পর্যন্ত মানুষের সমাগম হয়!!কিন্তু আজকে একেবারে উল্টো দৃশ্য!! সকাল থেকেই সিফাত এর মনে চরম ফূর্তি!!আজকে যেন ঈদের সকাল!আজকে তার সত্যি সত্যও ঈদের দিন!!আজকেই তার দীর্ঘদিন ধরে বোনা স্বপ্ন সত্যি হবে।সিফাত উঠেই ছাদে গেল!!আকাশ থমথমে!! মেঘ গুলো কালো হয়া শুরু করেছে!!হয়তো বৃষ্টি পড়বে।সিফাত আরো খুশি হয়ে গেল বৃষ্টি হবে বুঝতে পেরে।তার মনের আনন্দ বেড়ে যাওয়ার কারন দুটো!!এক তুমুল বৃষ্টি তার ছোটবেলা থেকেই ভালো লাগে!!দ্বিতীয় কারন হলো কদিন আগেই একটি হাদিসে দেখেছে " বৃষ্টির সময় দোয়া কবুল হয়"মনে মনে গুনগুন করতে লাগলো সিফাত। নাস্তা খেতে খেতে ভাবে এখনই কি একবার লাবন্যের ফ্ল্যাটে যাবে কি নাহ??তবে এ চিন্তা বেশিক্ষণ টিকে নি।আজকে লাবন্যকে প্রপোজ করার আগে কিছু কাজ আছে যেগুলো তাকে করতেই হবে।যেমন ফজরের নামাজটা কালকে জোর করে মসজিদে গিয়েই পড়ে এসেছে। নামাজ পড়তে যাবার সময় লাবন্যের রুমে লাইট জ্বলা দেখে থমকে পড়েছে!!এ সময় লাবন্যের রুমে লাইট জ্বলার কারন কি??এ সময় কি করছে ও??ফোনে কারোর সাথে কথা বলছে নাতো??সত্যি সত্যি ওর বিয়ে ঠিক হয়েছে?? জামাই বিদেশে থাকে বলে এতোরাতে কথা বলছে??জায়গায় দাড়িয়েই সিফাত চিন্তা করতে থাকে!! পুরো শরীর ঘেমে একাকার হয়ে যায়!তাহলে সেদিন ফোনের দোকানদার ঠিকই বলেছিলো??সিফাতের কি উচিৎ হবে লাবন্যে জানালায় কান লাগিয়ে শোনা সত্যিই কি কথা বলছে কি নাহ??সিফতা এগিয়েই যাচ্ছিলো কি দারওয়ান এর ডাকে পরিকল্পনা বাদ দিয়ে নেমে যায়।দারওয়ান গেট খুলে অপেক্ষায় আছে সিফাত এর!!মসজিদে যাওয়ার পথ থেকে নামাজ পর্যন্ত সিফাত লাবন্যকে নিয়েই ভাবতে থাকলো!!এমনও কি হতে পারে নাহ লাবন্য ভুলে লাইট না নিভিয়েই ঘুমিয়ে পড়েছে??এমনও হতে পারে আজকে লাবন্যও নামাজের জন্য উঠেছে! কে জানে প্রতিদিনই উঠে হয়তো আজকে সিফাত দেখলো!!নাকি কোন বিপদ হলো??অসুস্থ হয়ে পড়লো নাতো??একজনের ডাকে সিফাত এর বিরক্ত হয়!!সিফাত এর পাশে দাড়ানো মুসল্লী তাকে প্রায় ঝাড়ি দিয়েই বলেন "কিরে ভাই??কি করলা??পুরো জামাত হয়ে গেল তুমি দেখি নড়চড় নাই??নামাজ তো পড়লাই নাহ আমাদের জামাত ও নষ্ট করেছো!!সিফাত ভীষন লজ্জায় পড়ে যায়!!একি সর্বনাশের কথা??সে মসজিদে এসে জামাতে দাড়ালো কবে মনে করতে পারলো নাহ!!এতটুকু মনে আছে মসজিদে লাইট জ্বলছে সিফাত এসে জামাত এর অপেক্ষা করতে লাগলো।যেহেতু ২০ মিনিট জামাতের বাকি তাই মসজিদে বসেছিলো!!এরই মধ্যে জামাত কবে শেষ হলো তার মাথায় আসেনি!!ইতোমধ্যে পুরো মসজিদের মুসল্লীরা তার দিকে বিস্মিত চোখে তাকিয়ে আছেন!!যেন সে পাগল!মুসল্লীররা ফিসফিস করে কি জানি বলাবলি ও করছিলো!!সিফাত নিজে নিজেই সুন্নাত, ফরজ পড়ে বাসায় রাওনা দিলো!!মসজিদে মানুষ ও আজব।মানুষ একটু বেখেয়াল হতে পারে নাহ??এমন করে বলার অথবা দেখার মতন তো কিছু হয়নি!!সিফাত পুরোপুরি ঠিক করে ফেলেছে লাবন্যর জানালায় কান পাতবেই!সে কারোর সাথে কথা বলছে কি নাহ চেক না করা অব্দি তার ঘুম হবে নাহ!!সিফাত লাবন্যের রুমের সামনে এসে দেখে লাইট বন্ধ!! সিফাতের মন থেকে বিশাল পাথর যেন নেমে গেল!!তার আম্মা তার জন্য দাড়িয়ে ছিলেন!!তাকে দেখে তার মা ভীষন অবাকই হলেন!কারন সিফাতের পায়ে জুতা নেই!!তার কড়া গলায় বললো" কি ব্যপার??জুতা কি করেছিস??সিফাত নিজের পায়ে তাকিয়ে অবাক হয়!!কিন্তু তার স্পষ্ট পড়ছে নাহ জুতা কি মসজিদে রেখেই চলে এলো নাকি মসজিদে পড়ে যায়নি????তার কি মাথা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে তাহলে??সিফাত চিন্তা করে নাহ মাথা খারাপ হওয়া নিয়ে।একবার যদি লাবন্য কে পেয়ে যায় সব ঠিকঠাক হয়ে যাবে।সিফাত জোহরের নামাজ পড়ার জন্য নেমে যায়!!কিন্তু পুরোপুরি আর যেতে পারেনি!!কারন প্রচন্ড ঝড় তুফান শুরু হয়ে যায়!!এ ঝড় তুফানে ছাতা নিয়েও কেউ বেরুতে পারবে নাহ!!তাই ঝড় থামার অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই!আবারো নিজের ফ্ল্যাটে এসে পড়ে!!এই ওঠা নামার সময় একবারও কিন্তু লাবন্যের সাড়া শব্দ পাওয়া যায়নি!!অসুবিধা নাই আজকে সময় হলেই সিফাত যেভাবেই হোক তার মনের কথা লাবন্যকে বলে দিবেই!এই ঝড় তুফান না কমলে অবশ্য মুশকিল! কারন সবাই যার যার ঘরে বন্দি থাকবেন।লাবন্যের বাবা থাকলে লাবন্যের সাথে কথা বলার সুযোগ পাওয়া যাবে নাহ!তাই সিফাত তার ঘরে এসে অপেক্ষা করে বৃষ্টি তুফান কমার!অপেক্ষা করতে করতে ঘুমিয়ে পড়ে!!এদিকে ঝড় তুফান কমার বদলে তিনগুন বেড়েই গেল!!সিফাত বেঘোরে ঘুম....

চলবে

নিজ ছেলের আত্মার ভয়ে তাবিজ ৬

"সিফাতের যখন ঘুম ভাঙলো তখন এশার আজান হচ্ছে!! বাইরে তুমুল ঝড় বৃষ্টি!! ভয়াবহ অবস্থা!! রাস্তায় নাকি পানি উঠে একাকার অবস্থা। সিফাত উঠে এই ঠান্ডাতেও গোসল করে।নতুন পানজাবী পায়জামা পড়ে।ঘরেই নামাজ পড়া শেষ করে খাবার খেতে বসে।খাবার খেয়ে কুরআন পড়তে বসে যায়।কুরআন তেমন রেগুলার না পড়লেও সে কুরআনের অনেক আমল জানে।বাংলা অর্থ সহ এ কুরআনে শানে নূযুল সহ বিভিন্ন আয়াতের আমল লিখা আছে।যেমন একটি আয়াতের মাঝখানে দুবার আল্লাহ লেখা আছে।প্রথমবার আল্লাহ লেখার পরেই ওয়াকফ এরপর আবারো আল্লাহ!! এ দুবার আল্লাহ পড়ার মাঝখানে যে দোয়া করা হয় সেটাই কবুল হয়। এবং এটি পরিক্ষিত আমল।সিফাত নিজেও এর সুফল পেয়ে বহুবার।আজকে কিছুক্ষণ কুরআন তেলাওয়াত করেই সে আয়াতে মনে মনে দোয়া পড়লো!!এবং কুরআন, জায়নামাজ রেখেই ঘর থেকে উদ্ভ্রান্তের মতোন বেড়িয়ে গেল!!তার বাবা মা খেয়াল করেনি তার এভাবে বেরিয়ে যাওয়াটা!!তার ছোট ভাই খেয়াল করেছিলো সেদিন!!তার ছোট ভাইয়ের বর্ননা অনুযায়ী সেদিন তার ভাইয়া এভাবে বেড়িয়ে গেছিলো যে মনে হয় কোথাও আগুন লাগলে যেভাবে দমকল বাহিনীর লোকজন ছুটে যায়!!তার সেদিনের ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়া দেখলে বাইরের কেউ নিশ্চিত পাগল ভাবতো!!সিফাত লাবন্যদের ফ্ল্যাটে পৌঁছাতেই দেখে লাবন্য ছাতা নিয়ে নিচে নামছে!!সিফাত ও তার পিছু পিছু নিচে নামে!!লাবন্যকে পেছন থেকে থামতে বলে!লাবন্য পাত্তা না দিয়ে নামতেই থাকে!!বাড়ি পেরিয়ে পাশের মুদি দোকানে যায় লাবন্য।সিফাত কাক ভেজা হয়ে সেখানে উপস্থিত হয়!!ঘটনাক্রমে আমরা উপস্থিত ছিলাম বিশাল দোকানটায়!!আরো কিছু লোকজন ছিলো এলাকার।লাবন্য এবং সিফাত সবার এটেনশান কেড়ে নেয়!!প্রচন্ড বৃষ্টি এতোক্ষণ ধরেই হচ্ছিল!! এখন আরো বেড়ে গেসে!সিফাত আমাদের দিকে একপলক তাকালো মাত্র!!এরপর লাবন্যকে তোতলানো অবস্থায় বলতে লাগলো "লাবন্য তোমার সাথে জরুরি কথা আছে আমার" লাবন্য বললো "বলেন কি কথা??সিফাত জবাব দিলো " এখানে তো বলা যাবে নাহ"লাবন্য উত্তরে বললো "নাহ নাহ যা বলার এখানেই বলেন"আর কি আশ্চর্য আপনি আমার পেছন পেছন এভাবে এলেন কেন??রাস্তা ঘাটে এসব কি শুরু করলেন ইত্যাদি!!লাবন্য চেচিয়ে কথা গুলো বলাতে এই বৃষ্টিতেই আরো লোকজন জমা হলো!!সিফাত লাবন্যের প্রশ্নের উত্তর না দিয়েই বললো" লাবন্য তোমাকে আমি অনেক ভালোবাসি!! তোমারে ছাড়া আমি বাঁচবো নাহ"আই লাভ ইউ"সিফাত এর একথা গুলো একেবারেই হাস্যকর স্টাইলে ছিলো!!সিফাত এর মতন অবস্থা দেখে আমরা তো অবাক!!লাবন্য জবাবে পাশে নর্দমা পরিষ্কার এর জন্য রাখা ঝাড়ু দেখিয়ে বললো"এটা দেখসোস??এটা দিয়া মাইরা তর পাগলামি ছাড়ামু!!বদ্ধ উম্মাদ কোথাকার!!নিজের দিকে দেখসোস একবার??তর সাহস কতবড়??আমাকে এ কথা বলার মতন সাহস কই পাইলি??মারাত্মক একটা সিচুয়েশন হয়ে যায় সেখানে।সিফাত যেভাবে কথা বলে দাড়িয়ে ছিলো লাবন্যের জবাব শোনার পরেও একই ভাবে দাড়িয়ে রইলো!!যেন ওখানেই জমে গেছে!!এলাকার দুয়েকজন মুরুব্বি এলেন!!লাবন্যের চেচামেচি শুনেই এলেন লাবন্য তাদের কাছেও বলতে লাগলো"জানেন নাহ আমরা কত কষ্টে আছি এদের বাসায়!!এ ছেলেটা ড্রাগ এডিক্ট।নেশা পানি বোধহয় করে।দিনরাত আমাদের ঘরে এসে বসে থাকে।তার চোখ ভালো নাহ।তার জ্বালায় আমরা টিকতে পারি নাহ।এতো ফাউল একটা ছেলে!মোটকথা লাবন্য সিফাতের নামে এমন এমন কথা বলে যা বলার মতোন নয়।সিফাত কে পুরো মজলিসে অপমান করা হয়।আমরা নিরুপায়! কারন লাবন্য যা যা বলছে সেটা সত্য মিথ্যা জানি নাহ!!সিফাত প্রতিবাদ করছে নাহ তাই হতেই পারে লাবন্যের কথাই সত্য!!কিন্তু তাই বলে সিফাত ড্রাগ এডিক্ট এটা ডাহা মিথ্যা।তাছাড়া এলাকার মানুষ কারোরই পক্ষ না নিয়ে যার যার বাসায় চলে যেতে বলে।লাবন্য বাসায় ফিরে যাবার ৫ মিনিট পরেই সিফাত বিধস্ত অবস্থায় বাসায় ফিরে!!একদিক থেকে সিফাত এর কপাল ভালো বলতে হয়।এতোবড় ঘটনা ঘটলে কিন্তু তার বাবা মা কেউ নেমে আসেন নি!!যদি তারা জানতে পারেন এ ঘটনা তাহলে সিফাত কে আস্ত রাখবে নাহ।আমরা নিজেরা এ বিষয়টি নিয়ে কথা বলাবলি করতে থাকি।বৃষ্টি ও থেমে যায়।এ ঘটনার কিছুক্ষণের মধ্যেই লাবন্যে মামা কে হন্তদন্ত হয়ে লাবন্যের বাসায় ছুটে যেতে দেখা যায়!!আমরা বুঝে যাই ঘটনা এখানেই শেষ হয়নি!!আরো ঝামেলা বাড়বে!!তবে আমরা ফজরের নামাজ পড়তে যাবার আগে পর্যন্ত সবকিছু শান্তই দেখে গেসি।লাবন্যের মামা সহ আরো কয়েকজন লোকজন এসেছে কিন্তু ঘন্টার পর ঘন্টা কোনই সাড়াশব্দ এলে সিফাতদের বাসায় থেকে!!এমনকি ফজরের নামাজে সিফাতের বাবা এবং ছোট ভাইকে মসজিদে দেখা গেল!তাদের চেহারায় দুশ্চিন্তার কোন ছাপই দেখলাম নাহ।আসলে আমরা ঘটনা বড় হবে বলে মনে করলেও আসলে ওটার ইতি দোকানেই হয়ে গেসে!!হয়তো সিফাত লাবন্যকে সরি বলে বিষয়টি রফাদফা করে ফেলেছে!!নামাজ পড়ে বাসায় ফিরে যে ঘুমাতে যাবো তখন সিফাতদের বাসা থেকে চিৎকার চেচামেচির শব্দে পুরো গলি কেঁপে উঠে.....

চলবে

নিজ ছেলের আত্মার ভয়ে তাবিজ ৭

(কুফরী কালাম)

"সিফাত পাথর হয়ে গেসে!!নিচে যা ঘটলো রাতে সেটার রেশ না কাটতেই ফজর নামাজ শেষ হতে না হতেই লাবন্যের পরিবার এলো বিচার নিয়ে!!তাদের অভিযোগ সিফাত তাদের মেয়ের জীবন অতিষ্ঠ করে ফেলেছে! এবং আজকে পুরো এলাকার সবার সামনে লাবন্য কে প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছে!!প্রথমে সিফাতের মা মানতেই নারাজ ছিলেন তার ছেলের নামে আসা এ অভিযোগ!! কিন্তু সিফাত সবার সামনে স্বীকার করায় সিফাত এর পরিবারের আর করার কিছুই ছিলো নাহ!!লাবন্যের পরিবার যেতে বললো এরপর এমন সমস্যা হলে সিফাত এর হাত পা ভেঙে হয় থানায় নয়তো মানুষিক হাসপাতালে দিয়ে দিবে!!প্রথমবার দেখে ছাড় দিলো!! সিফাত এর আম্মার সামনেই সিফাত কে মানুষিক ভারসাম্যহীন!! ড্রাগ এডিক্ট বলে অপবাদ দিলো!!এসব কথা নিয়েই প্রচুর চেচামেচি হয়!! সবাই চলে গেলে পরে সিফাত ধরেই নিয়েছিলো তার পরিবার হয়তো তাকে এখনই বেরিয়ে যেতে বলবে নয়তো মারধর করবে!!কিন্তু সিফাত এর বাবা মা এসবেই কিছুই করেনি।তাদের বিস্ময় এর ঘোরই কাটছিলো নাহ!!তাদের বড় সন্তানকে তারা ছোট সন্তানের চেয়ে বেশি চিনেন!!তাছাড়া মারাত্মক মেধাবী ছেলে দু'দিন পর এ্যারোন্টিক্যাল ইন্জিনিয়ারিং এ ভর্তি হবে (কথার কথা)পুরো জীবনে সিফাত লাস্ট কবে সেধে পরিবারের সাথে কথা বলেছে এটা কেউই বলতে পারবে এমন চরিত্রের ছেলে এ হাল!!সিফাতের বাবা মা জানেন ভাড়াটিয়া অনক কথাই বাড়তি বলেছে। কিন্তু এসব কথা আজকে পুরো গলির মানুষ শুনলো!!এতো শাষন করে বড় করা ছেলের জীবনই কি নাহ এমন হলো!!!ছেলের সাথে যে দুটা কথা বলবেন সে উপায় নাই!!সিফাত কে যেভাবে বড় করেছেন তারা তার কাছে গিয়ে ঘটনা সম্পর্কে জিগ্যেস করবেন সে উপায় নাই!!এতোটা ক্লোজ সম্পর্ক বাবা মার সাথে সিফাতের নেই!!কঠিন শাস্তি অবশ্য দিতে চেয়েছিলেন কিন্তু ছেলেটার মারাত্মক জ্বর! তাছাড়া যা হওয়ার সেটাতো হলোই এখন মারপিট করে লাভ নেই!তাছাড়া ছেলে বড় হয়েছে!!

"সিফাত ১০০% শিওর ছিলো আজকে বাবা মা ভয়ানক কিছু শাস্তি দিবেনই!!যে বাবা মা তাকে মাত্র ৫ বছর বয়সেই হাত পা বেঁধে চিনি ছিটিয়ে দিয়ে পিপড়াদের মুখে ফেল দিতো সামান্য ভুলের জন্য ও বাবা মা না জানি আজকে কোন শাস্তি প্রদান করবে!!কিন্তু সিফাতকে কোন কারনে ছাড় দিয়ে দেয়া হয়েছে!! লাবন্যের জন্য মনটা খারাপ হয়।এ কদিন বলতে গেলে লাবন্যই তার জীবনের লক্ষ ছিলো!!হঠাৎ জীবন থেকে কিছু একটা চলে গেল!সিফাত কে ভালোবাসেনা ভালো কথা। এটা বলে দিলেই হতো।কিন্তু পাগল,নেশাখোর বলার দরকার কি ছিলো??এতোটা খারাপ চোখে দেখে তাকে??লাবন্যের মা বললো তার নাকি চোখ খারাপ!!অথচ লাবন্যের মা তো দূরেরই কথা লাবন্যকেই কখনো বাজে চোখে দেখেনি সিফাত!! লাবন্যের ওপর যতোটা না রাগ হয় তারচে বেশি রাগ হয় সৃষ্টিকর্তার ওপর!!কত কিছুর বিনিময়ে লাবন্যকে চেয়েছে সিফাত!শেষবার তো জীবনের সব ভালো কাজের বিনিময়ে চাইলো!! কই কোনই কাজ হলো নাহ!!সৃষ্টিকর্তা সত্যি আছেন তো??সিফাত আফসোস করতে লাগলো মানুষ যদি ভাল্লুক এর মতোন হাইবারনেশন নিতে পারতো!এক ঘুমে ৩/৪ মাস পার করে দেয়া যেত!!সিফাত এর জ্বর কমার কারনেই হোক বা অন্যকারনে সিফাত দূর্বল শরীর নিয়েই নামাজ পড়তে শুরু করে দেয়!!কুরআন শরীফ এবং অন্যান্য যা যা দোয়া কবুলের আমল জানতো করতে লাগলো!!খাওয়া দাওয়া বাদ দিয়ে ইবাদতই করতে থাকলো।তার আগের দোয়ায় কোথাও ভুল ছিলো নিশ্চয়!! আবার নতুন চাওয়া শুরু করলো!!যে কিছুর বিনিময়েই হোক লাবন্যকে চাইই!!টানা ৩ দিন ঘরেই অবস্থান করে কেবল ইবাদত করতে থাকলো!!পুরো পরিবার সিফাত এ আচরণ দেখে বিস্মিত হতবাক হয়ে রইলো!!৪র্থ দিন নিচে নামে সিফাত!!লাবন্যের ফ্লাটে এসে দেখে তালা ঝুলছে!!গেটে সাইনবোর্ড এই ফ্ল্যাট ভাড়া হবে!!মাত্র ৪ দিনে নিঃশব্দে লাবন্যরা চলে গেল!!সিফাত সেদিন ফার্নিচারের টানাটানি আওয়াজ শুনেছে!!কিন্তু নিচে নামে নি!!তার কল্পনায় ছিলো নাহ এতোকিছু হয়ে যাওয়ার পরেও লাবন্যরা চলে যাবে!!সিফাত ভীষণ হতবাক হয়ে শুন্য ফ্ল্যাটের সামনে দাড়িয়ে ছিলো!!তাকে এ অবস্থায় দেখে দারওয়ান এগিয়ে আসে!!সিফাত কে উদ্দেশ্য করে বলতে থাকে "ছোট ভাই এ মেয়েকে পাওয়ার কৌশল আমার কাছে আছে!!বেশি নাহ মাত্র ১ সপ্তাহে এ মেয়ে আপনার বশে চলে আসবে!!সিফাতের ঘোর কেটে যায় দারওয়ান এর কথায়!!লাবন্যকে পেতে সে নিজেকে বিলিয়ে দিতে রাজি!!দারওয়ান কে জিগ্যেস করে কি সে কৌশল??কি উপায়ে তাকে পাওয়া সম্ভব??? দারওয়ান বলে ভাই কিছু খরচপাতি করতে হবে এইযা।সিফাত দারওয়ানকে ওপরে ডেকে নিয়ে গোপনে নিজের জমানো ১০ হাজার টাকা দিয়ে দেয়!!চতুর দারওয়ান পরেরদিন সিফাত কে একটি ১০০ টাকা দামের বই ধরিয়ে দেয়!!সিফাত বইটি লুকিয়ে নিয়ে উপরে উঠতে থাকে আর উত্তেজনায় মনে করতে থাকে যেন বই নয় লাবন্যকেই লুকিয়ে ওপরে নিয়ে যাচ্ছে!! ঘরে গিয়েই দরজা লাগিয়ে বইটি ভালো করে দেখে!!বইটির লেখক এর একটি সাদা-কালো ছবি!!লেংটি পড়া লোকটা বসে আছে একটি হাতে আকা বিশাল গোলকের মাঝে!!লোকটার পেছনে তিনটি ছবিতে আছেন খ্রিস্টানদের জিসু,হিন্দুদের একজন দেবতা,এবং আল্লাহু লেখা ফ্রেম!!যতই ঘোরে থাকুক সিফাত তার বুঝতে একটুও সময় লাগেনি এ বইটা নিষিদ্ধ!! এ বইয়ে নানান কালোজাদু বা কুফরি কালামে ভর্তিই হবে!!বইটা এখনি ফেরৎ দিয়ে আসা দরকার!! এটা ঈমান নষ্ট করে দিবে তার সন্দেহ নাই!!কিন্তু পাতা উল্টাতেই সূচি পত্রে চোখ আটকে গেল!!প্রিয়জন কে বশে আনার অব্যর্থ আমল!!সিফাত আটকে গেল!!তার কিছুক্ষণ আগের চেতনাটা আর থাকলো নাহ!!যেহেতু বৈধ পথে পায়নি তাই অবৈধ পথেই নাহ হয় চেষ্টা করা যাক??পরে না হয় তওবা করা যাবে???ইসলামে তো তওবার চমৎকার সুযোগ আছেই...

চলবে....

নিজ ছেলের আত্মার ভয়ে তাবিজ ৮

(জ্বীনের আগমন)

"ঘরেই উল্টে পাল্টে বইটা দেখলো।এটা সে গভীর রাতে পড়ার জন্য রেখে দিলো।রাতে খাবার এরপর নিজ রুমে এসে রিডিং ল্যাম্প জ্বালিয়ে শুরু হলো তার কালোজাদু চর্চার পড়াশুনা!!প্রিয় মানুষকে বশ করার কৌশল বড়ই বাজে এবং মারাত্মক!! একজন সুস্থ মানুষের পক্ষে কি এগুলা করা সম্ভব??এরচে বরং জ্বীনকে বশে আনার কৌশল বড়ই সোজা!!আচ্ছা জ্বীন ডেকে এনে যদি তাকে দিয়ে উদ্দেশ্য হাসিল করা যায়?জ্বীনেরা তো মানুষের চেয়ে শক্তিশালী হয়।তাদের পক্ষে অনেককিছুই করা সম্ভব।তাছাড়া বইয়ের বলা প্রতিটা নিয়মই যথেষ্ট খারাপ।এবং পড়েই মনে হচ্ছে ভূয়া!!বশ করার উপকরণ গুলোই তো আজব!!যাকে বশ করতে হবে তার জামার টুকরো,মাথার চুল এবং আজেবাজে কিছু জিনিস এর কথা বলা হয়েছে। এসব কালেক্ট করা অসম্ভব। তাছাড়া লাবন্য তাদের বাসায় থাকলে একটা কথা ছিলো।জ্বীন ডাকা এবং বশে আনাই একেবারে সোজা মনে হচ্ছে!! সিফাত জানে এসবের কিছুই হবে নাহ সবই ভূয়া তবু এতোদামে কেনা বইটা এভাবেই ফেলে দেয়ার মানে হয় নাহ।জাস্ট যেগুলো কথা অথবা মন্ত্র বলা লাগবে যেটা ইসলাম সমর্থন করেই নাহ!!৩ টায় শুরু করতে হবে বিষয়টি। সিফাত ৩ টায় অপেক্ষায় থাকলো।তার বাবা মা সিফাত কে চিন্তায় পড়লেন।তাদের বড় ছেলেকে যেভাবেই হোক বর্তমান পরিস্থিতি থেকে উদ্ধার করা লাগবে।তাকে বিয়ে দেয়া যায় কি নাহ এটাও ভাবছেন।সিফাত এর আম্মার ইচ্ছা ছিলো ছেলেটাকে বেদম প্রহার করবেন তাকে শাস্তি দিবেন খুঁজে খুঁজে কোন দূরের হোস্টেল এ ভর্তি করিয়ে এখান হতে সরিয়ে দিবেন কিন্তু এগুলো করতে পারেন নি।ইদানীং এসব ছেলেদের কিছু বলা যায় না।তাছাড়া প্রেমের বিষয়!এটাকে একেবারে আলাদা ভাবে কন্ট্রোল করা লাগবে।আবার সিফাত কে যদি এ ভুলের জন্য শাস্তি না দেয়া হয় তাহলে আবার ওর ছোট ভাই ভবিষ্যতে একই কাজ করতে পারে।সব মিলে গোলমেলে পরিস্থিতি!!তাছাড়া সবচেয়ে কথা হলো আপদটা বিদেয় হয়েছে!! ছেলেটা আপাতত সেইভ।তবে সিফাতকে এমনি এমনি ছাড় দেয়া হবে নাহ।কি শাস্তি দেয়া যাবে এটা ঠিক করতে বেগ পেতে হচ্ছে!! তাছাড়া ছেলেটার এমন বয়স ও হয়নি যে বিয়ে দিয়ে দিবেন!!সিফাতকে নিয়ে তার বাবা মা সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন!!সিফাত সব গুছিয়ে ফেলেছে!! নিজের ঘরে এসে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে অপেক্ষায় আছে ৩ টা বাজার অবশেষে সেই সময়টা চলে এলো!!সিফাত উঠে বসে রিডিং টেবিল এ গিয়ে ল্যাম্প জ্বালিয়ে তার নিষিদ্ধ কার্যক্রম শুরু করে দিলো!!নিয়ম অনুযায়ী কাজ শুরু আগমুহূর্তে একটু অনুশোচনা হলো!!একজন মুসলমান হিসেবে এসব করা কোনভাবেই ঠিক হচ্ছে নাহ।শুধু কি মুসলিম হিসেবে এগুলো খারাপ কাজ??যেকোনো ধর্মের জন্যই তো বিষয়টি জঘন্যতম! তবু সিফাত এর কাছে এ ছাড়া পথ নেই!!সিফাত এরতো মনে হয় লাবন্যই তাকে জাদু করেছে!!তা না হলে তারমধ্যে এমন বিহেভিয়ার আসার কথা নাহ।অলওয়েজ রিজার্ভ মাইন্ডের সিফাত এর পরিবর্তনে সিফাত নিজেই অবাক!!যে মেয়ে তাকে রাস্তায় প্রায় সবার সামনে অপমান করলো!!এবং তার পরিবারের কাছেও তাকে অপদস্ত করলো!সেই মেয়ের জন্যই আজ এ কাজ করতে বসছে সে!!তার নিজের ওপর কি নিয়ন্ত্রণ নাই??নাকি এটাকে তার অবচেতন মন চ্যালেন্জ হিসেবে নিয়েছে!! লাবন্যকে পেতেই হবে না হলে বাঁচা সম্ভব নয়!এসব কি অবচেতন মনেরই খেলা নয়??যাইহোক এটা করে সে সফল হোক বা হউক!!কিছুদিন পরেই রমজান তখনই সে আল্লাহর কাছে তওবা করে নিবে!!এসব থেকে পানাহ চাইবে আল্লাহর কাছে!!মনে মনে নিজের উদ্দেশ্য ঠিক করলো!!এখন যে তদবির করবে সেটা সত্যি সত্যি হলে একজন জ্বীনের আগমন হওয়ার কথা!!জ্বীন চলে এলে কিছু আলামত পাওয়া যাবে।জ্বীন এলে প্রথম কয়েকদিনেই কিছু হুকুমে করা যাবে নাহ!!আস্তে আস্তে জ্বীন দিয়ে কাজ করাতে পারবে এবং নিয়ম অনুযায়ী তাকে চিরবিদায় করা যাবে।বিপদজন হলেও জ্বীনকে বিদায় করে দেয়ার পদ্ধতি দেয়া আছে!সিফাত হাসিই পাচ্ছে!! আবার মনে একটা কৌতূহল জেগেছে!! ঘড়িতে ৩ বাজার সাথে সাথেই বইয়ে লেখা পদ্ধতি ব্যবহার করে বিড়বিড় করে পদ্ধতি অনুসারে মন্ত্র জপতে শুরু করলো!!পুরোপুরি নিয়ম অনুযায়ী সবই করলো!!কিন্তু কিছুই ঘটলো না!!উল্টো ঘেমে একাকার গেল!!ধূর শুধু শুধু গায়ের তাপমাত্রা বেড়ে গেল!!বাজে একটা সস্তার বই তাকে দারওয়ান গছিয়ে দিয়েছে এটাতে আর সন্দেহ নেই!! দুঃখে রাগে সিফাত বইটা ছিড়ে কুটিকুটি করে কমোড এ ফেলে ফ্ল্যাশ চালু করে দিয়ে নিজরুমে ফিরে এসে ঘুমানোর চেষ্টা করলো!!এদিকে বাইরে সম্ভবত ঝড়তুফান হচ্ছে!! তাদের বাসার ডাব গাছটা বাতাসে নড়ে ওঠার শব্দ আসছে!!সিফাত আবারো টয়লেট এ গেল!!ভেন্টিলেটর দিয়ে গাছের দিকে তাকিয়ে দেখলো হ্যা সত্যি সত্যি ঝড় তুফান হবে হয়তো গাছটা কেমন ভৌতিকভাবে দুলছে!!সিফাত গরম উপেক্ষা করেই খাটে গিয়ে ঘুমিয়ে যায়!!স্বপ্নে দেখে ডাবগাছ হতে একজন জটাধারী এলোকেশী একজন ভয়ংকরী মহিলা লাফিয়ে তার ছোট্ট ভেন্টিলেটর দিয়ে টয়লেট এ প্রবেশ করলো!!বন্ধ টয়লেট এর গেট ভেদ করে সরাসরি তার রুমে চলে এলো!!পুরো ঘরে খুবই দ্রুত গতিতে উড়ে বেরিয়ে তার বিছানা পাশে আসতেই আজান হয়!!ভয়ংকরী মহিলা চিৎকার করেই পালিয়ে যায়!!ঘামে জবজবে সিফাত এর ঘুম ভাঙে আজানের আওয়াজ এ!!উঠে স্বপ্নের ব্যখা হিসেবে নিজের করা অপকর্মকেই দায়ী করে!!

চলবে.....

নিজ ছেলের আত্মার ভয়ে তাবিজ ৯

(ডাব গাছ)

"ঘুমের ঘোর পুরোপুরি কাটার পর সিফাত বিছানা হতে উঠে।ঘরে কেমন নর্দমার গন্ধ!!লাইট জ্বালাতেই খেয়াল করে তার ঘরটা কেমন এলোমেলো হয়ে আছে!!যেমন টেবিল ল্যাম্প পড়ে উল্টে আছে!!গুছিয়ে রাখা বইয়ের স্তুুপটাই পড়ে গেছে!!মেঝেতে পড়ে আছে কয়েকটি বই!!সিফাত ওযু করে নামাজ আদায় করলো!!নামাজ শেষে তার মনে হলো আজকে যেটা স্বপ্নে দেখলো ব্যপারটি কি শুধুই স্বপ্ন??নাকি স্বপে দেখা ব্যপার গুলো সত্যি সত্যিই ঘটেছে?? চিন্তায় পড়ে গেল!!সত্যি সত্যি হলে তার সামনে ভয়ংকর বিপদ অপেক্ষা করছে সন্দেহ নেই!!কারন ও জ্বীন আনার তদবির করেই বইটা নষ্ট করেছে!! এখন জ্বীন যদি সত্যিই চলে আসে তা হলে তার পরবর্তীতে কি করতে হবে এবং জ্বীন বিদায় করার নিয়ম সবই অদ্ভুত বইটায় ছিলো!!যেটা কালকে ফেলে দিয়েছে!অবশ্য সমস্যা নেই!!দারওয়ান কে বলে আরেকটা না হয় বই আনানো যাবে।আর এসব কি আজেবাজে চিন্তা তার মাথায় আসছে!!জ্বীনের তদবিরটাই তো ভূয়া!! আসলে স্বপ্নটা তাকে প্রভাবিত করেছে!!এর জন্যই এসব বাজে চিন্তা মাথায় আসছে!!এরচে বরং কুরআন পড়াই ভালো!!উঠে গিয়ে কুরআন আনতে গেল। কিন্তু শুন্য রেহেলটাই দেখতপ পেল!!কুরআনটা সম্ভবত আম্মার ঘরে আছে। আজকে বোধহয় আম্মা উঠেন নি নামাজের জন্য!রাতে খাবারো খাননি।শরীর নাকি ভালো নাহ।কি কি সমস্যার কথা বললেন সিফাত মনোযোগ দিয়ে শুনেনি!!ইদানীং কোনকিছুতেই তার আগ্রহ এবং মনোযোগ নেই!!দিনরাত কাটে লাবন্যের কথা চিন্তা করেই!!এবার পাঞ্জেগানা বই খোঁজ করলো!!এটলিস্ট সূরা ইয়াসিনটা পড়লে মনটা ভালো হবে!!কিন্তু ওই বইটাও পাওয়া গেল নাহ!!মনেও আসছে বইটা কোথায় রেখেছে!!

কি আর করার আছে!!ঘুমিয়ে পড়া ছাড়া উপায় কি??টয়লেট এ গিয়ে তাদের ডাবগাছটা দেখলো!!দিনের ফোঁটা নতুন আলোয় গাছটা কতই নাহ সুন্দর লাগে!!গাছটা ভেন্টিলেটর দিয়ে পুরোপুরি দেখা যায় নাহ।সে ঘর থেকে জলচৌকি এনে ভেন্টিলেটর দিয়ে গাছটা ভালো করে তাকিয়ে দেখতে লাগলো!!কেমন অপার্থিব লাগছে গাছটা কে??অথচ গাছটা নিয়ে কতই নাহ ভয়ংকর স্বপ্ন দেখলো!!আচ্ছা জ্বীনেরা কি গাছে থাকে নাকি??সিফাত এর জানা মতে জ্বীনেরা গাছে থাকে নাহ।জ্বীনেরা গাছে নয় বরং অন্যান্য জায়গায় থাকে বলই শুনেছে!! আর থাকলে সেটা শ্যাওড়া,বট এসব গাছে থাকবে!!,ডাবগাছে তো থাকার কথা নয়।গাছটার সৌন্দর্য আরো দেখতো কিন্তু নিচে লোকজন চলাফেরা শুরু হয়ে গেসে।রোদ ও উঠেছে খুবই!!কি ব্যপার এ ভোরবেলা এতো লোকজন বেরিয়ে পড়লেন কেন??রোদই বা এতো তাড়াতাড়ি উঠে??আসলে ফজরের সময় প্রায়ই উঠলেও আশেপাশের পরিবেশ তেমন দেখা হয় নাহ।উঠে নামাজ আদায় করেই আবার ঘুমিয়ে পড়ে।রোদ কখন উঠে আর মানুষজনের দিন কখন শুরু হয় এসব কখনোই দেখা হতো নাহ।স্কুল লাইফে দেখেছে সেটা অন্য কথা।নাহ আর থাকা যাবে নাহ।সিফাতকে কেউ ভেন্টিলেটর দিয়ে দেখলে নির্ঘাত পাগলই ভাববে!কারন বাথরুমের ভেন্টিলেটর দিয়ে এভাবে তাকিয়ে থাকা কোন সুস্থ মানুষের কাজ নয়। তাছাড়া গলির মানুষজন অন্যকিছু ভেবেও বসতে পারে।কারন আশেপাশে অনেকেরই বাড়িঘর দেখা যায়!!তারা হয়তো ভাববে তাদের বাসায়ই তাকিয়ে আছে সিফাত!! রুমে চলে এসে ঘড়ি দেখে তো চক্ষু চড়কগাছ হয়ে গেল তার!!সোয়া ৯টা বাজে!!!এ কি করে সম্ভব!! টয়লেট যাবার আগে সে ঘড়ি দেখেছে!তখন সোয়া ৫ টা বেজে ছিলো!!৪ ঘন্টা কি করে চলে গেল!! ফাইজলামি নাকি মনে হয় ঘড়িই নষ্ট!চরম অবাক হয়েই রুম থেকে বেরিয়ে অন্য ঘড়ি দেখে সময় একই দেখাচ্ছে!!তার ছোট ভাই কে দেখে ডাইনিং টেবিলে নাস্তা খাচ্ছে!! তার আম্মা বুয়ার সাথে রাগারাগি করছে সেটা শুনতে পায়!!ভীষন অবাক এবং আতঙ্কিত হয়ে যায়!!৪ ঘন্টা ধরেই খালি গাছের দিকে তাকিয়ে ছিলো!!এটা কিভাবে সম্ভব!! নাহ কোথায় কোন সমস্যা হচ্ছে!!সিফাত ঝামেলায় পড়ে গেল নাতো??এদিকে নিচে ময়লাওয়ালা চেচামেচি করছে!!তার বাবার নাম ধরেও ডাকছে!!সিফাতের বাবা চেচিয়ে উত্তর দিলেন!গেট খুলে নামলেন!সবই সিফাত স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছে!! সিফাত হিসাবই মিলাতে পারছে নাহ!৪ ঘন্টা ধরে গাছটার দিকে চেয়েছিলো!!সিফাত এর দরজা নক করলেন তার বাবা!!সিফাত উঠে গিয়ে দরজা খুলে দেখে তার বাবা, মা এবং ভাই দাড়িয়ে আছেন ভীত মুখে!!তার বাবার হাতে একটা পলিথিন এ ছেড়া কুচিকুচি করা কাগজ দেখেও সিফাত এর বুঝতে ভুল হলো নাহ বাবার হাতে ধরা পলিথিনের মধ্যে কাগজের টুকরো গুলোই তার পাঞ্জেগানা কিতাব!!

চলবে...

নিজ ছেলের আত্মার ভয়ে তাবিজ ১০

(মুখোমুখি)

"সিফাত ভাষাই হারিয়ে ফেলল।কিতাবটা তার দাদির দেয় ছিলো!!দাদিকে আমার দিয়েছিলেন উনার শ্বাশুড়ি!! প্রাচীন কিতাবটা তার বড়ই প্রিয় ছিলো!!অনেক যত্ন করে রাখতো সবসময়। সিফাত কে তার বাবা জিগ্যেস করলেন " এটা আমাদের ডাস্টবিন থেকে পাওয়া গেসে।ময়লা ফেলার সময় লোকটা দেখতে পেয়ে আমাকে ডেকে দেখালো।এটা কিভাবে এখানে এলো জানো কিছু??সিফাত মাথা নেড়ে জানালো জানে নাহ!!সিফাত এর বাবা যেন তার উত্তরে সন্তুষ্ট হলেন নাহ।তবে সবাই চলে গেলেন!!সিফাত সত্যি অবাক!!এ কাজটা কে করলো??অনেকক্ষণ ধরে চিন্তা করে কালকের স্বপ্নের সাথে এ কিতাব ছিড়ে কুটিকুটি করার সম্পর্ক আছে বলেই মনে হচ্ছে!! একি সমস্যায় পড়লো!! নিচে দারওয়ান এর খোঁজে গিয়ে তার রুম তালাবদ্ধই পেল!!একজন ভাড়াটিয়া তাকে দেখেই জানিয়ে দিলো দারওয়ান দেশের বাড়িতে গেসে।কি জানি সমস্যা হয়েছে বাসায়।সিফাত পড়লো মহা সংকটে!!দারওয়ান এর কাছে আসার উদ্দেশ্য ছিলো বইটা আবারো আনা যায় কিনা জিগ্যেস করতে!!এদিকে সিফাত এর বাবা মা কিতাব ছেড়ার কাজটা যে তাদের ছেলেই করেছে এটা মনে করলেন।তাদের এটা মনে করার কারন হিসেবে তারা সিফাত এর প্রেমে ব্যর্থ হওয়াটাই হচ্ছে মূল!!ছেলেটার হয়তো আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস চলে যাচ্ছে!! রাগে দুঃখে হয়তো পাপের কাজটা করে ফেলেছে!! তাদের উচিত ছেলেটার সাথে খোলামেলা কথা বলা।তাকে বুঝাতে হবে যা হয়েছে ভালোর জন্যই হয়েছে। এটা নিয়ে পড়ে থাকলে তার শিক্ষা জীবনে প্রভাব পড়বে।মানুষিক সমস্যা হয়ে যাবে ইত্যাদি।ছেলের সাথে এসব বিষয়ে কথা হয়নি কখনোই।তাদের ছেলের সাথে সম্পর্ক একেবারে কঠিন শাষন এর।মেট্রিক পরীক্ষা পর্যন্ত সিফাত কে মারধর করতেন ভুলের জন্য।বকাঝকা তো ছিলো নিত্যদিনের ঘটনা। তারা ছেলেটাকে মানুষ বানাতে কোন কিছুই বাদ রাখেন নি।তাদের শাষনের সুফল ও পেয়েছেন হাতে হাতে!!ছেলে পড়াশোনায় একেবারেই ভালো।তার মতোন স্টুডেন্ট হয় নাহ।এতো হিসাব নিকাশ করে বড় করে তোলা সন্তানই কি নাহ তার মায়ের বয়সী মেয়ের প্রেম এ পড়লো!!তাও আবার বজ্জাত মেয়ে ছেলেটাকে পুরো এলাকায় বদনাম করে দিয়ে পালিয়ে গেল!!নাহ ছেলেকে তারা একান্তে এনে বুঝাবেন।দিনকাল ভালো নয় সিফাত এর বয়সী ছেলেরা ইদানীং এসব প্রেম ভালোবাসায় ব্যর্থ হয়ে নেশায় জড়িয়ে পরে!!আবার কিছু কিছু তো আত্মাহুতি দেয়!!ছেলেটার একটা গতি করার দরকার।তাকে বিদেশে পাঠিয়ে দিলেও হয়।তার অনেক আত্নীয়রাই বিদেশে থাকেন।সময় করে একদিন ছেলের সাথে কথা বলবেন তারা সেটা ঠিক রইলো।

সিফাত নিশ্চিত কালকের স্বপ্নের সাথে কিতাব ছেড়ার অবশ্যই যোগসূত্র আছে।বেচারা নানান চিন্তায় দিনটা পার করলো!!আচ্ছা দেখাই যাক না কি হয়??আজকেও সেইম ঘটনা ঘটবে বলে অবশ্য মনে হচ্ছে না।কিন্তু দারওয়ানটা চলল গিয়ে হলো বিপদ!! দারওয়ান তাকে বিপদে ফেলে পালালো নাহ তো??অবশেষে রাত এলো।চাপা একটা ভয় তার মনে।আজ না জানি কি হয়।সেদিন রাতে কিছুই না ঘটলেও সিফাত মারাত্মক সমস্যায় পরে দুদিন পরই।সেইদিন স্বাভাবিক ছিলো সবকিছু। টয়লেট এ থেকে রেরুনোর পড়েই বাঁধে বিপত্তি!! তার দরজার পজিশন চেঞ্জ হয়ে যায়!!অর্থাৎ ডান দিকে খোলা দরজা খুলছে বা দিকে!!বাইরের দিকে খুলতে হতো এখন খুলতে হচ্ছে ভিতরের দিকে!!এসব হচ্ছেটা কি!মারাত্মক ভয়ে আতঙ্ক নিয়েই আসে ঘুমাতে!!ঘুমিয়ে পড়তে সমস্যা হলেও ঘুমিয়ে পড়ে এসময়।ঘুমে ওদিনের দেখা স্বপ্নই দেখতে পায়!!ডাব গাছ হতে একজন ভয়ংকর মহিলা ভেন্টিলেটর দিয়ে টয়লেট এ আসে!!এরপরই তার রুমে ঘুড়ে বেড়াতে থাকে!!অন্ধকারেও মহিলার ভয়াবহ চেহারা স্পষ্ট দেখতে পায়!!কেমন কুকুরের মতোন চেহারা!!কি বিদঘুটে স্বপ্ন!! এদিকে ঘুম ও ভাঙছে নাহ!!সিফাত স্বপ্নের মধ্যেই ঘুম থেকে উঠার চেষ্টা করতে থাকে!!আজানের অপেক্ষা!! আজান হলেই স্বপ্নের শেষ হবে!!এদিকে মহিলা তার বিছানায় চার পাশে এমন ভাবে ঘুরছে যে তাকে দেখেই সিফাত এর মাথা ঘুরানো শুরু হলো!!স্বপ্নে কারোর মাথা ঘুরায়!!আজান দিলো!!সিফাতের ঘুম ভেঙে গেল!!যাক স্বপ্ন থেকে যে বেরুতে পেরেছে!!ঘরটায় কেমন নর্দমার গন্ধ!!যাইহোক উঠে টয়লেট এ গেল!টয়লেট এ গিয়ে গিয়ে ফ্রেস হলো!!ওজু করলো। টয়লেট থেকে বেরিয়েই জমে গেল!!মহিলা এখনো তার রুমেই!!!হাতে সিফাত এর জায়নামাজ!!!সিফাত দেখতে পেয়ে মহিলা(কে জানে আদৌ মহিলা কি নাহ)তার হাত থেকে জায়নামাজ ফেলে দিলো। এবং দৌড়ে সিফাত দিকে এগিয়ে এলো!!!ভয়ে সিফাত চোখ বন্ধ করে ফেলল!!বুঝতে পারলো তার সমস্ত গা দিয়ে একটা গরম বাতাস চলে গেল!!মনে হচ্ছে জিনিসটা তাকে ভেদ করে চলে গেল!!চোখ খুলে সিফাত আর কিছুই পায়নি রুমে!!!নামাজ বাদ দিয়ে সোজা চলে গেল বাবা, মায়ের রুমে!!তার এ বিপদে একমাত্র তারাই সাহায্য করতে পারবেন এখন এটা সিফাতের বুঝতে বাকি রইলো নাহ!!!এ অবস্থায় বেশিদিন থাকা যাবে নাহ।পাগল হয়ে যাবে। এরচে ভালো বাবা মাকে আজই এখনি নিজের সমস্ত কথা জানিয়ে দেয়াই উত্তম!!

চলবে...

নিজ ছেলের আত্মার ভয়ে তাবিজ ১১

(কাউন্সিলিং)

"দরজা নক করতে হয়নি।বাবা মায়ের রুম খোলাই ছিলো!!তবু দরজায় নক করেই প্রবেশ করলো!!তার মা নামাজ পড়ছিলেন নামাজ শেষে সিফাত আসার কারন জিগ্যেস করতেই সিফাত কান্নায় ভেঙে পড়ে।একেবারে প্রথম থেকে শেষ অব্দি পুরো ব্যপার খুলে বলে সিফাত।তার বাবাও সিফাতের কান্নার শব্দে উঠেছেন।তারা পুরো ঘটনা শুনে স্তব্ধ হয়ে যান।পুরোটা শুনে সিফাত কে তাদের রুমেই শুতে বলেন।যেহেতু এখন কিছুই করা যাচ্ছে নাহ তাই সকালেই যা করার করা হবে।আপাতত সিফাত এর সাথে তার বাবা ঘুমাতে চলে যান।ছোট ভাইকে ডেকে আনা হয় মায়ের সাথে ঘুমানোর জন্য!!তার মা পুরো ঘটনা শুনে ভয় পেয়ে যান।পুরো ফ্ল্যাটে আয়াতুল কুরসি পড়ে তালি বাজিয়ে বন্ধ করেন।সিফাত তার রুমে গিয়ে বাবা মা কে তার সাথে ঘটা ঘটনার জায়গা গুলো দেখিয়ে দেয়।রুমে ঢোকার সাথে সাথেই সিফাত বাবা মাকে বলে ওঠে এখনো কেমন বিকট গন্ধ!!তোমারা পাচ্ছো নাহ স্মেলটা??বাবা তাকে ভরসা দেন সবই ঠিক হয়ে যাবে তুই এখন একটু ঘুমানোর চেষ্টা কর।পরের দিন সবাই একটু বেলা করে উঠেন।উঠেই নাস্তা করতে করতেই সিফাত এর বাবা ঠিক করে ফেলেন সিফাত কে মনোরোগ চিকিৎসক এর কাছে নিয়ে যাবেন।বিকেল এ তাকে সাথে করে নিয়েও যান।সিফাত ভীষন অবাক হয় যখন জানতে পারে তাকে মনোরোগ চিকিৎসক কাছে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে!! তবে তাকে পাগল মনে করছেন বাবা, মা??তবু চুপ করেই থাকে।তাকে এ অবস্থা হতে বের হতেই হবে।তাছাড়া মনোরোগ মানেই তো আর পাগল হয়ে গেছে এমন না।সুন্দর ছিমছাম একটি ক্লিনিক এ গিয়ে মাত্র ১০ মিনিটেই তাদের ডাক পড়ে।একেবারেই স্মার্ট মধ্য বয়স্ক লোকটাই যে ডাক্তার এটা বিশ্বাস করতে সিফাত এর কষ্ট হয়।ডাক্তার তার বাবা মাকে বাইরে অপেক্ষা করতে বলেন।তারা চলে গেলেই উনি সিফাত কে উদ্দেশ্য করে বলেন"দেখ তোমার পুরো ঘটনা সংক্ষিপ্ত ভাবে আমি শুনেছি।তোমার মনে প্রশ্ন আসতে পারে তুমি আমার এখানে কেন এসেছো??আমি প্রশ্নে উত্তর দিচ্ছি।কালকে যখন তুমি তোমার ঘটনা বলার পর তোমার রুমে নিয়ে গিয়ে বাবা, মাকে বললে যে রুমে ভয়াবহ বিকট গন্ধ সেটা তোমার বাবা মা কেউই পাননি। আপাতত এর জন্যই তোমার বাবা মা মনে করছেন তোমার সমস্যাটা আসলে মানুষিক!! এখন আমার কাজ হলো সমস্যা খুঁজে বের করা।এবং তোমার কাজ হলো ঠিক হয়ে যাওয়া।এবার তুমি তোমার পুরো ঘটনা আমাকে খুলে বলতে পারো।কোনকিছু বাদ না দিয়ে বলতে থাকো!!সিফাত পুরো ঘটনা বলতে শুরু করলো।চিকিৎসক মনোযোগ দিয়েই শুনলেন।তাকে কিছু ঔষধ লিখে দিতে দিতেই বললেন "ইলিউশন এবং হ্যালুসিনেশন এর ব্যখা। শোন সিফাত হ্যালুসিনেশন এবং ইলিউশন এর পার্থক্য কি জানো?হ্যালুসিনেশন হলো " দড়ি দেখে সাপ বলে মনে করা।ধরো অন্ধকারে তুমি একটি দড়ি দেখলে। অন্ধকার হওয়ার কারনে তুমি সেটাকে সাপ মনে করলে!!এখন তুমি লোকজন এনে দেখানোর পর তারা সেখানে দড়ি দেখতে পান।তার ইলিউশন হলো ভিকটিম সাপ দেখলো অথচ সেখানে লোকজন গিয়ে দড়ি অথবা সাপ সদৃশ কোন কিছুই পেলেন নাহ!!অথচ ভিকটিম সাপ দেখেছে বলে দাবী করছে!!যাইহোক তোমার সমস্যা একেবারেই সামান্য। আসলে লাবন্য নামক মেয়েটার জন্য তোমার ওপর দিয়ে ভয়ানক ঝড় বয়ে গেছে।এর প্রভাব পড়েছে তোমার মস্তিষ্কে!!এসবের প্রভাবে আমাদের মস্তিষ্কে নানান সমস্যা হয়।আমার মতে তোমারো হয়েছে। আপাতত আমার ব্যবস্থা পত্রেই তোমাকে চলতে হবে।এখানে লিখা ঔষধ সেবনের পাশাপাশি বাকি কাজগুলো করলে তুমি মাত্র কয়েকদিনে সুস্থ হয়ে উঠবে।অবশ্য তুমি সুস্থই আছো।কিন্তু তবুও মনে করো তোমাকে জাস্ট রিলাক্স করতে কয়েকটি ঔষধ এবং নিয়ম লিখে দিলাম এগুলো ফলো করলেই হবে।আমার এখানে আর আসতে হবে নাহ আশা করি!!সিফাত নিজেই পুরো প্রেসক্রিপশন পড়লো!!ডাক্তার সমস্যা সামান্য বললেও প্রেসক্রিপশনে তেমন আভাস পাওয়া গেল নাহ।প্রতিটি ঔষধই ২ এর কোর্স!!এ ছাড়া ৪ টি টেষ্ট এবং ৬ টি কাউন্সেলিং এর কথাই প্রেসক্রিপশন এ লেখা আছে।তবু সিফাত সব মেনে নিলো।বাসায় এসে নিজেকে হালকা মনে হলো!!কেন জানি মনে হচ্ছে সমস্যাটা কেটে যাবে বলে মনে হতে থাকলো!নাহ এবার সুস্থ হলে তাবলীগ এ চলে যাবে বলে স্থীর করলো। মেজাজটাও ফুরফুরে হয়ে উঠলো!!এভাবেই টানা ৫ দিন কেটে গেল।ঔষধ গুলো ভালোই কাজের।এছাড়া একটা কাউন্সেলিং করে তারিখ অনুযায়ী। ৫ দিনে কোনই সমস্যা হয়নি তার।ঔষধ গুলো অনকেই কার্যকর!! তবে সারাদিন ঘুমঘুম ভাব হয়।এবং যেই ঘটনাই ঘটুক না কেন। তার এসবে আগ্রহ নেই।মাথা কেমন যেন ঝিমঝিম করে!!তবে আরাম বোধ হয় খুবই।তবে বিপত্তি বাধে চিকিৎসা চলার ৬ষ্ঠ দিনেই!!এদিন খাওয়া দাওয়া শেষে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ে ঘুমাতে যাবে এমন সময় সময় টয়লেট থেকে খুটখাট আওয়াজ পাওয়া যায়।এরপরই সিফাত কে অবাক করে দিয়ে একেবারে হুট করেই টয়লেট এর দরজা খুলে ঘরে প্রবেশ করে সেই বিভৎস মহিলা!!এরপরই শুরু হয় তার রুমে মহিলার অবাধ বিচরন!! সিফাতের দিকে চেয়ে থেকেই মহিলা পুরো রুমে পায়চারি করতে থাকে!!সিফাত লক্ষ্য করে মহিলা শূন্যে ভাসছে!!একি করে সম্ভব?? সিফাত ঔষধ ঠিকঠাক করেই খেয়েছে। প্রতিটা নিয়মই মেনে চলছে তবু কেন এমন হচ্ছে!!তাহলে কি সত্যি সত্যিই জ্বীন এসে পড়লো??এটা তাহলে মানুষিক সমস্যা নয়????উল্টো আগে স্বপ্নের মাধ্যমে মহিলাটা আসতো!!এবার দেখি সরাসরিই চলে এলো!!তার কোনই ক্ষতি হচ্ছে নাহ ঠিক তবে এ মহিলাকে দেখে যাওয়া একেবারেই অসম্ভব ব্যপার!!সিফাত আয়াতুল কুরসি পড়তে শুরু করলো!! মহিলা প্রথমে থমকে যান ঠিকই এরপরই আবার আগের গতিতে চলতেই থাকেন!!সিফাত এর আয়াতুল কুরসির কোনই প্রভাব মহিলার ওপর পড়ছে নাহ দেখে সিফাত চেচিয়ে পড়তে থাকে!!পাশের রুম থেকে তার বাবা চিৎকার এ চলে আসেন!!সিফাত এর বাবা মায় চলে এলে মহিলা তাদের সামনে হতেই টয়লেট দিয়ে পগারপার হন!!!!

চলবে...

নিজ ছেলের আত্মার ভয়ে তাবিজ ১২

(মার্ডার)

"এটা কোন কথা??সিফাত এর বাবা মায়ের গা ঘেঁষে গেল মহিলাটা অথচ তারা কেউই দেখলেন নাহ??সিফাত থেকে পুরো ঘটনা শুনলেন বাবা মা।ভাবলেন ডাক্তার কে ফোন দেয়া উচিৎ!! উনার থেকে করনীয় জানা দরকার।কিন্তু এতোরাতে কি করে সম্ভব???? যদিও ডাক্তার বলে দিয়েছিলেন যেকোন সময় তাকে ফোন করা যাবে কোনই সমস্যা নেই উনি রিসিভ করবেন।তার বেড এর সাথেই নাকি ফোন ফিট করা!!তবু তারা এতোরাতে ফোন দেয়া সমীচীন মনে করলেন। আজকে আর সিফাত কে তার রুমে ঘুমাতে হচ্ছে নাহ।তাকে তাদের রুমেই নিয়ে এলেন।এরপর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সবাই ঘুমিয়ে পড়েন।।

পরের দিন সকালে সিফাত এর বাবা সিদ্ধান্ত নেন এবার তাদের আত্মীয়দের মধ্যে কিছু লোকদের এ বিষয়টি জানাবেন।কারন এমন পরিস্থিতি তারা একা সামাল দিতে পারবেন বলে মনে হয় নাহ।তাদের পরিবারে অনেক গন্যমান্য ব্যক্তি আছেন।যেমন সিফাত এর ফ্যামিলিতে ডাক্তার আছেন দুজন, একজন আছেন আলেম!!এছাড়াও অনেক মুরুব্বি আছেন যারা সহায়তা করতে পারেন।সিফাত এর ঘটনা আত্মীয়দের কাউকেই জানানো হয় নি।কারন ছেলেটার ভবিষ্যতের ওপর প্রভাব পড়তে পারে। কে কি ভাববে!!তবে কালকের ঘটনার পর আর গোপন রাখার উপায় রইলো নাহ।এর আগেও সিফাতদের বাসা যখন বানানো হলো তখন সিফাত এর বাবা মা বিয়ে করে মাত্র উঠলেন নতুন বাসায়।প্রথম যে ভাড়াটিয়া এলো তাদের সাথেই ঘটলো ভয়াবহ ঘটনা।ভাড়াটিয়া নবদম্পতি!! দুমাস আগেই বিয়ে হয়েছে। জামাই বউ থাকবেন।জামাই ব্যবসায়ী।সারাদিন পর বাসায় ফিরেন।বউ প্রায় সিফাত এর আম্মার সাথে এসে আড্ডা দিতেন।অসাধারণ ছিলেন মহিলা।এভাবেই কেটে গেছে দেড়বছর।একদিন হঠাৎ রাতে ভাড়াটিয়া ফ্ল্যাট থেকে চেচামেচির শব্দ আসছে শুনে সিফাত এর বাবা উপরে গেলেন ঘটনা কি দেখতে।গিয়ে দেখেন ভাড়াটিয়া ভদ্রলোক চিন্তিত হয়ে গেট নক করছেন!!নক করছেন বললে ভুল হবে পারেন তো দরজা ভেঙে ফেলেন!!সিফাত এর বাবা কে দেখে ভদ্রলোক জানালেন তার স্ত্রী গেট খুলছেন নাহ।সিফাত এর বাবার কাছে পরামর্শ চাইলেন কি করা যায়??সিফাতের বাবা ভাবলেন হয়তো জামাই বউয়ের ঝগড়া হয়েছে তাই হয়তো অভিমান করে স্ত্রী দরজা খুলছেন নাহ।তাই সিফাতের আম্মাকে ডাকিয়ে দরজা খোলার জন্য অনুরোধ করালেন!কোনই কাজ হচ্ছে দেখে সবাই চিন্তায় পড়ে গেলেন!একপর্যায়ে সিফাত এর বাবা সিদ্ধান্ত নিলেন পুলিশ ডেকে সহায়তা নিবেন।ওপরে গিয়ে থানায় ফোন করলেন।থানা একেবারে কাছে হলেও পুলিশ আসলো দু'ঘন্টা পর!!তারা এসেও প্রায় একঘন্টা ডাকাডাকি করলো!!এরপর আরো ঘন্টা লাগলো দরজা ভাঙতে!!!!দরজা ভেঙে একেবারে ডাইনিং স্পেস এই ঝুলন্ত অবস্থায় মহিলার লাশ উদ্ধার করলো!!এরপর কত ঝামেলা!!পুলিশ পুরো ঘটনা তদন্ত করে জানিয়ে দিলো এটা আত্মহত্যা। মহিলার নাকি আগে কারোর সাথে সম্পর্ক ছিলো!!এ বিয়েতে মহিলার মত ছিলো নাহ। স্বাভাবিক ভাবেই সংসারে ঝগড়াঝাটি লেগেই থাকতো!!ঘটনার দিন ও স্বামীর সাথে তুচ্ছ বিষয়ে ঝগড়া হয়।সারাদিন পর স্বামী ফিরে এসেই দেখেন...।কেস এখানেই সমাপ্ত হয়ে গেল।ভাড়াটিয়াও চলে গেলেন বাসা ছেড়ে!!এ ফ্ল্যাটে নারী আত্মহত্যা করেছেন তাই ফ্ল্যাটে আর ভাড়াটিয়াই আসছিলো নাহ।তাই সিফাত এর বাবা মা এ ফ্ল্যাটেই উঠে আসা স্থীর করলেন। ঠিক তখন আবার বাসায় পুলিশের লোকজন আসা শুরু হলো!!আত্মহত্যা কারীর নানা জামাইয়ের নামে মামলা করেছেন!!স্ত্রী কে হত্যা করে আত্মহত্যার সাজিয়ে নাটক বানিয়েছেন স্বামী!! মামলা চলল দীর্ঘদিন!! সিফাত এর বাবারও জলের অনেক টাকা খরচ হলো!!এমনকি সিফাত এর বাবা মা কেও আদালতের কাঠগড়ায় দাড়াতে হলো!!সিফাত এর দাদার থেকে শুরু করে নানার পরিবার সিফাত এর বাবা মায়ের ওপর ক্ষীপ্ত হলেন!!কারন তারা কাউকেই কিছু জানায় নি।জিগ্যেস করতে এলেও তারা এড়িয়ে গেলেন!!মামলা চলাকালীন পুরো সময় সিফাতদের বাসা খালি পড়ে রইলো!!আত্মহত্যা করা বাড়িয়ে কেউই আর আসতে চাইলেন নাহ।এদিকে সিফাত এর বাবা মা ও ওই ফ্ল্যাটে উঠতে পারলেন নাহ।কারন তদন্তের ডিবি ফ্ল্যাট আটকে রাখলেন। প্রায় দু বছর লাগে মামলা শেষ হতে!!আদালত ভাড়াটিয়া লোকটাকেই দোষী হিসেবে যাবৎজীবন সাজা দেন।এদিকে সিফাত এর জন্ম হয়।সিফাত এর বাবা মা নতুন অতিথি নিয়ে নতুন ফ্ল্যাটেই উঠেন!!এরপর সব স্বাভাবিক হয়।ভাড়াটিয়া এসে পুরো বাড়ি ভর্তি হয়।তাদের সন্তান কে তারা ভাগ্যবানই মনে করেন।তার জন্মের পরপরই তারা একের পর এক বিপদ হতে মুক্তি লাভ করেন!!কতই না চমৎকার দিন কাটছিলো!!প্রায় ২০/২১ বছর পরেই আবার ঝামেলা শুরু হলো!!সিফাত কে জন্মের পর আজ পর্যন্ত তাদের ফ্ল্যাটের কথা জানানো হয়নি।বাচ্চা ছেলে শুনে যদি ভয় পায়!!এখনো সেদিনের কথা মনে করলে সিফাত এর বাবার শীড়দাড়া বেয়ে শীতল বাতাস বয়ে যায়!!উনিও সেদিন ফ্ল্যাটে ঢুকিছিলেন পুলিশের পিছু পিছু!!পুরো ফ্ল্যাটে একটা টিউব লাইটই জ্বলছিলো!!ডাইনিং স্পেস এ নষ্ট হওয়া টিউব লাইটের এই আলো বিজলির মতোন চমকাচ্ছিলো!!এই জ্বলে এই নিভে যায়!!ছোট্ট সিলিং ফ্যান মহিলার ওজনে একদিকে হেলে পড়েছে!!পুলিশের পাওয়ার ফুল টর্চের আলোয় দেখতে পেলেন মহিলার চোখ তখনো খোলা!!জিহবা কুকুরের মতোন বেরিয়ে আছে!!পড়নের শাড়ি প্রায় খুলেই পড়েছে!! এমন অবস্থায় আর থাকা সম্ভব হয়নি!!এখনো ডাইনিং স্পেস এর নতুন লাগানো ফ্যানের দিকে অন্ধকারে তাকালে ভয় ভয় করে!!মনে হয় মহিলা ঝুলছে!!সবই আসলে মনে ভয়!!নাহ সিফাত এর এ্যালোপ্যাথি চিকিৎসার পাশাপাশি আরেকটা চিকিৎসা হওয়া উচিৎ!! যেটা হাজার বছর ধরেই চলছে!!মানুষ চাঁদে গিয়ে চাঁদের মাটি খুড়ে যদি বসবাস শুরু করে দেয় তবু এ চিকিৎসা কখনোই বন্ধ হবে নাহ।একেবারেই বিজ্ঞান এর সাথে সম্পর্কহীন এ চিকিৎসার নাম হলো "ঝাড়ফুঁক " সিফাতের বাবা পুরোনো ইনডেক্স খুঁজে একজনকে ফোন দিলেন।তিনবার রিং হওয়ার পরেই অপর পাশ হতে গুরুগম্ভীর গলায় একজন সালাম দিলেন.......

চলবে...

নিজ ছেলের আত্মার ভয়ে তাবিজ ১৩

( ঝাড়ফুঁক)

"ঝাঁকড়া চুল দাঁড়ি!! লম্বা ফর্সা লোকটাকে যদি জুব্বার জায়গায় জিন্স এবং টিশার্ট পড়িয়ে দিয়ে একটা বাইকে বসিয়ে ছবি তুলা হয় তাহলে তাকে পাক্কা জিপসিদের মতোন লাগবে।ভদ্রলোক মারাত্মক শিক্ষিত। ডাক্তারি পেশা ছেড়ে হয়েছেন ওঝা!!ওঝাগিরি ও কিন্তু ফ্রিতে করেন নাহ।অনেক টাকা চার্জ নেন।সিফাত এর বাবার ওঝা এ বন্ধুর নাম হলো হায়দার খান ওরফে হায়দার হুজুর!!উনি সাথে একজন এ্যাসিসটেন্ট নিয়ে এসেছেন।এসেই এমন ভাব করছেন যেন উনি এখানেই থাকেন।অথচ সিফাত এর বাসায় নাকি লাস্ট ২০ বছর আগে এসেছিলেন!!এসেই গোসল করলেন। ভাত খেলেন এবং খাওয়া শেষে পুরো বাড়ি ঘুরে বেড়ালেন।সিফাত কে কেউ না বললেও সে জানে হায়দার হুজুর তাকে সারানোর জন্যেই এসেছেন!! তাছাড়া লোকটাকে সিফাত এর ভালোই লেগেছে। রাতে খাবারের পরেই সিদ্ধান্ত হলো হায়দার হুজুর সিফাত এর সাথেই থাকবেন।এমনকি তার সহকারী ও থাকবে। হুজুর কিন্তু সিফাত এর সাথে একটিও কথা বলেন নি।এমন কি ঠিকমতো তার দিকে তাকিয়েও দেখেন নি!!যাইহোক সিফাত সবই মেনে নিয়েছে। সে সবকিছুই করতে রাজী তবু যদি মহিলার খপ্পর হতে বাঁচে! রাতে হায়দার হুজুররা তার রুমে এলেন।এই প্রথম সিফাতের সাথে কথা বললেন ভরাট গলায় " বাবা তুমি চিন্তা করো না।আমরা ফ্লোরেই ঘুমাবো।আজকে বরং তুমি নিশ্চিত হয়ে ঘুমাও।তোমার সমস্যা আজকেই শেষ হলো ধরতে পারো।সত্যি সত্যি সিফাত নিশ্চিত হয়েই ঘুমিয়ে পড়লো!!!

পরের দিন সিফাত এর ঘুম ভাঙলো বাইরের আওয়াজ এ।হায়দার হুজুর এবং তার সহকারী কেউই নেই!!তাদের বিছানাও নেই!!বাইরে বোধহয় কোন কাজ হচ্ছে। বাথরুমে গিয়ে ভেন্টিলেটর দিয়ে দেখতে পেল তার বাবা এবং হায়দার হুজুর দাড়িয়ে আছেন।এবং তিনজন লোক ডাবগাছটা কাটছে!!!বাথরুম থেকে একেবারে গোসল করেই বের হলো সিফাত।নাস্তা খেতে খেতে বুঝতে পারলো হায়দার হুজুর লোকটা লায়েক আছেন।তার উপশম করার ক্ষমতা রাখেন বলেই মনে হচ্ছে!!!

সন্ধ্যার দিকে তার সাথে কথা বিস্তারিত কথা বলতে বসলেন হায়দার হুজুর। প্রথমেই সিফাত এর মুখে পুরো ঘটনাটা শুনলেন।এরপর তাকে কিছু প্রশ্ন করলেন।এরপর সিফাত কে বললেন "একজন মুসলমান হিসেবে তোমাকে মনে প্রানে বিশ্বাস করতে হবে জ্বীন এর অস্তিত্ব। এরা সংখ্যায় আমাদের চেয়ে বহুগুনে বেশি।এবং হাদিস অনুযায়ী প্রায় সবার বাড়ির ছাদে এবং টয়লেট এ।এবং প্রতিজনের সাথে একটি করে জ্বীন আছে।স্বাভাবিক তোমার সাথেও আছে আমার সাথে ও আছে।তবে তাদের মধ্যেও কিন্তু ভালোমন্দ আছে। ঠিক আমাদের মতোন।তাদের ক্ষমতাও অনেক।কিন্তু তারা শ্রেষ্ঠতম জীব কিন্তু নয়।তোমার ব্যপারে বলতে হলে বলবো তুমি এমনিতেই বিষন্নতায় ভুগছো!!তুমি কি জানো যারা বিষন্নতায় ভুগে তাদের কে জ্বীনেরা বেশি টার্গেট করে।এরপর আমার তুমি এমনই এক বই এনে আমল করলে যেটা নিষিদ্ধ!! এটার মাধ্যমে তুমি আবার জ্বীন ডাকার আমল করলে!!আমি জ্বীন ডাকার কালো এবং সাদা উভয়ই উপায় রপ্ত করেছি।তবে সাদা উপায় ছাড়া কালোটা কখনোই ব্যবহার করিনি।আল্লাহ না করুক তোমার সমস্যায় আমাকে এটার ব্যবহার না করা লাগে।খুবই খারাপ এবং ভয়াবহ এক জিনিস হলো কুফরি!! আমার ধারনা তোমার কারনেই জ্বীনটা এসে পড়েছে। এখন তাকে বিদায় করলেই তোমার মুক্তি!!আমাকে এর জন্য তিনটি উপায়ের প্রয়োগ করা লাগবে। প্রথমটি আমি জ্বীন দ্বারাই প্রয়োগ করবো!!এটায় যদি সফল না হই তাহলে দ্বিতীয়টাও জ্বীনের মাধ্যমেই করবো!!তবে যদি দুটোই বিফল হয় তাহলে শেষটায় তোমার ব্যবহার করা লাগবে। মনে রাখো বাপ!! মানুষের চেয়ে যেমন খারাপ কিছুই নেই মানুষের চেয়ে বড় শক্তিশালী ও কিছু নেই।আজকেই আমি দুটো প্রয়োগ করতে চাচ্ছি!!

পুরো ফ্ল্যাট অন্ধকার করা হলো!!হায়দার হুজুর বিড়বিড় করে আরবী কিছু পাঠ করছেন। পরিবার এর সবাই একত্রে হয়েছেন।সবাই সবাইকে ছুঁয়েই বসেছে। এখন নাকি জ্বীন আসবে। তাকে দিয়েই সিফাত এর চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে।আশা করা যায় এ জ্বীন দিয়ে সিফাতের সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে!!!

অনেকবার চেষ্টা করেও জ্বীনকে হাজির করা গেল নাহ।আসলো না বললে বুঝায় হয়তো ডাকলেন জ্বীন সাড়া দিলো নাহ।কিন্তু জ্বীন ধারে কাছেও এলো নাহ!!দীর্ঘ চেষ্টায় ব্যর্থ হওয়ার পর খানিকটা জিরিয়ে দ্বিতীয় অপশন ইউস করলেন হায়দার হুজুর। এবারো চেষ্টা করতেই থাকলেন কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছিল। একেবারে শেষের দিকে রুমের মাঝখানে থপ করে কিছু পড়ার আওয়াজ এলো!!!হুজুরের পড়ার শব্দও বাড়লো!!রুমের চারিদিকে হিসহিস আওয়াজ হচ্ছে!! মনে হচ্ছে রুমটায় কোন সাপ ঘুরে বেড়াচ্ছে!! হায়দার হুজুর রুম কাপিয়ে কথা বলে উঠলেন!!বললেন "এ জ্বীন তোমাকে বিপদে পড়ে মনে করছি।তোমারা যেমন আল্লাহর মাখলুক আমরা ঠিক তাই!!বিপদে কাউকে সাহায্য করা সুন্মাত।তোমাকে এর বিনিময় দেয়া হবে।পাশাপাশি কথা দিলাম আমাদের বিপদ হতে বের করতে পারলে আমিও জবান দিলাম তুমি বিপদে পড়লে সাহায্যে এগিয়ে আসবো!!এরপর সংক্ষিপ্ত করে হায়দার হুজুর ঘটনা জানালেন।মজার কথা হলো হায়দার হুজুরের কথা বলার সময়েও সাপের মতোন হিসহিস আওয়াজ আসছিলোই!!আগত জিনিসটা পুরো ফ্ল্যাটে ঘুরে বেড়াচ্ছে এটা তার আওয়াজ কমে যাওয়া বেড়ে যাওয়া হতে বুঝতে পারা গেল।নাকি হুজুরের সহকারীই আওয়াজটা করছে!!হায়দার হুজুর কথা শেষ করার আগে প্রায় কেঁদে ফেলে বলেছেন " দেখ তোমার গোত্রের লোকজন বাচ্চা ছেলেটা কে কষ্ট দিচ্ছে!! উত্যক্ত করছে!! তার ঘুম হারাম করছে অথচ সে অবুঝ!!তুমি যদি পারো উপকার করো।যিনি একাজটা করছেন তাকে নিষেধ করে দাও যেন আর সমস্যা না করেন।হায়দার হুজুরের কথা শেষ হতেই হিসহিস শব্দটা থেমে গেল।রুমটা এমনই নিঃশব্দে ছেয়ে গেল যে রান্নাঘরের সিংকের কলের ফোঁটা ফোঁটা পানি পড়ার শব্দ ভেসে আসলো!!এমনকি ফ্রিজ চলার শব্দ পর্যন্ত আসলো কানে!!প্রায় একঘন্টা পরেই আবারো থপ করে আওয়াজ হলো। মনে হয় ছাদ থেকেই নামলো!!এবার আর কোন আওয়াজ নেই!!কিন্তু সিফাত এর মনে হলো কেউ একজন ঠিক তার পেছনেই এসে দাড়িয়েছে!!তবে একটু পরেই মনে হলো যে ছিলো চলে গেসে!!এবার কিচকিচ কিছু শব্দ এলো!!তবে বেশিক্ষণ নয়।হায়দার হুজুর ঘর কাঁপিয়ে বলে উঠলেন আলহামদুলিল্লাহ!!! সহকারী লাইট জ্বালিয়ে দিতে বললেন!!সবাই পিটপিট করে হায়দার হুজুরের দিকে চাইলেন উনি ঘামে জবজবে হয়ে গেলেন!!তারপরে জানালেন সিফাত কে জ্বালাতন করা মহিলা জ্বীন বিদায় হয়েছে!! মূলত গাছটা কাটার সাথে সাথেই অনত্র চলে গিয়েছে জ্বীনটা!!সিফাত এর ভুলেই জ্বীনটা আকৃষ্ট হয়েছিলো।তবে এখন সিফাত নিরাপদ!!!কথা শেষ হতেই ছাদে ধুপধাপ শব্দ হলো!!মনে হচ্ছে অনেকগুলো ইট ফেলে দেয়া হয়েছে ছাদে!!!তবে হায়দার হুজুর এটা শুনে মুচকি হাসলেন!!বললেন এতে ভয় পাবার কিছু নেই!!এটা তার ডাকা জ্বীনের সামান্য উপহার দেয়ার শব্দ!!সহকারী কে একজন সাথে নিয়ে ছাদে যেতে বললেন।সহকারী একাই গেল ছাদে!! হাতে করে বরফখন্ডের মতোন দেখতে প্রায় ইটের সাইজের লাল তালমিস্রি নিয়ে এলো!!এটাই নাকি জ্বীনের দেয়া উপহার!!!

চলবে....

নিজ ছেলের আত্মার ভয়ে তাবিজ ১৪

(তৃতীয় পথ)

"এবার সত্যিই নিজেকে মুক্ত মনে হচ্ছে সিফাত কে।যেন দীর্ঘদিন এর সমস্যার অবসান ঘটলো।হুজুর সবাইকে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে মিশ্রী খেতে বললেন।উনি এটাও জানিয়ে দিলেন এটা কিন্তু জ্বীনরা তৈরি করে এনেছে ভাববেন নাহ। এগুলো ওরা আমাদেরই কাছ থেকে কোনভাবে এনেছে!!এরা পারে নাহ এমন কাজ নেই।একবার তো একজনের চিকিৎসার জন্য আমাদের দেশেই তৈরি বহুল ব্যবহৃত ঔষধ এনে দিয়েছিলো!!রুগির হাতে যখন ঔষধ দেয়া হয়েছে। তখন রুগি হতবাক!! একি হুজুর এটাতো প্যারাসিটামল!!এটা খেয়ে সুস্থ হবো??এ দেশের এমন কোন ডাক্তার বাকও রাখি নাই এ রোগের জন্য!আপনি দিলেন কি নাহ নাপা??

হায়দার খান নিজেও বিব্রত হয়ে গেলেন!!তবু রুগিকে পূর্ন আস্থা রেখে খেতে বললেন।এবং ৭ দিন পর দেখা করতে বললেন।রুগি আর ফিরে আসেনি।তবে ডাকে চিঠি দিয়ে অসংখ্য ধন্যবাদ দিয়ে নিজের সুস্থ হবার খবর দিয়েছে!!

সিফাত এর আম্মা পোলাও রান্না করলেন!!এতোদিন ধরে চলে আসা সমস্যার সমাধান হলো। এদিন কি এভাবেই পার করতে দেয়া যায়??বিরিয়ানি না হলে চলছেই নাহ।তাছাড়া হায়দার সাহেব আসার পরেই কাজে নেমে পড়ায় তাকে ভালোমন্দ খাওয়ানো হয়নি।এ উসিলায় খাওয়ানো হবে।হায়দার হুজুরের অনুরোধে সবাই ডাইনিং স্পেস এ দস্তরখান বিছিয়েই খেতে বসলেন।মজা করে ডিনার করলেন সবাই।খাবার শেষে মন খুলে সিফাত এর পুরো পরিবারের জন্য দোয়া করলেন।এবং আগামীকাল উনি চলে যাবেন বলে ঘোষনা দিলেন!!

আজকে একত্রে খাবার কারনে তারাতাড়ি খাওয়া শেষ হলো।তাই সবাই তাড়াতাড়িই ঘুমাতে গেলেন।শুরু হলো ঝড় তুফান!!কঠিন তুফানে চলে গেল কারেন্ট!!পুরোপুরি অন্ধকারে ঢেকে গেল সিফাতদের ফ্ল্যাট।তবে চারিদিকে ঠান্ডার একটা আবেশ!!এমনিতেই সারাদিন ধকল গেছে তাছাড়া ঠান্ডা আবহাওয়ায় সবাই নাক ডেকে ঘুমিয়ে পড়লো।সিফাত ও এ পাশ ওপাশ করছে। তার ঘুম আসছে নাহ।অথচ মারাত্মক ক্লান্তি আছে শরীরে!!সবার মতোন তারও ঘুমিয়ে পড়ার কথা।কিন্তু মনে হচ্ছে আজকে কিছু একটা ঘটবে!!এতো সহজে মহিলা জ্বীনটা চলে যাবে বলে মনে হচ্ছে নাহ।অথচ ঝাড়ফুক এর পরপরই মনে হয়েছে ব্যপারটা এখানেই শেষ।কিন্তু হঠাৎই আবার মনে হচ্ছে নাহ এটা শেষ হয়নি।হতে পারে নাহ।

১১ টায় বিছানায় এসেছে এখন বাজে দুইটা!!ঝড়তুফান শেষ হয়েছে রাত পৌঁনে ১ টায়।বিছানায় শুয়ে শুয়েই সিফাত রেডিয়াম বিশাল ঘড়ির দিকেই চেয়ে আছে। কারেন্ট এখনো এলো নাহ।আসলে ড্রীম লাইটটা জ্বলে উঠবে।ফ্যানের সুইচ দেয়া হয়নি।আচ্ছা মোমবাতি কি জ্বালানো যায় নাহ?এমন অন্ধকারে তার ভালোই লাগছে নাহ!!!

সিফাত এর ড্রয়ারই মোমবাতি রাখা আছে।একই জায়গায় রাখা আছে টর্চ।অন্ধকারটা ভালো ঠেকছে নাহ।আলো জ্বালানো উচিৎ। নিজের রুমের প্রতিটি কোনই তার মুখস্থ। নিচে ঘুমিয়ে থাকা দুজন একটুও টের পাবে নাহ।উঠ বসতেই বাথরুমে সেই পুরোনো খুটখাট আওয়াজ!!একবারেই পরিচিত সাধারণ অথচ ভয়ংকর আওয়াজটা কিসের সিফাত এর বুঝতে সময় লাগলো নাহ।সিফাত প্রস্তুতি নিলো বাকি ঘটনার জন্য!!কিন্তু আওয়াজটা থেমেই গেল!!কারেন্ট এসে গেছে!!ফ্যান এবং ড্রীম লাইট চালু হলো!!হায়দার হুজুর জেগে গেলেন!!এবং ঠিক তখনই রুমে মহিলা প্রবেশ করলেন!!!সিফাত চেচিয়ে উঠলো!!বললো এইতো এইতো মহিলাটা এসে গেছে!!আপনার ঝাড়ফুক এ কাজ হলো নাহ কিছুই!!হায়দার হুজুর টয়লেট এর দিকে তাকিয়ে কিছুই পেলেন নাহ!!উঠে সিফাত এর পাশে বসে তাকে জড়িয়ে ধরলেন!!বললেন "কই সিফাত?? কিছুই তো নাই??কেন অযথা ভয় পাচ্ছো???সিফাত স্পষ্ট দেখছে মহিলা ঘুরে বেড়ানো শুরু করলেন!!হায়দার হুজুরকে পাত্তাই দিচ্ছেন নাহ বিকট মহিলা!!হায়দার হুজুর আয়াতুল কুরসি পড়া আরম্ভ করলেন!!উনিও হয়তো টের পেলেন মহিলার উপস্থিতি!! এবার কাজ হলো!!আয়াতুল কুরসি শুরু হওয়া মাত্রই পালিয়ে গেলেন মহিলা!!তবে চিরদিনের জন্যই পালালেন??

ফজর নামাজ পর্যন্ত সবাই জেগে রইলেন!!হায়দার হুকুর শেষে সবাইকে গ্যারান্টি দিলেন মহিলা আর বিরক্ত করবে নাহ।কালই এর একটা সমাধান করবেন।তৃতীয় ধাপটার প্রয়োগ ছাড়া উপায় নেই!!

পরেরদিন সন্ধ্যা বেলা শুরু হলো তৃতীয় ধাপের কার্যক্রম!! হায়দার হুজুর সিফাত এর মাধ্যমেই কথা বলবেন অতিষ্ট কারী জ্বীনের সাথে!!উনি নিজেও কালকে হাড়ে হাড়ে টের পেলেন জ্বীনের উপস্থিতি!বড্ড শক্তির অধিকারী এ জ্বীন সম্ভবত সিফাত এর প্রেমে মজেছে!!তার সাথে কথা না বলে আর সমাধান হচ্ছে নাহ।তাছাড়া জ্বীনটা আসল উদ্দেশ্য জানা জরুরী। না হলে এর হাত থেকে বাঁচার উপায় কি??

ওযু করতে যাওয়া সিফাতের অপেক্ষায় রইলেন হুজুর সহ পুরো চিন্তিত পরিবার!!!

নিজ ছেলের আত্মার ভয়ে তাবিজ ১৫

(কথোপকথন)

"সিফাত ঘরে আসার পরেই হায়দার খান বললেন"জ্বীন নিয়ে দুটা কিছু কথা বলি।একটি হাদিসে এসেছে " রোজ কেয়ামত এর দিনে মানুষ জ্বীনকে দেখতে পাবে।কিন্তু জ্বীন মানুষকে দেখতে পারবে নাহ।দুনিয়ার নিয়মের ঠিক উল্টো ঘটনা হাশরের দিন ঘটবে।আবার আরেক জায়গায় আছে "ইফরিত নামক জ্বীনকে দেখল আজান দিতে হবে।আজান না দিলে যাবে নাহ।বড়ই ভয়ানক জ্বীন।আবার কুরআনে একটি আয়াতে মহানবী হজরত মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সামনে জ্বীনের বিশাল দল বসে বসে উনার কুরআন তেলাওয়াত শুনে চলে যাবার ঘটনা এসেছে। অথচ উনি টের পান নি।আবার আরেক হাদিসে খানজাব গোত্রের জ্বীনকে গলা টিপে ধরেছেন স্বয়ং নবী মুহাম্মাদ (সাঃ) এমনকি বেঁধে রাখতে চাওয়ার কথা বলেছেন!!মোট কথা একজায়গায় জ্বীনের দেখা পাওয়ার কথা বলা হয়েছে অপর জায়গায় বলা হয়েছে সম্ভব নয়।!!জ্বীনেরা সংখ্যায় আমাদের চেয়ে বহুগুণে বেশি।তার ওপর প্রতি ইনসানের সাথে একজন করে জ্বীনের সংখ্যা তো বাড়ছেই!!এখন কথা হলো জ্বীন দেখতে পাওয়া সম্ভব??? উত্তরটি হলো হ্যা সম্ভব। তবে এতে জ্বীনের ইচ্ছা থাকা লাগবে।জ্বীন চাইলেই কেবল আমরা তাদের দেখতে পারবো।অবশ্য তাদের অসাবধানতার ফলে তাদের দেখা আমরা পেয়ে যাই।অথবা আমাদের ভয় দেখানোর জন্যে তারা আমাদের দেখা দিয়ে থাকে।এদিকে জ্বীন কিন্তু আমাদের দেখে!!যদিও তাদের চোখে পর্দা ফেলার নানান উপায় আছে।যেমন বাথরুমে "বিসমিল্লাহ পড়লেই তাদের চোখে পর্দা পড়ে যাবে।তারা আমাদের কে আর দেখতে পারে না বলেই বলা হয়েছে।
এবার আসি মুূল কথায়।সিফাত কে জ্বালাতনকারী জ্বীন কেবলই সিফাত কে দেখা দিচ্ছে বলেই ওটা আমাদের কাছে অদৃশ্য!! এখন তাহলে সেই জ্বীনটাকে তাড়াবো কি করে??তার সম্পর্কে কোনই আইডিয়া নেই!!সে কোন প্রজাতির জ্বীন??কিই বা তার উদ্দেশ্য কিছুই তো জানি নাহ!!তাই বলে সিফাত কে তো আর তার কাছে ছেড়ে দিতে পারি নাহ।সিফাত কে যেকোন মূল্যে উদ্ধার করাই আমার লক্ষ্য!!
কিন্তু কথা হলো জ্বীনটাকে তো নাগালে পেতে হবে??এপর্যন্ত গেসে গেসে করেও যায়নি তবে আজকে তাকে আমি হাজির করবোই!!তবে সে হাজির হলেও যোগাযোগ কেবলই সিফাত এর সাথেই করবে।কথা বলুক বা নাই বলুক তার ব্যপারে তথ্য জোগাড় করতে পারবে কেবলই সিফাত।আমি কিছু নিয়মের পালন করবো জাস্ট।বাকিটা জ্বীনই এসে করে দিবে।
তবে সবাইকে বলে রাখি।জ্বীনটা আসার পর কেউ কোন কারনেই ভয় পাবেন নাহ।এমনকি জ্বীনটা যদি তার ভয়ংকর রুপে হাজির হয় তবু ভয় পাবেন নাহ।এদের সাথে সাহস নিয়ে দেখা করতে হয়।তাছাড়া আমি তো আছিই!!আমরা জাস্ট কোঅপারেট করবেন। বাকি সবার নিরাপত্তার দায়িত্ব আমার।এখন আপনারা চাইলে এখানে থাকতে পারেন অথবা চলে যেতে পারেন নিজ নিজ রুমে।কারন থাকবেনই এমন কথা নেই!!চিন্তা করে দেখেন কে কে থাকবেন???
পুরো পরিবার উসখুস করতে লাগলো তবে কেউই চলে গেল না।দেখাই যাক নাহ ঘটনা কি????পরিবারের বড় ছেলের বিপদে বাবা মা নিজ রুমে থাকবেন কি করে??সিফাত এর একমাত্র ছোট সাদাত কে তার রুমে চলে যাওয়ার জন্য সবাই বললো!!হায়দার হুজুর সাদাতের দিকে চেয়ে বললেন থাক। ও বরং নিজের রুমে চলে গেলে ভয় পাবে।তাছাড়া সবাই একসাথে রাখার আরেকটা ভালোদিক হলো জ্বীন আলাদা করে কাউকে হার্ম করতে পারবে নাহ।
হায়দার হুজুর সব গুছিয়ে ঠিক করলেন।এবং সবার কাছে অনুমতি চাইলেন তৃতীয় ধাপ শুরু করার!!এই তৃতীয় ধাপ জিনিসটা আজকেই প্রথম করবেন। এর আগে আলহামদুলিল্লাহ প্রতিবারই একবারেই জ্বীন তাড়িয়ে এসেছেন!!তৃতীয় ধাপ দূরে থাক দ্বিতীয় ধাপেই কখনোই যান নি। এবার যাচ্ছেন বলে নার্ভাস লাগছে!!কি জানি কি হয়!!
একবার একটি বাসায় জ্বীন তাড়াতে গিয়ে খেয়েছেন জ্বীনের কামড়!!তার কোমরের দুপাশে দুটে দাত বসিয়ে ছিলো একটি বদজ্বীন!!জ্বীনটাকে আচ্ছা মতোন পিটিয়ে বিদায় করতে পেরেছিলেন!!এদের কাছে সাহস হারানো চলবে নাহ।যতই ভয় ততই এরা আমাদের প্রতি শক্তিশালী আচরন করতে পারে।এদের তাই দৌড়ের ওপর রাখতে হয়।
শুরু হলো জ্বীনকে ডেকে আনার প্রক্রিয়া!! দীর্ঘ প্রক্রিয়ায় কোনই কাজ হচ্ছে নাহ!!জ্বীন আসছেই নাহ। প্রতিবার প্রক্রিয়া করতে ১ ঘন্টার ওপরে লাগছে!!একবার, দুবার প্রক্রিয়া করার পরেও জ্বীন এলোই নাহ।
হায়দার হুজুর হাল ছাড়বেনই নাহ।তার কথা আজকেই সমসর সমাধান করতে পারলে ভালো হয়।দুদিন পরেই রমজান।সংসারের কাজকর্ম ফেলে চলে এসেছেন বন্ধুর ডাক শুনেই!!খানিক জিড়িয়ে আবার শুরু করলেন
এবার কাজ হলো!!টয়লেট হতে খুটখাট শব্দ এলো!!এটা সবাই শুনলেন!!সিফাত নড়েচড়ে বসলো!!এবং জ্বীন টয়লেট হতে না বেড়িয়েই সিফাত এর সামনে উপস্থিত হলো!!
হায়দার হুজুর সিফাত কে জিগ্যেস করলেন"সিফাত জ্বীনটা কি এসেছে??? সিফাত মৃদুস্বরে উত্তর দিলো "জ্বী এসেছে!!একেবারে আমার সামনে দাড়িয়ে আছে!!আপনারা কেউ দেখছেন নাহ???হুজুর বললেন আমাদের দেখতে পাওয়া বিষয় নয়।সে সম্ভবত তোমাকেই দেখা দিচ্ছে!! তুমি তাকে জিগ্যস করো তার উদ্দেশ্য কি??কি চায় তোমার কাছে??সিফাত চেচিয়ে জিগ্যেস করলো!!আপনি আমার কাছে কি চান??কেন প্রতিদিন আমাকে জ্বালাতন করছেন??আমাকে মুক্তি দিন!!সিফাত এর কথার পরেই পিনপতন নীরবতা!! হায়দার হুজুর সিফাত আবারো রিপিট করতে বললেন প্রশ্নটা!!আবারো সব চুপচাপ!! এভাবে কয়েকদফা প্রশ্ন করা হলো!!একেবারে লাস্টের দিকে সিফাত বললো!!উত্তরে মহিলা বললো " হুজুরকে এখনই চলে যেতে বলো!!তার বাসায় বিরাট সমস্যা!! তার স্ত্রী এবং পরিবার এখন চরম বিপদে!!তাদের বাঁচানো খুবই জরুরি!! হুজুরের পুরো পরিবার এখন বাসায় আটকা পড়েছে!! পুরো বাসায় দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে!!
সিফাত বললো জ্বীনটা চলে যাচ্ছে!! কিংকর্তব্য বিমূঢ় হায়দার খান জ্বীনকে উদ্দেশ্য করে বললেন "তুমি এটা করতে পারো নাহ!!যদি আমার পরিবার বিপদে পড়েছে তোমার কারনেই পড়েছে। তুমিই আগুন লাগিয়ে তাদের বিপদে ফেলেছো!!এ ভারি অন্যায়!মনে রেখ আল্লাহর কাছে একদিন জবাবদিহি করতে হবে!!আল্লাহর সামনে দাড়াতে হবে!!
সিফাত বললো জ্বীনটা উত্তরে বলেছে " এটা গাছ কেটে ফেলার আগে চিন্তা করা উচিৎ ছিলো!!!!
হায়দার হুজুর দৌড়ে টেলিফোনে পরিবার সাথে যোগাযোগ করতে গেলেন!!রিং হচ্ছে কিন্তু কেউ ধরছে নাহ!!উপায় না পেয়ে হুজুর দ্রুত সবার কাছ বিদায় নিয়ে চলে গেলেন
চলবে....

নিজ ছেলের আত্মার ভয়ে তাবিজ ১৬

(ধোকা)

"হায়দার খান পাগলের মতোন ছুটলেন তার বাড়ির দিকে!!এখনই রাওনা হলে তবেই দীর্ঘ ৫ ঘন্টা পরে পৌঁছাতে পারবেন বাসায়।বাসায় যোগাযোগ করতে পারছেন না।এখন যোগাযোগ না করে ওখানে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই।
উনার আগেই সন্দেহ হয়েছিল জ্বীনটা সাধারণ কোন জ্বীন নয়।অতি শক্তিশালী একজ্বীনের সাথে পাল্লা নিয়ে ফেলেছেন।তবে গাছটি কিন্তু উনি নিজের ইচ্ছায় কাটেন নি।সিফাত এর এ্যালোপ্যাথি চিকিৎসক এর পরামর্শেই সেটি কাটা হয়েছে।হায়দার খান যাবার পরের দিন শুনলেন গাছটি কাটার কথা বলেছেন চিকিৎসক। তার মতে গাছটিকে কেন্দ্র করে সিফাত এর সমস্যার শুরু।গাছটি কাটা পড়লেই সমস্যা মিটে যাবে বলেই কাটার জন্য বলেছিলেন।হ্যা সিফাত এর বাবা হায়দার খান কে জিগ্যেস করেছিলেন বটে।হায়দার খান নিয়ম অনুযায়ী এবং একজন এ্যালোপ্যাথির চিকিৎসক হওয়ার নিজেও না করেন নি।এমনকি সিফাত এর কোন ঔষধ উনি বাদ দেন নি।
বাসে উঠেই একমনে সূরা ইউনূস পড়তে আরম্ভ করলেন।আজকে উনার বিপদ মাছের পেটে আটকা পড়ার চেয়ে বেশি ভয়াবহ মনে হচ্ছে!! অবশেষে দীর্ঘ যাত্রার পর বাসায় পৌঁছাতে সক্ষম হলেন!!গিয়ে তো আক্কেলগুড়ুম!! কোথাও কোন সমস্যা হয়নি।হ্যা ফোন বিকল হওয়ায় কেউ ধরতেই পারেন নি।হায়দার হুজুর পরিবারের কাছ থেকে বিষয়টি চেপে রাখলেন!!কি হয়েছিল এসব বাসায় বলা অনর্থক!! জ্বীনটা তাকে ভয়ংকর বোকা বানিয়ে দিলো!!তাকে সরিয়ে দেয়ার অজুহাতটা ছিলো মারাত্মক!!কিন্তু তাকে এভাবে হঠাৎ সরিয়ে দেবার পেছনে কোন কারন কি আছে???সিফাত কে নিয়ে ভয়ংকর কিছু করতে চায় জ্বীনটা??এখনই একটা ফোন দেয়ার দরকার।কিন্তু এখন ফোন করতে হলে বাজারে যেতে হবে!!তার ফোন ডেড!!কিন্তু আজকে আর পারবেন না।এমনিতেই মারাত্মক ক্লান্ত হয়ে আছেন। থাক কালকে একটা ফোন দিতে হবে!!
এদিকে সিফাতরা চরম নিরাপত্তা হীনতায় ভুগছে!!তাদের একমাত্র সহায় হয়েছিলেন হায়দার হুজুর!!উনি সমস্যার সমাধান করতে এসে নিজেই সমস্যায় পড়ে গেলেন!!এতে খানিকটা লজ্জায় পড়ে গেলো পুরো পরিবার!! হুজুরের খবর ও নিতে পারছেন নাহ।এদিকে এখন কি করনীয় এটাও মাথায় আসছে নাহ!!একান্ত বাধ্য সিফাত এর বাবা মা সিফাত এর দাদি বাড়ি নানি বাড়ি মুরব্বিদের দুজন করে ডাকলেন।এনে নিজে বাসায় থাকতে অনুরোধ করলেন।আপাতত মুরব্বিরাই তাদের সেল্টার হয়ে থাকবে!!তাছাড়া সিফাত এর ঘর আপাতত বন্ধই থাকবে।এবং সিফাত, তার ছোট ভাই এবং সিফাত এর বাবা একই সাথে ঘুমাবে।আরো ভালো হতো এ বাসাতেই না থাকলে!!তবে কার বাসায় হঠাৎ উঠবেন??এমনিতেই কাল বাদে পরশু রোজা!!রাতারাতি তো আর ভাড়া বাসায়ও যেতে পারবেন নাহ!!
তবে সেদিন এবং পরেরদিন কোনই সমস্যা হলো নাহ সিফাতের।এমনকি আজকে থেকে নিজেরই রুমে ঘুমাবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিফাত।অবশ্য ছোটভাই বাবা এবং মামা সাথে থাকবে বলে ঠিক হলো।সবচেয়ে বড় কথা আজকে থেকে পবিত্র মাস রমজান শুরু হচ্ছে!!
একটাই দুশ্চিন্তা দূর হচ্ছে না। সেটা হলো হায়দার হুজুরের আর খবর পাওয়া গেল নাহ।তার বাসায় খোঁজ নিতে একজন লোক পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে আজকেই!!কালকের মধ্যেই খবর পাওয়া যাবে।
দুদিন পরেই হায়দার খান ফোন দিলেন!!সিফাত এর বাবা ফোন ধরতেই বললেন "আরে আমাকে বেক্কল বানিয়ে দিলো তোমার বাসার দুষ্ট জ্বীনটা!!আল্লাহর অশেষ মেহেরবানি আমার বাসায় কোনই ক্ষতি হয়নি!!আচ্ছা বাদ দাও তোমাদের ওখানে খবর দাও??আমি জ্বরে আক্রান্ত হয়ে দুদিন মরার মতোন পড়েছিলাম।এখনো গায়ে সামান্য জ্বর।তোমার লোকটা আসায় তাকে সাথে নিয়ে বাজারে এসে ফোন করলাম।আপডেট কি??সিফাত এর বাবা নিজেদের অবস্থার কথা জানালেন।হায়দার খান সবশুনে বললো ঠিক আছে।যেহেতু রমজান মাস শুরু হয়েছে তাই আপাতত জ্বীন-ভূতের ভয় নেই।আমি ইনশাআল্লাহ ঈদের আগেরদিন তোমার বাসায় উপস্থিত থাকবো।আমি থাকতে সিফাত এর সমস্যা হবে নাহ কোন!!
সিফাত তারাবির নামাজ মসজিদে গিয়েই আদায় করলো!!রমজান মাস তার জন্য সত্যি সত্যি রহমত নিয়ে আসলো!!এ সময় তো খারাপ জ্বীনেরা থাকে বন্দী!! এ মানে সিফাত খারাপ জ্বীনের পাল্লায় পড়েছিলো!!সিফাত পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠলেও একটা বাজে অভ্যাস গড়ে উঠলো তার!!প্রতিরাতে সামান্য আওয়াজ হলেই দৌড়ে টয়লেট যাওয়া। এবং ছোট্ট ভেন্টিলেটর দিয়ে কাটা গাছের দিকে অপলক চেয়ে থাকতো!!এটা আসলে শিওর হবার জন্যেই করতো যে জ্বীনটা না আবার এসে পড়ে!!এই ভেন্টিলেটর দিয়ে তাকিয়ে থাকার বিষয়টিই পুরো এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে!!অনেকেই সিফাত এর কাজটিকে পাগলামি হিসেবে দেখেন!!এলাকায় আবারো ছড়িয়ে পড়ে সিফাত লাবন্যের সাথে প্রেমে ব্যর্থ হয়ে পাগল হয়ে গেছে!!মজার কথা হলো সিফাত কে এ কাজ করতে আমি কয়েকদিন দেখেছি।একদিন ভয়ও পেয়েছি!!ও কি তাহলে সত্যিই পাগল হয়ে গেছে বলে চিন্তা করতাম।আসল ঘটনা অবশ্য পরে তার মুখে কয়েকদিন পরেই শুনেছিলাম😥😥
দেখতে দেখতে ২০ রমজান পার হয়ে গেল!!এদিনই আবারো সিফাত কে অবাক করে দিয়ে ফজরের নামাজ এরপরই জ্বিনটা চলে এলো!!
সিফাত তার বাবার সাথেই ফজর নামাজ পড়ে বাসায় ফিরলো!!এসে ঘুমাতে যাবার কিছুক্ষণ পরেই সেই পুরোনো ব্যপারটি ঘটলো!!সিফাত বাবাকে বললো "ও আবার এসেছে আব্বা!!তুমি কি দেখছো নাহ??তার বাবা পুরো রুমে কোনই পরিবর্তন লক্ষ্য করলেন নাহ।পুরো পরিবারই রাতটা নির্ঘুম কাটালো!!
পরের দিন হায়দার হুজুরের কাছে ফোন দিলেন সিফাত এর বাবা!!তবে জানতে পারলেন ভদ্রলোক এতেকাফে বসেছেন!!অবশ্য রাতেই হায়দার খান ফোন দিলেন।পুরো বিষয়টি শুনে উনিও স্তব্ধ হয়ে গেলেন!!এমনতো হওয়ার কথা নয়!!মনে মনে এটা সিফাত এর মানুষিক সমস্যা বলে নিশ্চিত হলেন।সিফাত এর বাবাকে বলে দিলেন কোন ভাবে কয়েকটি দিন পার করতে।উনি হয় ঈদের আগেরদিন নয়তো ঈদের পরেরদিনই চলে আসবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিলেন!!
সিফাত এবার যা করার নিজেই করবে বলে সিদ্ধান্ত নিলো!!ও বুঝে গেছে এ অবস্থা হতে তাকে মুক্ত হতে সাহায্য করতে পারে ও নিজেই!!!সত্যিই যদি এটা ইচ্ছে পূরন কারী জ্বীন হয় তাহলে তাকে দিয়ে ইচ্ছার পূরনই করবে!!তাছাড়া এপর্যন্ত জ্বীনটা তার কোনই ক্ষতি করেনি অযথা ভয় পাওয়ার কোনই কারন নেই!!মানুষের চেয়ে কি আর জ্বীনের শক্তি বেশি??আসুক আবার জ্বীনটাকে ও কাজেই লাগাবে!!এসব চিন্তা ভাবনা সিফাত তারাবি নামাজের সময় করতো!!ও নামাজ পড়ে নাহ।এশার নামাজ পড়েই মসজিদের বারান্দায় পাথরের মতোন বসে দু কানে আঙ্গুল দিয়ে বসে এসব উদ্ভট চিন্তা ভাবনা করতো!!একদিন তার বাবা তাকে নামাজ না পড়ার কারন জিগ্যেস করলে বলে এশার নামাজ পর্যন্ত সব ঠিকই থাকে।কিন্তু তারাবিহ শুরু হলেই তার মাথায় কিছুই ঢুকে নাহ!!তেলাওয়াত শুনে বরং তার কষ্ট হয়!!এসব ঘটনায় এলাকার লোকজন আরো মজা পেয়ে যায়!!সিফাত যে পাগল এই প্রচারণা আরো জোরালো হয়😡😡😡
চলবে...

নিজ ছেলের আত্মার ভয়ে তাবিজ ১৭

(ইচ্ছা, সাক্ষাৎ, শেষ ইচ্ছা)

"সেদিন সকাল থেকেই অঝোরে বৃষ্টি পড়ছিলো।আমাদের রোজায় সময় ছুটি থাকতো।তখন রোজার দিনে আমাদের দোকানেই সময় দিতাম।বৃষ্টি জন্য যেতে পারছিলাম না। কিছুক্ষণ পরপরই আকাশের অবস্থা দেখছিলাম। এমন সময় আমাদের বাসায় উপস্থিত হয় সিফাত।গলায় কয়েকটি তাবিজ,মাথায় টুপি কাবলী পড়েছে টাওজার দিয়ে।এতো ধকল যাচ্ছে তার ওপর কিন্তু আগের চেয়ে বহুগুণে সুন্দর হয়ে গেছে ছেলেটা।স্বাস্থ্য মাশাল্লাহ ভালো হয়েছে । লাস্ট শবেবরাত এর রাতেই দেখেছিলাম।মাত্র কয়েকদিনেই এ মাশাল্লাহ অনেক পরিবর্তন হয়েছে। আমাকে দেখে মৃদ হেসে জিগ্যেস করলো " কেমন আছো ভাই??আমারে তো ভুলেই গেলা??একটু খবর ও নাও নাহ???মানুষতো একটা মিসড কল দেয়।আমার রুমে নিয়ে বসলাম।বৃষ্টি আরো বেড়ে গেল।এরপর নানান কথা শেষে একনাগাড়ে এতোদিনের তার সাথে ঘটনা গুলো আমাকে শুনায় সিফাত!(সেদিনে বলা স্টেটমেন্ট ওপর বেইজড এ পোস্ট। তবুও সবকিছু এখানে শেয়ার করিনি।করা উচিত ও নয়।তার বলা ঘটনাটির ৭০ % এখানে দিয়েছি।সিফাত নামটাও ছন্দনাম।এছাড়াও তার ডায়রির সহায়তা আছে এ পোস্টে)আমি শুনে হতবাক ছিলাম।সিফাত কথা শেষেই উঠে পড়লো!!আমাকে বললো "তোমাকে জরুরী কিছু কথা বলতে হবে।আজকে নয় অবশ্য তুমি জোহর কই পড়ো??আমি মসজিদের নাম বলায় বললো মসজিদেই ও নাকি কথাটা বলা লাগবে।বৃষ্টি থেমে এতোক্ষণে কটকটে রোদ উঠেছে!! তখনার দিনের সিমবিয়ান ফোনে বড় ভাই ৩০ টি কল দিয়ে ফেলেছে!!বিরক্ত হলাম এবং ঘটনা শুনে দিনে দুপুরে এমনকি রোজার দিনেও ভয় পেলাম!!আজকে রাতে নিশ্চিত ভয় পাবো!! ভয় কাটাতে নিজেকে সান্ত্বনা দিলাম ছেলেটা মানুষিক সমস্যায় আছে।এদের কথা আমলে নিতে হয় নাহ!!!সেদিন আমার সাথে কথা বলেই তার সাবেক হোম টিউটর আমার বড় বোনের সাথে কথা বলতে গেল!!আমি দোকানে চলে গেলাম।রাতে সকালের কথা মনেই ছিলো নাহ আর।কিন্তু আমার বড়বোন সিফাত এর কিছু কথা বলে আমাকে আবারো ভয় মনে করিয়ে দিলো!!সিফাত আমার বোনের সাথে এতোকিছু শেয়ার করেনি।শুধু বলেছে "আপু জানেন আমার সাথে খুবই খারাপ একটা জ্বীন আছে!!এ জ্বীন এতোদিন আমাকে একটা নির্দিষ্ট সময়ে ডিস্টার্ব করতো!! আমার পাশে চক্কর দিতো!এখন আমার মধ্যেই প্রবেশ করেছে!!সবসময়ই আমার সাথে থাকছে।আপনাকে একটু সাবধান করতে এসেছি!! এ জ্বীন আমার সব প্রিয় মানুষেরই ক্ষতি করছে!!আপনি আমার প্রিয় মানুষ।আপনার ক্ষতি করতে দিচ্ছি নাহ আমি।তবে আমি না থাকলে কিন্তু সাবধানে থাকবেন!!আমার অনুপস্থিতিতে আপনার ক্ষতি করবেই!!সিফাত কেন অনুপস্থিত থাকবে অথবা কই যাবে সেটা আর বলেনি।রাতে ভয়েই ছিলাম সেদিন।ভালো ঘুম হয়নি।পরেরদিন দেরি করে উঠায় জোহরের নামাজ জামাতে পড়তে পারিনি।তাড়াতাড়ি মসজিদে গিয়ে দেখি সিফাত বসে আছে!!আমি তাকে কথা বলার সুযোগ না দিয়েই নামাজে দাড়িয়ে যাই!!নামাজের পুরোটা সময় আমার দিকে একদৃষ্টিতে চেয়েছিলো ছেলেটা!!আমি ইচ্ছে করেই নামাজ দীর্ঘ করেছি!!ফরজ, সুন্নাত, শেষে অতিরিক্ত নফল নামাজ পড়তে লাগলাম।আমি চাচ্ছিলাম সিফাত অন্যদিকে তাকায় অথবা অমনোযোগী হয়।এরই মধ্যে সিফাত মসজিদে অন্য পাশে যেতেই আমি মসজিদ হতে বেরিয়ে পড়ি!!আর তাকে সুযোগ দেয়া যাবে নাহ।তার কথা আমার ওপর যথেষ্টই প্রভাব ফেলেছে সেদিন।আর এগুলা শোনা যাবে না।মোবাইল বন্ধ করে রিক্সানিয়ে সোজা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এ চলে আসি।
" সিফাতকে উত্যক্তকারী জ্বীন তার মধ্যেই প্রবেশ করেছে!! তিনদিন আগে ঘটেছে ব্যপারটা।সেদিন জ্বীনটা সন্ধ্যা বেলায় এসেছিলে।এসে তার সাথে সাথে মসজিদ পর্যন্ত যায়।মসজিদে পুরোটা সময় তার সাথেই ছিলো।নামাজে সিফাত হাই তোলার পরেই তার মুখ দিয়ে গোটা জ্বীন ঢুকে যায়!!নামাজেই আতকে উঠে সিফাত।ভয়ে বাকি নামাজ আর পড়তেই পারেনি। সোজা বাসায় চলে এসেছে!! এ কথা কাউকে বলেও নি!!কিভাবে বলবে??এটা শুনার পর যদি বাসার মানুষ বাইরের মানুষদের মতোন তাকে পাগল ভাবা শুরু করে????তবে জ্বীনটা বাসায় আসার পরেই তার শরীর থেকে বেড়িয়ে যায়!!আবারো ঘুরপাক খেতে থাকে।আজকে সিফাত হঠাৎ জ্বীনের সাথে কথা বলে উঠলো!!জ্বীনকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো!!তুমি যদি আমার বদ আমলের কারনে এসেই থাকো তাহলে সেই নিয়ম অনুযায়ী আমার ইচ্ছে পূরন করতে তুমি বাধ্য!!জ্বীনটা কথা শুনে থেমে গেল!!সিফাত আরো যোগ করলো "আমি লাবন্য কে দেখতে চাই!অনেকদিন তাকে দেখি নাহ!!তুমি তাকে দেখিয়ে দাও!!জ্বীনটা থেমেই রইলো!!বেশকিছু সময় পরেই জ্বীনটা বাথরুম ঢুকে বোধহয় চলেই গেল!!খাওয়াদাওয়া করেই সিফাত শুয়ে পড়লো!!
পরেরদিন জোহর নামাজের বাসা থেকে বেরুতেই সিফাত লাবন্যের দেখা পেল!!এবং লাবন্য কে তার মনটাই ভেঙে চুরমার হয়ে গেল!!লাবন্যের সাথে একটি ছেলে হাতধরা অবস্থায় টেইলারে ঢুকলো!!কেউ বলে না দিলেও সিফাত নিশ্চিত হলো এ ছেলের জন্যই লাবন্য সিফাতের প্রস্তাবে রাজী হয়নি!!টেইলার এর পাশে দাড়িয়ে সিফাত শুনলো লাবন্য টেইলার এর একজনকে বলছে ঈদের তৃতীয়দিন তার এ ছেলের সাথে বিয়ে!!!
নামাজ না পড়ে বাসায় চলে এলো!!এসেই দিন দুপুরে অপ্রত্যাশিতভাবে জ্বীনের দেখা পেল!!জ্বীনকে দেখেই বলে উঠলো আমার শেষ একটা ইচ্ছে পূরন করো!!আমাকে মেরেই ফেল!!আত্মহত্যা করার সাহস আমার নেই!!!
চলবে....

নিজ ছেলের আত্মার ভয়ে তাবিজ ১৮

(ইচ্ছে পূরন)

"আজকে জোর সম্ভাবনা আছে চাঁদরাত হওয়ার।সবারই মুখে মুখে বলে বেড়াচ্ছে আজকে চাঁদ রাত হবেই। আজকে দিনটা সিফাতের অন্য রকম।একসময় এ চাঁদরাত কে ঘিরে কতোই নাহ পরিকল্পনা থাকতো!!কত্তো উত্তেজনায় কাটতো!!ইফতারির পরপরই বন্ধুদের বাসায় ডেকে এনে আতশবাজি করতো!!এরপরই এলাকায় ঘুরাঘুরি করা!রাতে বাসায় এসেই হাতে মেহেদী লাগানো!!এরপর সহজে ঘুম আর আসতো নাহ!!দীর্ঘ চেষ্টার পরে ঘুমিয়ে পড়েই সকাল সকাল নামাজ পড়তে যাওয়া। ফিরে এসে বন্ধুদের সাথে দেখা করা। সবার বাসায় যাওয়া।সেমাই কারটা ভালো হয়েছে প্রতিযোগিতা করা।বিকালে মেলায় যাওয়া অমূল্য এদিন গুলো কই চলে গেল!!সিফাত মনে আজকেও কঠিন উত্তেজনা কাজ করছে!!মনে এক ভয়াবহ কাজের জন্য প্রহর গুনছে!!
সেদিন জ্বীনটা তার আর্তনাদ শুনে চলে গিয়েছিলো ঠিকই!!রাগে দুঃখে বিধ্বস্ত সিফাত ঘুমিয়ে পড়েছিলো!!তখনই স্বপ্নে উপস্থিত হলো জ্বীনটা!!কালো বোরখার মতোন জামা পড়েছিল।মুখটা কালো কাপড়েই ঢাকা।তবে কাপড়ে ঢাকা হলেও চোখ দুটা জ্বলজ্বল করছিলো!!খুবই সুন্দর গলায় কথা বলতে লাগলো " তোমার চিন্তা নেই!!তোমার সমস্যার সমাধান অবশ্যই আছে।তুমি মেয়েটাকে পেতে চেয়েছিলে নাহ??এখন তো তার বিয়েই হয়ে যাচ্ছে?? তাছাড়া তোমার সাথে বিয়ে করতে ও রাজি নয়।তবু উপায় আছে তাকে কাছে পাবার!!একেবারে চিরতরে কাছে পাবার!!কিন্তু দুনিয়ার সম্পর্ক তো আর স্থায়ী নয়।একদিন মরতে হবে।এরচে মৃত্যুর পরের সময়টা ভালো নাহ??মৃত্যুর পরের জগতে কিন্তু শেষ বলে কিছুই নেই???এখন তুমিই বলো এ জগতে চাও নাকি মৃত্যুর পরের জগতে লাবন্যকে পেতে চাও??চিন্তা করে বলো!!এটা স্বপ্ন নয় বাস্তব। আমি সরাসরি কথা বলতে না পেরে এভাবেই তোমার সাথে যোগাযোগ করছি!!ভেবে দেখ তোমার মৃত্যুর পরেই কিন্তু অবধারিত সুখ রয়েছে।মৃত্যুর পরেই বরং লাবন্যকে পেয়ে যাবে।আজকে আমি যদি তোমার ইচ্ছে অনুযায়ী তোমাকে মেরে ফেলি তাহলে তুমি নির্দোষ হিসেবে জান্নাত এ চলে যাবে।একইভাবে যদি আমি লাবন্য কেও মেরে ফেলি তাহলে কি হবে???তোমাকে কিছুই করতে হবে নাহ।আজকে মাগরিব এর আগে আগে তুমি শুধু ছাদে যেও বাকি কাজ আমার।তুমি তো আর আত্মহত্যা করছো না??তোমাকে আমি মুক্ত করে দিবো। এ দুনিয়ার লাবন্য তোমার হতে পারবে নাহ এটা নিজের চোখেই তো দেখলা??এখন আমার বলা কাজটা করা ছাড়া তোমার কাছে আর অন্য উপায় নেই!!দ্রুত বলো!!তোমার মা আসছে তোমাকে উঠাতে!কি ঠিক করলা বলো??বলো???জ্বীনটা তার বুকে চড়ে বসেছে!!সেদিন একেবারে মাগরীব এর ১০ মিনিট আগে তার মা তাকে জাগিয়ে তুলেন।
সিফাত তার ছোটবেলার ছবির এ্যালবাম বের করে দেখতে লাগলো!!কতই না মধুর স্মৃতি চোখে সামনে ভাসছে!!আচ্ছা ও মারা গেলে কে বেশি কষ্ট পাবে বাবা নাহ মা??সিফাত হলফ করে বলতে পারে তার বাবাই সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাবেন।মা ও পাবে কষ্ট তবে বাবার চেয়ে কম।ছবি দেখা শেষ করে ডায়রিতে সবকিছু সুন্দর করে লিখে রাখলো সিফাত। তার ডায়রি লেখার স্বভাবটা বহু পুরোনো!!
বাবা মায়ের কথা চিন্তা করে খারাপ লাগছে খুবই।কিএকরার কিছুই নেই।লাবন্য অন্যকারোর হচ্ছে এটা মেনে নেয়া মুশকিল!! তাছাড়া বাবা মা ও একদিন মারা যাবেন।মারা গেলেই তো তাদের সাথে দেখা হবে!! জাস্ট আগে আর পরে।সবাই তো মারা যাবে!! আমাদের জন্মই তো হয়েছে মারা যাবার জন্য!!
সিফাত আজকে ঈদের পড়ার জামা গুলোর মধ্য থেকে একটি পড়বে বলে ঠিক করলো!!কিন্তু মা যখন জিগ্যেস করবেন আজকে কেন পড়লি??তখন কি উত্তর দিবে মাথায় আসছে নাহ!!মেবাইল হাতে নিয়ে ফোন দিলো কাজিন এবং ফ্রেন্ড Johny Ali কে!!একবারই ফোন দিলো কিন্তু রিসিভ হলো নাহ!!এরপর আরো ৪ জনে ফোন দিয়ে খবরা খবর নিলো।সবাই বিরক্তই হলো ফোন দেয়ার। আচ্ছা তারা কি জানে সিফাত এর নাম্বার থেকে এটাই লাস্ট কল???
আসর নামাজের সময় ঈদের পানজাবী পায়জামা পড়েই বেরুলো রুম থেকে!!তার মা অবাক হয়ে তাকালেন বটে কিন্তু কিছুই বলেন নি।নামাজ পড়তে চলে। পুরো এলাকায় চোখ বুলিয়ে গেল শেষবারের মতোন।আসরের নামাজের পর আর নামাজ পড়তে হয় না জেনেও ২ রাকাত করে ৮ রাকাত তওবার নামাজ মসজিদে পড়লো!!ধীরে সুস্থে বাসায় ফিরেই ছাদে গেল। তাদের ছাদ মাত্র তিন তলা।এখান থেকে পড়লে মারা যাবে?? মারা যাবার চান্স আছে তবে যদি কোন ভাবে মাথাটা আগে ফেলা যায়!!!মাথাটা ঝুঁকিয়ে মাপ দেখছিলো এমন সময়ই পাশের বাসার একজন (আমার বড় মামা)চেচিয়ে উঠলেন।সিফাত বকা দিলেন এমন ঝুকিপূর্ণ কাজ করার জন্য!!সিফাত নিচে নেমে এলো!!পুরো পরিবার ইফতারের জন্য ডাইনিং টেবিলে অপেক্ষা করছেন।সিফাত এসে যোগ দিলো!!আজানের ঠিক ৫ মিনিট আগেই সিফাত স্পষ্ট শুনতে পেল কেউ তাকে ছাদ থেকে ডাকছে!!কন্ঠটা পরিচিত!!সেদিন স্বপ্নের মধুর কন্ঠী জ্বীনটাই ডাকছে!!তার সময় হয়েছে!! দেরি করা ঠিক নয়!!দৌড়ে চলে গেল ছাদে!!সিফাত এর মা প্রচন্ড রাগ করলেন!!এসব কি ধরনের পাগলামি?? ছেলেটা বড্ড বেড়ে গেছে!!এবার থাকে নিজেই শিক্ষা দিবেন!!উনিও পিছু ছুটলেন!!কিন্তু সিফাতের সাথে দৌড়ে পারবেন??তবু পৌঁছে দেখলেন ভয়ংকর এক মহিলা তার আদরের বড় সন্তানের ঘাড় ধরে ছাদ থেকে ফেলে দিচ্ছেন!!! উনি চেচিয়ে বলে উঠলেন এইইই কে তুমি??আমার ছেলের সাথে এটা কি করছো??মহিলা একটুও পরোয়া না করে সিফাত কে সহ নিচে লাফিয়ে পড়লেন!!সিফাতের মা ছেলেরা পা ধরেও ধরে রাখতে পারেন নি!!আদরের সন্তান মুহুর্তেই নিচে গিয়ে পড়েছে!!হালকা পাতলা গরনের অধিকারী সিফাত এতো দ্রুত পড়ে গেল!!সিফাত এর পাপা বলে চিৎকার দিয়ে নিচে দেখেন মহিলা সিফাতের পড়ে থাকা দেহের সামনে দাড়িয়ে তার দিকে তাকিয়ে হাসছে!!কি ভয়ংকর মহিলার চেহারা!!সিফাতের মা জ্ঞান হারালেন!!!
চলবে...

নিজ ছেলের আত্মার ভয়ে তাবিজ ১৯

(একটি শোক সংবাদ)

"সেদিন প্রচন্ড ব্যস্ত ছিলাম।আজকে চাঁদরাত তাই আমাদের কাপড়ের দোকানে প্রচন্ড ভীড়।সংগত কারনেই সদ্য কেনা ফোনটা নিজের কাছে না রেখে দোকানের ড্রয়ারেই রাখা ছিলো।আমাদের দোকানের জন্য প্রতিদিনই বাসা থেকে ইফতার পাঠিয়ে দেয়া হতো।কিন্তু সেদিন বাসা থেকে ইফতারিই আসেনি!!বাসায় ফোন করলেও কেউই ধরছিলো না।তখনও দেশে মোবাইলের সাথে সমানে পাল্লা দিচ্ছে সরকারি ল্যান্ডফোন টি এন্ড টি!!আর ফ্লেক্সিলড এর জন্মই হয়নি তখন।মোবাইলে কথা বলাটা অনেক খরচান্ত বিষয় ছিলো।মোবাইলেই তখন বেশিরভাগ পোস্ট পেইড।আর আমার প্রি পেইডকার্ড ৩০০ নিচে রিচার্জ হতো না।উপায় না দেখে ড্রয়ারে রেখে দেয়া মোবাইল বের করলাম বড়বোন কে ফোন দিয়ে জিগ্যেস করবো ইফতার কেন পাঠিয়ে দেয়নি??আর ফোন কেন কেউ ধরছে নাহ??মোবাইলটা হাতে নিতেই অনেকগুলো মিসড কল!!প্রথমেই ছিলো সিফাত এর নাম্বার থেকে আসা মিসড কলো!!এরপর দেখি বড় বোনই ফোন দিয়েছিলো অনেকবার!!সিফাত কে ফোন দেয়ার কিছু নেই চিন্তা করেই বোনকে ফোন দিলাম!!আপু ধরেই কান্নাজড়িত কন্ঠে জানালেন " ওই আজকে আর বাসায় আসিস নাহ(ইফতারের কিছুক্ষণ পরেই বাসায় যেতাম জরুরি প্রয়োজন এ)সিফাত নাহ ছাদ থেকা পড়ে গেসে!!পড়ার সময় আমাদের গলির সকল তার ছিড়ে পড়সে এখন গলিতে কারেন্ট এর তার পড়ে একাকার অবস্থা!! আমাগো বাসায় কারেন্ট নাই!!ফোনের তার ও ছিড়ে গেসে!!আমারতো মনে হয় ছেলেটা পড়েনি ইচ্ছা করেই লাফ দিসে ছাদ থেকে!!আমি শুনেই স্তব্ধ হয়ে গেলাম!এসব কি বলছে আমার বোন??
সিফাত এর দৃশ্যটা দেখার পরেই ওর আম্মা চিৎকার দিয়ে অজ্ঞান হয়ে যায়!!সিফাত এর বাবা দৌড়ে বেরুনোর সময়ই কারেন্ট চলে যাওয়ায় অন্ধকারে নিজের পুরোনো আঘাত পাওয়া পায়েই ব্যথা পেয়ে মাটিতে বসে পড়েন!!পুরোপুরি অন্ধকারে ছেয়ে যায় সিফাতদের ফ্ল্যাট সহ পুরো বাড়ি!!মা অজ্ঞান বাবার পায়ের চোটের কারনে সিফাতের দেহ একাই পড়ে থাকে অন্ধকার গলিতেই!!
সিফাত ধপাস করে মাটিতে পড়ার পড়েই আমার চাচি ধপাস করে আওয়াজ পান!!চাচি কাজে ব্যস্ত ছিলেম।আওয়াজটা শুনেই মনে হয় তার ছোট ছেলে ছাদ থেকে পড়ে গেসে!!একটু আগে সে ছাদে গিয়েছে!!চাচি সবভুলে একেবারে নিচেই চলে এসে দেখেন এ ঘটনা!!হঠাৎ কারেন্ট চলে যাওয়া উনি এটাও খেয়াল করেন নি তার ছেলে খাবারের টেবিলেই বসে আছে!!
চাচি ঝড়ের গতিতেই অন্ধকার পেরিয়ে ৪ তলা হতে নেমে আসেন।এসেই উনি দেখতে পান একটা ছেলে কাতরাচ্ছে!!গোঙানি করছে!! প্রতিবারই ছেলেটা মাকে ডেকে চলছে!! চাচি হইভোল্টের তার উপেক্ষা করেই সিফাত এর কাছে উপস্থিত হন!!সিফাত চাচির দিকে তাকিয়ে ইশারায় বলছে পানি খাবার কথা!!তখনও মাগরিব এর আজান শুরু হয়নি!আহ ছেলেটা কি তাহলে রোজা রাখা অবস্থায় ছাদ থেকে পড়ে গেল???এমনিতেই এখন ইফতার এর সময়!!লোকজন খুবই কম রাস্তায়!!তবু কিছু লোকজন রাস্তায় জড়ো হয়ে সিফাত এবং চাচির কর্মকাণ্ড দেখছিলো!!চাচি কাঁদো কাঁদো গলায় বললেন"ভাই এগিয়ে আসেন ছেলেটা ছাদ থেকে মাত্রই পড়েছে!!তার বাবা কে ডাক দিতে হবে! ছেলেটাকে হাসপাতালে নেয়া লাগবে ছেলেটা এখনো বেঁচে আছে!আপনারা একটু সাহায্য করেন??আমি মহিলা মানুষ একা পারছি নাহ!!দাড়িয়ে থাকা লোকজন দ্রুতই সেখান হতে সরে গেল!!চাচি এসেই সিফাতের মাথাটাকে নিজের কোলে নিয়েছিলেন!!এবার সিফাত কে রেখে গেলেন সিফাতদের বাড়ির কলিংবেলটা টিপে কাউকে ডাকতে!!৮ সুইচের সবই টিপলেন কেউই সাড়া দিলো নাহ!!চাচির কি আর তখন মাথাতেই নেই যে সিফাত বৈদ্যুতিক তারের ওপর পড়ে যাওয়া য় গলির সকলেরই কারেন্ট নেই!!সিফাতের বাসার উল্টা পাশেই ছিলো গলির সবচেয়ে প্রবীন এবং সম্মানিত ব্যক্তির বাড়ি!!লোহার গেট এ নক করে চাচি সহায়তা চাইলেন!!বাড়ির প্রধান মুরুব্বি চরম বিরক্তিতে বেরিয়ে বললেন এখন কি চাও??চাচি সিফাতের কথা বলতেই মুরুব্বি ভয়ংকর রাগী গলায় বললেন পাগলটা ছাদ থেকা পড়েনি ও লাফ দিসে!! হালায় আস্তা একটা পাগল ছিলো!!এখন তুমিও পাগল হইসো??এ ছেলের গা জুড়েই এখন কারেন্ট বইছে তুমি জানো??এরে ধরলে তুমিও মরবা আমিও মরুম!!চাচি সিফাত এর গায়ে কোনই কারেন্ট নেই বললে মুরুব্বি বলেন এই পবিত্র সময় আত্মহত্যাকারীকে বাসায় আশ্রয় দিমু??অপেক্ষা করো ও এতিম না ওর বাবা মা নামবো সময় হলেই।এখান থেকা চিৎকার দিয়া ডাকবার পারো না??আইসো আমাগোরে জ্বালাইতে????চাচি দিকবিদিকশুন্য হয়ে পড়লেন!একবার ভাবলেন সিফাতদের ওপরই যাবেন আরেকবার ভাবলেন এখান থেকেই চেচিয়ে ডাকা উচিৎ!! একবার ভাবলেন তার ছোট ছেলেটাকে ডাক দিয়ে নিয়ে আসবেন!!নাকি আমাদের বাসায় এসে কারোর সহায়তা চাইবেন!!আজান দিয়ে দিলো!!চাচি অসহায় হয়ে সিফাত এর সামনেই ফিরে গেলেন!!সিফাত চাচিকে দেখে পানি চাইলো!!তার চেহারাটা আঁকাবাকা হয়ে গেসে!!চাচি ভাবলেন আহ ছেলেটা রোজা রাখা অবস্থায় ছাদ থেকে পড়ে গেল!! আজান শুনেই হয়তো পানিটা চাইছে!!চাচি রাস্তার কলে গেলেন তখনও একজন ভিন্নধর্মাবলম্বী লোক রাস্তার কলে গোসল করছিলেন!!তার কাছে ঘটনা বলার আগেই উনি বললেন ছেলেটা আত্মহত্যাই করেছে!!এটা নাকি উনি নিজ চোখেই দেখেছেন!!এবং উনি তার বালতি এবং মগ কোনটাই দিতে পারবেন নাহ!!এবং সিফাতে গায়ে পানি লাগানো এবং তাকে পানি পান করানো বিপদজনক হওয়ার উনি গোসল না করেই অনত্র চলে যান!!অগত্যা চাচিই সিফাতের দু হাত ধরে তাকে টানতে টানতে রাস্তায় কলে নিয়ে এসে পানি পান করান এবং মাথায় কলের ঠান্ডা পানি ঢেলে দেন!!এরই মধ্যে সিফাত এর বাবা ছোট ভাই হন্তদন্ত হয়ে নেমে আসেন!!সিফাতের বাবার আগের ভাঙা পা আবারো ভেঙেই যায়।এই অবস্থাতেই মাত্র ৮ বছরের ছোট ছেলেকে নিয়ে ২০ বছরের বড় সন্তানকে বাঁচাতে হসপিটালে যান!!সিফাত এমন একটা সময় আত্মহত্যা করে তখন কাউকেই সহজে পাওয়া যাবে নাহ!!!
এদেশের সবচেয়ে বড় হাসপাতালের একটা হলো ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হসপিটাল!! তারা এমন কোন রুগি নেই যে এখানে ভর্তি নেয় নাহ!! তারাই সিফাত পরীক্ষা নীরিক্ষা করে সাফ জানিয়ে দেয় সিফাতকে এখানে ভর্তি করা সম্ভব নয়।সিফাত মারা যাচ্ছে!! সম্ভবত তার ব্রেন মারাত্মক ভাবে আঘাত পেয়েছে!!শরীরে প্রায় সব হাড্ডিই ভেঙে চুরমার!!এবং সবচেয়ে বড় কথা সিফাত এর ইন্টারনাল ব্লিডিং হয়ে মাথা ফুলে টুইটম্বুর হয়ে গেছে!!ছেলেটা সন্ধ্যার দিকে লাফিয়ে পড়েছিলে অথচ তাকে নানান হাসপাতালে ঘুরে ঘুরে সোয়া ১০ টায় ভর্তি করাতে হয়েছে!! সোয়া ১১ টায় তার মৃত্যু নিশ্চিত করেন একজন মনোরোগ এর চিকিৎসক !! উনিই সিফাত এর মনোরোগ সারিয়ে তুলার দায়িত্ব নিয়েছিলেন!!সিফাত এর বাবা এবং মাকেও হসপিটাল এ ভর্তি করাতে হয়েছিলো!!সিফাতের মা এর ব্রেন স্ট্রোক হয়।আর বাবার কথা তো আগেই বলেছি!!
আমি ভয়াবহ সময় পার করছিলাম সিফাত এর এ ঘটনা শুনে!!একে তো ভয় ছিলো!!আত্মহত্যা কারীর আত্মা ৪০ দিন ঘুরে বেড়ায় বলে!!আর ছিলো জ্বীনের ঘটনাটি!! সিফাত মারা গেলে কি হবে??জ্বীনটা তো বহাল তবিয়তেই আছে??সিফাতের বলা কথা অনুযায়ী আমার বোনের ক্ষতি হবার কথা!!এদিকে সিফাত এর ব্যপারে একেবার একেক কথা শুনছি!!এই শুনি মারা গেল!!এই শুনি নাহ বেঁচে আছে কিন্তু কোমায় চলে গেছে ইত্যাদি!!সিফাত এর কোমায় যাবার খবরটা আমি শুনি বঙ্গবাজারে প্যান্ট কাটিং করাতে যেয়ে!!সাথে এটাও শুনি আজকে চাঁদরাত হচ্ছে নাহ!!
বাসায় আসি রাত দেড়টা বাজে!!রোজার দিন হওয়ায় এতোরাতেই মসজিদের মাইকে ঘোষনা হয় সিফাত এর মৃত্যুর সংবাদ!!অথচ আজকে এশার সময় দোয়া বলেছিলাম "আল্লাহ আমার জীবনের ১০ টা বছর না হয় সিফাত কে দিয়ে দিন😥😥😥
চলবে...

নিজ ছেলের আত্মার ভয়ে তাবিজ ২০

"নিজ ছেলের আত্মার ভয়ে তাবিজ"(১)

" পুরান ঢাকায় আত্মহত্যা করে কেউ মারা গেলে যে মারা যায় সেই বলতে গেলে বেঁচে যায়।আত্মহত্যাকারীর পরিবার পড়েন ভয়ানক বিপদে।পুরো এলাকায় এসে পড়েন আলোচনায়।পরিবারের একজনকে হারিয়ে বিধ্বস্ত প্রতিটা সদস্যদের পড়তে হয় বিপদে।এলাকায় ছড়িয়ে পরে নানান গুজব।পরিবারের সদস্যদের নানাভাবে প্রশ্নবাণে জর্জরিত করে ছাড়েন এলাকার মানুষজন।এ ছাড়া আইনি ঝামেলার পাশাপাশি পড়তে হয় ধর্মীয় সমস্যায়।আত্মহত্যাকারীর লাশের জানাযা পড়ানোর জন্য হুজুর অথবা মসজিদ পাওয়া যায় নাহ।তবে উৎসুক জনতার কিন্তু অভাব হয় না।এরা ঘুরে ঘুরে নানা তথ্য সংগ্রহ করেন এবং সেটিই নিজের মতোন করে বদলে দিয়ে প্রচার প্রচারণা করেন।
আমি আগেই বলেছি আমার তখন স্বাভাবিক ভাবে কেউ মারা গেলেও কয়েকদিনের ঘুম হারাম হয়ে যেত।যেমন ধরুন আমার কাছে খবর এলো আমাদের আশেপাশের কেউ অসুস্থ হয়ে হাসপাতাল এ গেসেন।অবস্থা খারাপ। হয়তো বাঁচবে নাহ।আমি অস্থির হয়ে পড়তাম!!অসুস্থ ব্যক্তির জন্য দোয়া করতে বসে যেতাম।তার হায়াত চাইতাম সুস্থতা চাইতাম।এগুলো অসুস্থ ব্যক্তির প্রতি ভালোবাসার জন্য কিন্ত করতাম নাহ।তখন মনে হতো যে লোকটা মারা গেসে রাতেই কবর ভেঙে ফিরে আসবে জম্বীর মতোন!!এবং একসময় আমার বাসা পর্যন্ত এসে পড়ার সম্ভাবনা আছে মনে করতাম।স্বাভাবিক মৃত্যুতেই আমার এমন অবস্থা হতো তাহলে চিন্তা করেন সিফাতের জ্বীনের ঘটনা তার মুখ থেকে শুনে এবং আত্মহত্যা ঘটনা আমার ওপর কেমন প্রভাব ফেলেছিলো?? আমার ঈদের আনন্দের বদলে মনে হচ্ছিল আত্মহত্যাই যেহেতু করেছে তাহলে কেন রোজার প্রথমদিকেই করলো নাহ?অত্যন্ত রোজার দিন গুলোতে আমি নিরাপদ থাকতে পারতাম।কারন রোজায় তো খারাপ কিছু চলাচল করতে পারে নাহ!!
আমি বাসায় ফিরে দেখি এখনো গলি থমথমে!! তবে বাইরে মানুষজন আছে। ওইযে বললাম নাহ "উৎসুক জনতা"। গলি হতে নামলাম।কারেন্ট সরবরাহ ঠিক হয়েছে। তবে সিফাতদের বাসার সরবরাহ চালু হয়নি।সিফাতদের অন্ধকার বাসা হতেই পুলিশের লোকজন নামলেন কিছু বইপত্র সহ নানান জিনিসপত্র নিয়ে।তাদের পেছনেই সিফাতদের দারওয়ান কে দেখতে পেলাম।সে চিন্তিত হয়ে পুলিশের পেছন পেছনে আসছে!!দারওয়ানের কল্পনাতেও নেই তার এনে দেয়া ১০০ টাকার বইয়ের জন্য এমন হয়েছে!! তাছাড়া সিফাত বইয়ের উৎস কাউকে বলেনি!!দারওয়ান উলটো মারাত্মক খুশি!!কারন এতোদিন বিনা কারনে ছুটি কাটিয়ে আসায় মালিক তাকে কিছুই বলবে নাহ!!এরচেয়ে বড় কথা সিফাত এর পড়ে যাওয়ার পড়েই ও বাসায় এসে পৌঁছে!! আগে আসলে বিপদে পড়তো!এমনিতেই এ বাড়ির দুজন কে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে এই কারনে যে তারা ছাদে উঠতেন!!পুলিশের সন্দেহ কেউ হয়তো ফেলে দিতে পারে।তবে ভিকটিমের ফ্যামিলি পক্ষ হতে এমন কিছু জানা যায়নি।তবু ধরে নিয়ে যেতে সমস্যা কি??দারওয়ান কেও চার্জ করা হচ্ছিল তবে রেহাই পায় নিজের কাছে থাকা টিকেট থাকায়!!
দারওয়ান যদি বুঝতে পারতো তার কাছ থেকে পাওয়া বইটা সম্পর্কে সিফাত তার ডাইরিতে লিখে গেছে তাহলে গাড়িতে উঠার সময় পুলিশের হাত থেকে পড়ে যাওয়া ডাইরিটা নিজেই উঠিয়ে দিতো নাহ!!
আমি " উৎসুক জনতা"ঠেলে গলিতে প্রবেশ করি!!সিফাত যেখানে পড়েছিলো ওই জায়গাটা পুলিশের লোক মার্ক করে গেসে ভাঙাচোরা ইটের সাহায্যে!! তখনও এদেশে বিদেশের মতোন "do not cross this line" টেপ দিয়ে চিহ্নিত করার বিষয়টি শুরু হয়নি।তখন চরম অবহেলিত এবং ভয়ংকর ভাবেই মৃতের নানান অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নিয়ে জায়গাটা পড়েই থাকতো!!!আমি ভয়ে ভয়ে জায়গাটা কোনভাবে পার করি।কেমনই জানি লাগে তখন!!শরীরটা ভার হয়ে যায়!মনে হয় সিফাতের আত্না এবং তাকে সদা অতিষ্ঠ কারী জ্বীন এখানে দাড়িয়ে আছে!!আমাকে না আবার ধরে ফেলে!!পার করে একটু দূরে গিয়ে দাড়িয়ে পড়ি!!মন থেকে তখনই ভয়টা দূর হয়ে এসে যায় হারানোর বেদনা!! ইশশ এ গলিটায় কত্তো স্মৃতি আমাদের!!কত খেলাধূলা করতাম!!বরফ পানি, টিলো এক্সপ্রেস খেলার বয়সে ধুমিয়ে খেলতাম।কুমির কুমির,থেকে পাউরুটি খেলার বয়স পার করে শেষের দিকে খেলেছি ক্রিকেট!! প্রতিটা খেলায় অত্যন্ত দক্ষ সিফাত ক্রিকেটও ছিলো দারুন!! তার বোলিং ছিলো আসল ক্রিকেট প্লেয়ারদের মতোন!তাছাড়া বোলিং করতে পছন্দ করতো অনেক!!এতোটাই পছন্দের ছিলো বোলিং যে কাউকে আউট করলেও ব্যাটিং না নিয়ে বোলিংই করতে থাকতো!!মাশাল্লাহ স্টেমিনা ছিলো তার মারাত্মক!! নিজেকে অতন্ত্য পছন্দের বোলার এ্যালেন ডোনাল্ড মনে করতো!!আচ্ছা সিফাত একদিনও কি ভেবেছিলো একদিন এই প্রিয় বোলিং করার জায়গায় পড়ে মারা যাবে??মনটা হুহু করে উঠলো!!!
বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে সেহরি খেলাম।কিছুক্ষণ বোনের সাথে কথা বললাম।আমার বোনকে দেখলাম সিফাত কে নিয়ে আপসেট।কিন্তু সেদিন সিফাত এর বলা কথাগুলো নিয়ে মোটেও চিন্তিত নয়।বরং সেগুলো পাগলের প্রলাপ বলেই উড়িয়ে দিলো!!অথচ আমি বোনকে নিয়ে চিন্তায় অস্থির!!
ফজরের নামাজের সময় আব্বার সাথে বের হলাম নিশ্চিত মনে। আব্বা আছেন তাই ভয় নেই!!আমাকে ভীষন অবাক করে দিয়ে আব্বা আরো বহুগুন ভয় ধরিয়ে দিলেন যখন মার্ক করা জায়গাটা পার করছি!!আব্বা বিরক্তি নিয়ে বলতে লাাগলেন"পোলাটা মইরা এহন শয়তান হইলো!!গলিটায় ভটকাইতে থাকবো এহন"(ছেলেটা মরে গিয়ে এখন শয়তান হলো।তার আত্মা এখন শয়তান রুপে ঘুরে বেড়াবে)হাত পা মসজিদে যাওয়া পর্যন্ত ঠান্ডাই ছিলো ভয়ে!!!
ফজরের নামাজেই আমাদের খেলার পুরোনো সাথীদের দেখা পেলাম!!তারা সবাই নাকি নামাজ পড়েই সিফাত এর লাশ দেখতে যাবে সিফাতদের দাদাবাড়ীতে!!অবশ্য দুয়েকজন যাবেই নাহ কারন তাদের পরিবার হতে কঠোরভাবে মানা করা হয়েছে আত্মহত্যারকারীর লাশ দেখার ব্যপারে!!আমিও দুটি কারনে লাশ না দেখতে যাওয়া দলেই যোগ দিলাম।প্রথম কারন ছিলো তখন কারোরই লাশ দেখতে পারতাম না।সাদা কাপড়ে জড়ানো চোখে সুরমা দেয়া বডিটা অনেকদিন চোখে ভাসতো!!সেকেন্ড কারন ছিলো সিফাতের প্রতি ভালোবাসা!! আমি চাইনা সিফাত এর মৃতমুখ আমার স্মৃতিতে থাকুক।আমার স্মৃতিতে তো জীবিত থাকবে ছেলেটা!!আহ কি ভয়াবহ কাজটাই নাহ করলো বেচারা!!
মসজিদ থেকে বেড়িয়েই জেনে গেলাম নানান তথ্য।
১)সিফাত এর মাকে জানানো হয়নি সিফাত এর মৃত্যুর কথা।ভদ্রমহিলা এখন কিছুটা সুস্থ তবে এই অবস্থায় তাকে এ খবরটি দিলে বিপদ বাড়বে বলে তাকে বলা হয়েছে ছেলেটা এখনো বেঁচে আছে তবে বেশ সিরিয়াস অবস্থা! এইটুকু শুনেও তার মা ছেলের কাছে ছুটে যেতে চেয়েছিলেন দেখে তাকে ডাবল ডোজের ঘুমের ঔষধ খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে
২)সিফাতদের দুজন ভাড়াটিয়া কে পুলিশ জিগ্যসাবাদ করতে নিয়ে গেলেও পরে সিফাত এর বাবার সাথে কথা বলে ছেড়ে দিয়েছেন। তাছাড়া সিফাত এর পরিবার ও জানিয়েছে ছেলেটা লাফিয়ে আত্মহত্যাই করেছে!
৩)তার জানাযা কই হবে এটা নিয়ে অনিশ্চয়তা দূর করে তার প্রভাবশালী চাচা এলাকার মসজিদেই কনফার্ম করেছেন।প্রথমে গড়িমসি করলেও চাচার আদেশ এ রাজি হয় মসজিদের ঈমাম!!পুরোপুরি রেডি করে আনা সিফাত এর বডি জাস্ট মসজিদে নিয়ে জানাযা পড়ানো অবস্থায় এখানে আনা হয়েছে।
৪)সিফাত এর বাবা উইলচেয়ারে করে নিজ বাসায় উপস্থিত হয়েছেন।লোকজনের সাথে এই অবস্থাতেই কথা বলেছেন।বলেছেন তার ছেলেটার মাথায় সমস্যা ছিলো।তাকে প্রায়ই বলতো ওর মাথায় নাকি কিছুই ঢুকে নাহ!!এ ছাড়া দেরিতে নেমে আসার কারন ব্যখা করেন কি ঘটেছিলো তখন এটাও ব্যখা করেন!!
পরেরদিন জানাযা পড়ার কথা থাকলেও ঘুম থেকে উঠে দেখি ২ টা বাজে!!ভয়ে বাকি রাতে একটুও ঘুমাতে পারিনি। দেরিতে ঘুম আসায় জানাযা মিস হলো!!দোকানে যাবার সময়ই খেয়াল করলাম চাঁরাতের উত্তেজনা আনন্দ মনে কিছুই নেই!!বরং মনে চাপা আতঙ্ক আজকেই তো রমজান শেষ!!না জানি কাল থেকে গলিতে কি ঘটে.....
চলবে....

নিজ ছেলের আত্মার ভয়ে তাবিজ ২১

"নিজ ছেলের আত্মার ভয়ে তাবিজ ২"

"নিরানন্দে শুরু হলো একটি ঈদের দিন।সারাবছর দেখা না হলেও শেষেরদিকে সিফাত আমাদের মাঝে উপস্থিত হতো।আমাদের মাঝে ডিস্টেন্স চলে এলেও আমার ভালো ক্লোজ ফ্রেন্ড ছিলো। আজকে তাকে ছাড়া ঈদ!!আগে মারা গেলেও বুঝতাম মরেছে দুদিন ও ঠিকমত হয়নি। ফজরের নামাজ শেষ করে আজকে বাসায় এসে পৌঁছাতে পেরেছি।একদিক থেকে ভালোই হলো রাতটা জেগেই কাটাতে হয়েছে!! সাধারণ রাত হলে ভয়ে অধমরা হতাম।সিফাত যেখানে পড়েছিলো সেখানটায় গলির সোসাইটির লোকজন আল্পনা করে ঢেকে ফেলেছেন।তবু এতো সহজে কি ভোলা যায় সবকিছু??? সিফাতদের দারওয়ান কে দেখলাম ভীতুর মতোন চোখে এদিক ওদিক তাকিয়ে আছে।লাল চোখ দেখে মনে হয় সারারাত ঘুমাতে পারেনি!!!আহ সিফাত কে দারওয়ান ও তাহলে ভালোবাসত??আচ্ছা জিগ্যেস করা যাক তার অনুভূতিটা কি???কৌতূহলে জিগ্যেস করলাম " মামা কি খবর কেমন আছেন??দারওয়ান বললো আর কেমন থাকুম??সারারাত আমারে ঘুমাতে দিলো নাহ!!খালি দরজা থাপড়ায় খালি দরজা থাপড়ায়!!একটুও ঘুমাতে পারিনি মামা!!আমি আর এহানে থাকুম না মামা!! আপনার মামা, মামি ফিরা আইলেই চইলা যামু গা!!এক নিশ্বাসে কথা গুলো বলললো লোকটা!!তাহলে কি খেলা শুরু হয়ে গেল নাকি??
সিফাত এর বাবা সোজা নিজেদের ফ্ল্যাটে চলে যান।উনাকে সবাই নানান প্রশ্নে যথেষ্টই বিরক্ত করে ফেলেছেন!!উনার কাছে এখনো এটাকে স্বপ্নই মনে হচ্ছে!! ভয়ংকর কিছু স্বপ্ন হয় নাহ??আচ্ছা স্বপ্ন না হলে হয়তো উনি সেদিনের ব্যথায় কাতর হয়ে অজ্ঞান হয়ে আছেন!!নয়তো কোমায় চলে গেছেন!!ডাক্তাররা প্রাণপণ চেষ্টা করছেন তাকে হুশে আনার জন্য!!কিন্তু উনার ঘুম অথবা কোমা ভাঙছে নাহ!!এরই রেশ ধরে এসব ভয়াবহ সময় দেখছেন।তার জ্ঞান ফিরলে হয়তো দেখবেন উনি হসপিটালের বেড এ শুয়ে আছেন তার সামনে সিফাত, তার মা চিন্তিত মুখে দাড়িয়ে আছে!!
সিফাতের আম্মাকে বিশেষ কারনে এবং সুস্থ হয়ে ওঠায় ঈদের দিন দুপুরেই ছেড়ে দেয়ার ব্যবস্থা হয়েছে। তাছাড়া বিশাল ক্লিনিক এ উনি ছাড়া রুগি নেই!!গতকালই তো পুরো ক্লিনিকে ৪ জন মানুষই উপস্থিত ছিলেন।এভাবে একজনে ধরে রাখা যায়না।তাছাড়া মহিলার পরিবারের এখন চরম দুঃসময়!!তাকে পরিবার এ ফিরিয়ে দিতেই হবে।এবং আজ হোক কাল হোক তাকে জানাতে হবে তার বড় ছেলে আত্মহত্যার লাফিয়ে পড়ে মারা গেছে।হাজার চেষ্টায় কাজ হয়নি!!ডাক্তার সিফাতের মায়ের কাছে এসে ঈদের শুভেচ্ছা দিয়ে কথা বলা শুরু করলেন!!উদ্দেশ্য হলো কথায় ফাঁকে কৌশলে তাকে জানিয়ে দিবেন দুঃসংবাদটা!! সিফাত এর আম্মা ডাক্তার কে চমকে দিয়ে বলতে লাগলেন "আমি জানি আপনি কি বলতে এসেছেন!! আপনি কি বলবেন??আমিই বলি " আমার ছেলে আত্মহত্যা করেনি!!তাকে হত্যা করা হয়েছে!! তাকে হত্যা করেছে আমারদের বাড়িতে দীর্ঘদিন ধরে ঘাপটি মেরে বসে থাকা একজন মহিলার কারিন জ্বীন!!কারিন জ্বীন কি জানেন??প্রতিটা মানুষেট সাথে একটি করে জ্বীনের জন্ম হয়।মানুষটা যদি কোন কারনে অস্বাভাবিকভাবে মারা যায় তাহলে আমরা ভাবি তার আত্না এসে পড়েছে!! আসলে সেটা মৃতের আত্মা নয়।মৃতের রুপ নিয়ে ফিরে এসে উত্যক্ত করে মজা পায় কারীন জ্বীন।আমাদের বাসায় একবার একটি মহিলার মার্ডার হয়।মহিলার কারিন জ্বীনটা আমাদের বাসাতেই আঁটকে পড়ে!!সিফাত এর ভুলভাল কাজের জন্যই জ্বীনটি মুক্ত হয়ে তাকে হত্যা করেছে!!একনাগাড়ে বলা কথা গুলো পাগলের মতোন বলেন সিফাত এর আম্মা!!আরো যোগ করেন"এখন ভাববেন আমি এসব কই জানলাম??আমাকে কে জানালো??আমাকে কালকেই আমার ছেলের জ্বীন এসে সব বলে গেছে!!!ডাক্তার ধরেই নিলেন সিফাত এর মায়ের স্ট্রোকটা ভয়াবহ আকার ধারন করলো!!মাথা সমস্যা দেখা দিয়েছে তার!!
আজকে ছাড়া পাবার কথা থাকলেও সিফাতের মা কে আরো কিছুদিন ভর্তি রাখতে হচ্ছে!! আজকে আবার সিফাতের বাবা এবং ছোটভাই হসপিটাল এ থাকবে।বাড়ির সকল ভাড়াটিয়া এরই মধ্যে দেশের বাড়িতে চলে গেসে।তবু কালকে পুরো বাড়িতে সিফাতের বাবা ছিলেন!!আজকে দারওয়ান পুরোপুরি একা!!আজকে অবশ্য না ঘুমিয়েই কাটিয়ে দিতে চায় দারওয়ান!! সিফাতের বাবা কে বিদায় দিয়েই বাড়ির মেইন গেট আটকে দেয় সে।মনকে স্বান্তনার বানি শুনায় কেউই মারা গেলে আর ফিরে আসতে পারে নাহ।কেয়ামত পর্যন্ত তার ঠিকানা হয় কবর!!কালকে যা হয়েছে সবই মনে ভুল!!সন্ধ্যা হতে পুরো রাত ১১ পর্যন্ত সবই ঠিক ছিলো!!১১ টা বাজতেই ঘুমে চোখে বুঁজে আসে দারওয়ান এর!!ঘুমিয়েই পড়ে!!হটাৎ ঘুম ভাঙলো তার কলিং বেল এর কর্কশ শব্দে!!এতোরাতে আবার কে এলো??একবার কলিংবেলটা বেজে থেমে আছে।দারওয়ান ভাবে হয়তো মনের ভুল!!ঘুমিয়ে পড়তে যাবে আবারো বেজে উঠে কলিংবেল!!তাহলে কি সিফাত এর বাবাই ফিরে এলো!!তবু দারওয়ান জিগ্যেস করে কে???চিরপরিচিত গলায় উত্তর আসে "আমি সিফাত "দারওয়ানের কলিজা মুখে উঠে আসে!!আরে এসব কি হচ্ছে এখানে???মৃত আবার ফিরে আসে নাকি?নাহ এসবই মনে কানে ধান্ধা!!গেট খুললেই দেখা যাবে কেউ নেই!!প্রচন্ড ভয়ের পরপরই মানুষ সাহসী হয়ে উঠে!!দারওয়ান একই নিয়মে গিয়ে দরজা খুলে ফেলে!!পুরো নিঝুম অন্ধকার!!একটা কুকুর পর্যন্ত নেই!!নিশ্চিত মনে একটা সিগারেট ধরিয়ে টানতে থাকে!!আসলে ভয়ের কারনে এমন হয়েছে!! গেট আটকে সিগারেট শেষ করার অপেক্ষায় থাকে!!এবার গেট থাপড়ানো এবং কলিংবেলের শব্দ একই সাথে শুরু হয়!!এতোজোরে গেটটা থাপড়াচ্ছে কেউ যে মনে হচ্ছে গেটই ভেঙে ফেলবে!!দারওয়ান পাত্তা না দিয়ে বসেই থাকে!!এসবই মনের ধান্দা!! দারওয়ানকে পাথরের মতোন জমিয়ে দিতেই যেন সিড়ি বেয়ে নেমে আসে সিফাত!!দারওয়ান কে উপেক্ষা না করেই নিজেই গেট খুলে ফেলে!!আরো ভয়ংকর ব্যপার হলো গেটের বাইরেও সিফাত!!মানে দুজনই সিফাত??বাইরের সিফাত কে বাসায় প্রবেশ করিয়ে গেট খোলা রেখেই দুজন দারওয়ানের দিকে দেখতে দেখতে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে যায়!!আরো ভয়ে পাইয়ে দিতেই যেন তারা দুজন ছাদের রেলিং এ পা ঝুলিয়ে বসে থেকে দারওয়ান কে উদ্দেশ্য করেই যেন ফুসুরফাসুর করতে থাকে!!একপর্যায়ে একজন আরেকজন কে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়!!পড়ে যাওয়া সিফাত দারওয়ান এর পায়ের সামনে এসে পড়ে কাতরাতে থাকে আর বলতে থাকে "আপনার জন্য আমার এ অবস্থা হলো!!দারওয়ান ঘটনার পরেই বাড়ির মেইন গেট খোলা রেখেই বিদায় নেয়!!ও জানে এখানে থাকলে এ দৃশ্য আজীবন দেখতে হবে!!কারন বাড়িটায় সিফাত এর আত্মহত্যা করা আত্মাটা দখল করে ফেলেছে!! এখন টানা ৪০ দিনই নিত্য নতুন ঘটনা ঘটবে!!কে জানে তাকে ঘাড় মটকে মেরে ও ফেলতে পারে!!এরচে নিজেই মরে যাওয়া ভালো নয়???বাড়িটি বেওয়ারিশ অবস্থায় পড়ে থাকে!!!
ঈদের দিন আপুর ফোনে কল দেয় লাবন্য!নানান কথার ফাকে জানায় তার দুদিন পরেই বিয়ে!!ঘরোয়া এ বিয়েতে আমার বোনকে অবশ্যই উপস্থিত থাকতে হবে!!আপু উত্তরে কিছু বলা আগেই লাবন্য বলে " আচ্ছা শুনলাম তোমাদের গলিতে নাকি কোন পিচ্চি ছেলে সুইসাইড করেছে??আপু পুরো ঘটনা বলার পরে লাবন্য তাচ্ছিল্যের সাথে বলে উঠে "ভালো হইসে পাগলটা মরসে!!আমিতো ভয়ে ছিলাম আমার বিয়েতে না উপস্থিত হয়ে পাগলামি শুরু করে দেয়!!
ঈদের দিন আড্ডা শেষে বাসায় ফিরে সুনসান গলি দেখে থমকে যাই!!একা গলি পার করার মতোন সাহস হচ্ছে নাহ!!দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করেও কারোরই দেখা না পাওয়ায় আল্লাহর নামে হাটা দিলাম!মনে মনে দোয়া ইউনুস পড়ছি!!একেবারে সিফাত এর পড়ে যাওয়া জায়গায় এসেই চলে যায় কারেন্ট!!!এমন ভয়ংকর কাকতালীয় ঘটনার জন্য মোটেই প্রস্তুত ছিলাম না!!তিনদিন টানা জ্বরে ভুগে একটাই লাভ হয়েছিল আম্মা আমার সাথেই ঘুমিয়েছেন!!আমি নির্ভয়ে ১০২ জ্বর নিয়ে ঘুমিয়েছি!!
চলবে...

নিজ ছেলের আত্মার ভয়ে তাবিজ ২২

"নিজ ছেলের আত্মার ভয়ে তাবিজ ৩"

সিফাতদের বাসায় সিফাতের বাবা এবং ছোটভাই ফিরে এলেন। সিফাতের আম্মাকে রিলিজ দেয়ার আগমুহূর্তে ডাক্তাররা সিদ্ধান্ত বদলেছেন।তাদের ধারনা স্ট্রোক পরবর্তী জটিলতায় ভুগছেন সিফাতের আম্মা।উনি তার মৃত ছেলের সাথে কথা বলেন এবং দেখতে পান।এরই জের ধরে আবোলতাবোল বকছেন!!কিছুদিনের চিকিৎসায় উনাকে সুস্থ করে দেয়া যাবে বলে চিকিৎসকরা আশাবাদী।
সিফাতের বাবা ভীষন অবাক হন বাড়ি সদর দরজা খোলা রেখে দারওয়ান পালিয়ে গেছে!!উনি দ্রুত নিজেদের ফ্ল্যাটে চলে যান এটা দেখার জন্য কিছু চুরি করে পালিয়েছে কি নাহ??নিজের ফ্ল্যাটে সবকিছুই ঠিকঠাক পেলেও শুধু সিফাত এর রুমের দরজা খোলা দেখতে পান।রুমের জানালা গুলো ও খোলা!! সবচেয়ে ভয়ংকর ব্যপারটা হলো টয়লেট এর দরজা খোলা!!এবং ভেন্টিলেটর এর নিচেই সিফাত এর ঘরের একটি মোড়া রাখা!! মনে হচ্ছে কেউ এটায় দাড়িয়ে ভেন্টিলেটর দিয়ে বাইরে তাকিয়ে ছিলো!!সিফাতই এ কাজটি করতো!!!তার বাবা এই প্রথম ঘাবড়ে যান!!তাহলে কি আত্মহত্যাকারীর আত্মা ফিরে আসে??এসব চিন্তার মধ্যেই তার ছোট পুত্রের ডাক ভেসে আসে!!আব্বা!!এদিকে আসো দেখে যাও!!উনি দ্রুতই ছেলের কাছে ছুটে যান না জানি কি হলো ভেবে!!সিফাত এর ঘটনার পরেই পুলিশ ছাদের গেট বিশাল তালা ঝুলিয়ে দিয়ে যায়।নানানরকম ঝামেলায় এ গেটটা খোলার ব্যবস্থা হয়নি!!এখন তো তালাই ভেঙে গেল!!দরজা পুরোপুরি খোলা!!ছোট ছেলের বলে আমি স্পষ্ট দেখলাম আমরা আসার পরপরই মনে হলো ছাদের সিড়ি ঘরে কেউ একজন আছে!!তোমাকে বললে যদি টের পেয়ে যায়??তাই সাহস করে এগিয়ে গেলাম ওটা কে দেখার জন্য!!গিয়ে দেখি....সিফাত এর বাবা ব্যকুল হয়ে জিগ্যেস করলেন "কি দেখলে??কে ছিলো এখানে??কথা বন্ধ করলে কেন??সিহাদ জবাবে বললো " গিয়ে দেখি ভাইয়া দাড়িয়ে রেলিং এ"!!!আমি তোমাকে ডাকতেই যেন হাওয়ায় মিশে গেল!!
সারাদিনে সিহাদের কাছে নানান তথ্য পেলেন সিফাতের বাবা!!লাজুক ছেলেটা এতো কিছু জানতো!এতোটা সাহসী ছেলেটা?? সিহাদ একে ঘটনা বলতে লাগলো!!
আমি ভাইয়াকে সবসময়ই লুকিয়ে অনুসরণ করতাম।বিশেষ করে যখন ভাইয়ার সাথে জ্বীনের ঘটনা ঘটতে লাগলো!!আমি মহিলটাকে একদিন দেখেছি!!পঁচাগলা কুকুরের মতোন চেহারার মহিলা ভাইয়ার বিছানার চার পাশে ঘুরতো!!এই মহিলাকে আমি সেদিন আম্মার বেড এর পাশেও দেখেছি!!তবে মহিলা আমার উপস্থিতি টের পেয়ে হাওয়ায় ভেসে জানালা দিয়ে পালিয়ে যায়।ভাইয়াকে তোমরা পাগল ভাবতে পারো!!কিন্তু আমি জানি ভাইয়া যা যা বলেছে সবই সত্য!!আমার মনে হয় এরা আমাদের পরিবার এর সবাইকে মেরে ফেলবে!!আমাদের বাঁচার সুযোগ নাই!!ভয়ংকর শক্তিশালী এ মহিলাই ভাইয়াকে ফেলে দিয়েছে! আম্মা নিজের চোখে ঘটনাটা দেখেছেন!!আম্মাকে জিগ্যেস করে আমি কনফার্ম হয়েছি এটাই সেই মহিলা কি নাহ যেটা ভাইয়ার বিছানার পাশে ঘুরতে থাকতে দেখেছিলাম।আম্মার দেয়া বর্ননা অনুযায়ী ওটা সেই মহিলা!!আব্বা চলো আমরা হসপিটাল এ ফিরে যাই!!এখানে আজকে আমরা থাকলে আমাদের কে মেরে ফেলবে!!তুমি কি খেয়াল করেছো??আমাদের সকল দরজার লকই নষ্ট হয়ে গেসে???
সিফাতের বাবা ভীষন অবাক হয়ে গেলেন যখন দেখলেন মেইন গেট ছাড়া সব দরজার লকই বিকল!!অর্থাৎ লক হচ্ছে নাহ।মানে দরজা লাগানো যাবে না কোনভাবেই!
নিজের স্বামী এবং ছোট সন্তানকে এতো দ্রুত ফিরে আসতে দেখেও অবাক হন নি সিফাত এর আম্মা।তাদের দেখে তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললেন "কিরে তোরা ভয়ে পালিয়ে এসেছিস??ভয়ের কিছু নেই।ও মহিলা আমাদের কিছুই করতে পারবে না।কারন আমাদের সিফাত আমাদের সাথেই থাকবে!!আমাকে বাসায় নিয়ে চল!!সিফাত আমাদের সাথে বাসায় ফিরলে ও মহিলাকে শায়েস্তা করে বের করে দিবে!!এরপর আমরা একসাথেই থাকবো!!!
সিফাত এর বাবা ছেলেটা মারা যাওয়ায় এতোটা সমস্যায় পড়েন এখন যে সমস্যায় পড়েছেন!!এসব কি শুনছেন উনি??তার বাসায় আত্মার ছড়াছড়ি?? এসবই যে পুত্র, স্ত্রীর পাগলামি এটা কিভাবে বলবেন??আজকে বাসায় ফিরে নিজেই কতকিছু দেখলেন!!এর থেকে পরিত্রাণ পেতেই হবে!!উনি আর কাউকেই হারাতে চান নাহ।নিজের জীবন দিয়ে হলেও বেঁচে থাকা পুত্র এবং অসুস্থ স্ত্রী কে রক্ষা করবেনই!!হসপিটালের ফোন হতেই ফোন দিলেন " হ্যালো হায়দার খান কি বাসায় আছে??ওপাশ থেকে একজন ভদ্রমহিলা জানালেন আজকেই উনি ঢাকার উদ্দেশ্য রাওনা দিয়েছেন!! কার বাসায় গিয়েছেন এটা বলে যাননি তবে কাকে যেন জবান দিয়েছিলেন চাঁদরাতে তাদের বাসায় যাবেন তাদেরই বাসায় গিয়েছেন সম্ভবত!!!
হায়দার খান এবং সিফাতের বাবা আবারো বাসায় প্রবেশ করলেন!!হায়দার খান ঢুকেই জানিয়ে দিলেন এ বাসায় সত্যি সত্যি জ্বীনের আগমন হয়েছে!! এমনকি তারা পুরো বাসাই দখলে নিয়ে ফেলেছে!এ বাসা এখন আর নিরাপদ নয়!!
সিফাতদের দাদি বাড়িতেই সিফাতদের বাসা বন্ধের তাবিজ লিখেতে বসে যান হায়দার খান!!উনি এসে সিফাত এর মৃত্যুর সংবাদ শুনে অবাক হওয়ার ও সময় পাননি!!এসেই ছাদে দেখলেন সিফাত রুপি একটি জ্বীন দাড়িয়ে আছে ছাদে!!চোখের পলকে সেটা রেলিং এ দাড়িয়ে যাওয়ায় বুঝতে পারেন এটি জ্বীন।তাছাড়া গায়ে এক রত্তি কাপড় নেই!!এখন বাসাটি বন্ধ করা ছাড়া উপায় নেই!!গুনে গুনে তাবিজ বানাতে লাগলেন।সিফাতের পুরো পরিবার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে!!ঘন্টা খানেকই তাবিজ লেখা সম্পন্ন হয়ে যায়।হায়দার খান ঘোষনা করেন "তাবিজ গুলো আজান চলাকালীন সময়ে নির্দিষ্ট জায়গায় লাগিয়ে আসতে হবে।অর্থাৎ আজান চলাকালীন সময়ে সকল কাজ সম্পন্ন করা লাগবে।বাসাটা কেবল আজানের সময়ে নিরাপদ!! তবে আজান শেষ হলেও সমস্যা নেই!!হায়দার খান এবং তার সহকারী পালাক্রমে আজান দিতেই থাকবেন!!এভাবেই পুরো বাড়িতে তাবিজ লাগিয়ে ফেলা হবে!!বাসাটি তখনই নিরাপদ হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ!! সিফাত এর বাবা,সিহাদের নেতৃত্বে সিফাত চাচা,কাজিন রা সহ ১০/১২ জনের দল এগিয়ে যেতে থাকে আসরের আজানের আগে আগেই!!হায়দার খানের নির্দেশ অনুযায়ী আজান শুরু হতে বাসায় দ্রুত প্রবেশ করেন!!একে একে তাবিজ লাগাতে থাকেন সবাই!!আজান চলাকালীন মাত্র দুটো তাবিজই লাগাতে সক্ষম হন তারা।এরপরই হায়দার খান সুমধুর কন্ঠে আজান দিয়ে কাজ করাতে থাকেন। সিফাতদের ফ্ল্যাটের মেইন গেট এ।সিফাত এর রুমের গেট এ!!এমনকি সিফাত এর টয়লেট এর গেট এর বাইরেও লাগানো হয় তাবিজ!!এবং সহকারী কে আজান দিতে বলে হায়দার খান জানান এ রুম এবং টয়লেট আর ব্যবহার করা উচিৎ হবে নাহ।রুমে আসা যাবে দোয়া দরুদ পড়া যাবে তবে রাত কাটানো ঠিক হবে না।আর টয়লেট ব্যবহারই করা যাবে নাহ।একে একে তাবিজ লাগিয়ে একেবারে মেইন গেট এ চলে আসেন সবাই!!সিফাতদের বাসার মেইন গেট দুটা!!একটায় প্রবেশ করে একটু খোলা জায়গা সেখানে হোন্ডা, কুরবানীর সময় গরু রাখার জন্য তৈরি করা।এরপরই আরেকটি গেট!!অর্থাৎ দু গেট এর মাঝখানে ফাঁকা জায়গা আছে!! সেখানে পৌঁছেই সবাই পাথরের মতোন জমে যান!!সিফাতের আম্মা দাড়িয়ে আছেন!! ভীষণ রাগে কটমট করছেন!সিফাত এর বাবা এগিয়ে গেলে তাকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়ে বলতে থাকেন "তুমি সিফাত কে বাসা থেকে বেরই করে দিলা??তাকে আর আসতে দিবা নাহ??তার প্রবেশপথ চিরদিনের জন্য বন্ধ করে দিলা???তুমি আমার একটা অনুরোধ শুধু রাখো!!এ জীবনে আর কিছুই চাইবো না আমি!!সিফাত এর বাবা কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন কি তোমার অনুরোধ????
সিফাত এর আম্মা বলে উঠেন " এই দরজার ওপর তাবিজ লাগিও না।ছেলেটা আমাদের সাথে দেখা করতে আসবে!যেভাবেই হোক আসবে!!যে রুপেই হোক আসবে!! তাকে আমরা রাস্তায় দাড় করিয়ে রাখবো??এ ফাঁকা জায়গায় যেন এসে দাড়াতে পারে এই ব্যবস্থাটুকু করো???হায়দার হুজুর একটি তাবিজ নিজের কাছে রেখে ভেতরের দরজায় অর্থাৎ সিফাতের মায়ের অনুরোধ অনুযায়ী লাগিয়ে দিয়ে আজান শেষ করেন!!পুরো এলাকার মানুষ অবাক হয়ে দেখে একটি পরিবার তাদের নিজ সন্তানের আত্না হতে বাঁচার জন্য তাবিজ লাগিয়ে দিচ্ছে!!!!!
😥😥😥😥😥😥😥😥😥😥😥😥😥😥😥😥😥😥
সমাপ্ত!!!

লেখাঃ Mohammad Ali Johny